Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: মিথ্যে, মিথ্যের পর আরও মিথ্যে, কেবল মিথ্যেই বলে যাচ্ছেন দেশের...

চতুর্থ স্তম্ভ: মিথ্যে, মিথ্যের পর আরও মিথ্যে, কেবল মিথ্যেই বলে যাচ্ছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী

Follow Us :

আমরা বলতে বলতে ক্লান্ত, আপনারাও শুনতে শুনতে ক্লান্ত, সপ্তাহে ৫ দিনের চতুর্থ স্তম্ভে অন্তত একটা দিন তো বরাদ্দই থাকে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যে ভাষণের জন্য। বিভিন্ন ধরণের মিথ্যে, পুকুর থেকে কুমির ধরা থেকে শুরু করে তেনার একলার এণ্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স পড়াশুনো, ১৫ লক্ষ টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে থেকে জি মেইল আসার আগে ছবি অ্যাট্যাচ করে পাঠানো, সেই স্টেশন যা ছিলই না সেখানে চা বিক্রি থেকে শুরু করে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেওয়ার গুল গল্প। উনিও থামবেন না, আমরাই বা তাহলে থামি কী করে, তো আজ সেরকমই একটা মিথ্যের গল্প। আমি আপনি তো আর অতীত বা বর্তমান বা ভবিষ্যতে নেই, আমরা আছি অমৃতকালে, আজাদী কা অমৃতমহোৎসব চলছে, প্লিজ জিজ্ঞেস করবেন না যে কেন স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বাসঘাতকতা করা আরএসএস – বিজেপি হঠাৎ আজাদী কা জস্ন মনানে কে লিয়ে ইতনা বেকরার কিঁউ?

সে কথায় পরে আসছি, কিন্তু বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে, তার এক জায়গায় দেখলাম আমাদের নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদিজী বলেছেন, আজ যে বীজ পুঁতে দিলাম, তার ফল ভোগ করবেন আরও ২০ বছর পরে, মানে ২০৪২ এ। কোন বীজ, কোন ফল এসব নিয়ে আলোচনা করার কোনও মানেই হয় না, কারণ উনি যখনই প্রতিশ্রুতি দেন, তখনই তা পূরণ হবে আরও ৫/৭/৯ কি ২০ বছর পরে এরকমই বলে থাকেন। ওনার ধারণা, ততদিনে গঙ্গা, যমুনা, কাবেরী, নর্মদা, ব্রহ্মপুত্র দিয়ে কিউসেক কিউসেক জল বয়ে যাবে, মানুষের মেমোরি সেই জলেই ভেসে যাবে। সিম্পল। অতএব যা খুশি প্রতিশ্রুতি দাও, কদিন পরে দেশের সব কল থেকে জল নয় গায় কা দুধ নিকলে গা, বলে দিতেই পারেন, মিত্রোঁ, ইসকা কাম চালু হো গয়া, ব্যস ১৫ সাল বাদ, আপনার বাচ্চা, খিদে পেলেই কলের কাছে যাবে, কল খুলবে, কপিলা গাভীর দুধ ঝরে ঝরে পড়বে, কেবল বাচ্চাকে বলে দেবেন, দুধ খেয়ে কলটা বন্ধ করতে, আমার বাচ্চা বেলায় আমার মা আমাকে শিখিয়েছিল। বলতেই পারেন এসব কথা, কারণ উনি জানেন ১৫ বছর পর এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না, কারণ প্রশ্নকর্তা খাম পায়, আম পায়, নাম পায়, সে তখনও প্রশ্ন করবে, রাহুল গান্ধী, প্লিজ অ্যানসার, দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো।

২০২২ এর মধ্যে সবকা পক্কা ঘর হোগা, কেবল কী ঘর? ঘরে নল থাকবে, নলে জল থাকবে, এলইডি বাল্ব থাকবে, ডাইনিং টেবলে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানী থাকবে এই কথাটাই যা বলেন নি। নাটকীয় সুরে, গলা কাঁপিয়ে বলেছেন ঐ কংগ্রেসের মত প্রতিশ্রুতি নয়, কেবল চারটে দেওয়াল নয়, খাওয়া দাওয়ার পরে পাকা শৌচালয়ও থাকবে সেই ঘরে, কতদিনের মধ্যে? ২০২২ এর মধ্যে, কেন ভাই ২০২২ কেন? কারণ আজাদী কা ৭৫ সাল পুরা হোগা, আমরা অমৃতকালে ঢুকে পড়বো, দেশের প্রত্যেক গৃহহীন মানুষ ঘর পাবে। এখন গজনী সিনেমার আমীর খান, তফাত হল এখানে শর্ট টার্ম, লং টার্ম দুটো মেমোরিই লস হয়ে গিয়েছে, মিথ্যে বলেছিলেন, ভুলে মেরে দিয়েছেন, আজ আবার আরেকটা বীজ পোঁতার কথা বলছেন, সে গাছ নাকি ২০৪২ এ ফল দেবে। তো আসুন একটু বাস্তব ছবির দিকে নজর রাখা যাক। আমাদের দেশে গৃহহীনদের সমস্যা কোন পর্যায়, আলোচনা করতে গিয়েই থমকে যাবেন, আমার দেশের সরকার কোন জঙ্গলের তলায়, কোন পাহাড় খুঁড়লে কত তামা, লোহা বক্সাইট পাওয়া যাবে তার হিসেব করে রেখেছে, কোন জাহাজ বন্দর, কোন উড়োজাহাজ বন্দর বেচে দিলে, কাকে বেচা হবে, কত টাকায় বেচা হবে, তা আগাম ঠিক করে রেখেছে। কোন প্রান্তে কত টাকার ফ্লাই ওভার হবে, কত টাকার মূর্তি হবে, কত টাকার মন্দির হবে তা ঠিক করে ফেলেছে, কিন্তু দেশের গৃহহীনদের সংখ্যা ঠিক কত? মানে রাস্তা, ফুটপাথ, ডাস্টবিনের পাশে, রাস্তার ধারে রাখা পাইপের ভেতরে যে মানুষজন আছেন, তাদের সংখ্যা কত? গ্রামেও যারা খোলা আকাশের নীচেই শুতে বাধ্য হয়, তাদেরই বা সংখ্যা কত, তা জানার কোনও চেষ্টাই করেনি৷

গৃহহীন মানুষদের ঘর দিতে গেলে প্রথমে তো জানতে হবে, কত মানুষের মাথার তলায় ছাদ নেই, না সরকার বাহাদুর সেরকম কোনও হিসেব করেনি, তাহলে? তাহলে ভরসা বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত কিছু সার্ভে, তো সেখান থেকে খুব কনজারভেটিভ, খুব কম করে ধরলেও যে সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে তা হল সাড়ে চার কোটি পরিবারের মাথায় ছাদ নেই, তাদের বাড়ি নেই। অর্থাৎ পরিবারের সংখ্যা ৫ জন ধরলে, দেশের ২২/২৩ কোটি মানুষের ঘর নেই, এটা আজকের হিসেব, প্রধানমন্ত্রীর কথা মতো এদের ঘর, কল, জল, শৌচালয় সব পাওয়ার কথা এই অগাস্ট মাসে, যেদিন স্বাধীনতা ৭৫ বয়সে পা দেবে। এবং মাথায় রাখুন এই সংখ্যাটা হল কেবল তাদের যাদের ঘর বলতে কিছুই নেই। এরপর হল জুগগি ঝোপড়ি, কোনওভাবে মাথা গুঁজে বেঁচে থাকা, কী ভাবে? কেন অস্কার পাওয়া ছবি স্লাম ডগ মিলিওনিয়ার দেখে নিন, চলে যান মানিকতলা, ঢাকুরিয়া খালপাড় বস্তিতে। সবকা ঘর, ঘর মে কল, কল মে জল, এসব বাওয়ালি দিতে গেলে একটা মার ও নিচে পড়বে না।

এই মূহুর্তে দেশের ৪৫ কোটি মানুষের কাছে পানীয় জল পৌঁছায়নি, জল বলে যেটা খান, সেটা কোনও সাহেবকে নয়, মোদিজীকেই খাওয়ালে দিন দশেক হাসপাতালেই থাকতে হবে। কতটা নির্লজ্জ হলে এরকম মিথ্যে বলে দেওয়া যায়, এবং বলার সময়ে চোখে মুখে মিথ্যে বলার চিহ্ন মাত্র নেই, একেই মনোবিদরা প্যাথোলজিকাল লায়ার বলে। পার্থ চট্টোপাধায় চুরি করেছেন? চটি ছুঁড়বেন, ইচ্ছে হলে বেশক ছুঁড়ুন, কিন্তু এখানে কী ছুঁড়বেন? সেটাও তো ঠিক করতে হবে। দেশের প্রতি সাতজনের একজন রাতে যখন শুতে যান, তখন মাথার ওপর থাকে খোলা আকাশ, বৃষ্টি পড়লে, জন্তু জানোয়ারের মত মাথা বাঁচাতে অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে। দেশের প্রতি ৬ জনের একজনের বাড়িতে স্যানেটারি টয়লেট, শৌচালয় নেই। মহিলারা ভোর তিনট ওঠেন, অন্ধকার লজ্জা ঢাকে, কৃষ্ণ নয়। দেশের প্রতি ৩ জনের একজন পরিশ্রুত পানীয় জল পায় না, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, আমলা দামলা, বিচারক, সাংবাদিকদের টেবিলে মিনারেল ওয়াটার থাকে। শুনিনি কোনও বিচারককে এনিয়ে আগ বাড়িয়ে কোনও কথা বলতে। দেশ স্বাধীন, আমার একটা ভোট, আপনারও একটা। কেউ ১৫০০ টাকা দামের মিনারেল ওয়াটার খাবে, কেউ নোংরা নর্দমার জল, এ কোথাকার ন্যায়? কোনও ঘোষ, গাঙ্গুলি, ভট্টাচার্য কালো সামলা পরে দেশের নেতাদের বিচারের কাঠগড়ায় এনে তো দাঁড় করানোর কথা বলেন না, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি? কতজনের? ১০/১৫/৫০ হাজার, ২ লক্ষ, ৬ লক্ষ? ২০ কোটি মানুষের ঘর নেই, আম্বানির আন্টিলায় প্রত্যেকটা কুকুরের আলাদা ঘর আছে, ২০ হাজার ৬৭২ কোটি টাকায় তৈরি সেই বাড়ি,হ্যাঁ, ২০৬৭২ কোটি টাকায় তৈরি ২৭ তলা বাড়ি, যাতে গাড়ি রাখার গ্যারাজ আছে ১৬৮ খানা,সিনেমা হল আছে, সুইমিং পুল আছে, ৫০ জন বেদজ্ঞ পন্ডিত কে দিয়ে পুজো করিয়ে গৃহপ্রবেশ হয়েছিল। এসব ধর্মাবতারের চোখে পড়ে না, ধর্মাবতারের কাছে খবর নেই বা ধর্মাবতারের সাহসে কুলোয় না, এ নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলার, যে লোকটা কিছুদিন আগেই সর্বসমক্ষে মিথ্যে কথা বলেছে তাকে ডেকে নিয়ে এসে জেলে পোরার। একধারে দেশের প্রধানমন্ত্রী মিথ্যে বলছেন, অন্য ধারে নিরাশ্রয় মানুষ ফুটপাথে দিন কাটাচ্ছেন, আরেক ধারে প্রধানমন্ত্রীসখা আম্বানির কুকুরেরাও এসি ঘরে রাত কাটায়। এর থেকে অশ্লীল আর কিই বা হতে পারে, আসুন আরেকবার দেখেনেওয়া যাক, এক প্যাথোলজক্যাল লায়ারের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি।

RELATED ARTICLES

Most Popular