Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: টাকা শোধ না দিলে গাড়ির চাকার তলায় পড়ে থাকবে থ্যাঁৎলানো...

চতুর্থ স্তম্ভ: টাকা শোধ না দিলে গাড়ির চাকার তলায় পড়ে থাকবে থ্যাঁৎলানো মৃতদেহ

বাবা কাঁদছে, আর বলছে, আমায় আর কটা দিন সময় দিন, আমি পুরো টাকা শোধ করে দেব। বাকি কত? ১লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। একটা ট্রাক্টরের কম করে দাম ৬/৭ লক্ষ টাকা৷ সেই কৃষক বাকি টাকা শোধ দিয়ে দিয়েছে, পড়ে আছে এই ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। রিকভারি এজেন্ট তাঁর ট্রাক্টর নিয়ে চলে যাচ্ছে৷ বাবা কাঁদছে, ট্রাক্টরের পিছনে পিছনে দৌড়চ্ছে। বাবার অসহায়তা দেখে তাঁর মেয়ে এগিয়ে এল, থামানোর চেষ্টা করল ট্রাক্টর, রিকভারি এজেন্ট সেই গর্ভবতী মহিলার ওপর দিয়েই ট্রাক্টর চালিয়ে দিল, রক্তাক্ত থ্যাঁতলানো দেহটা পড়ে রইল। ১৬ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা ঘটেছে হাজারিবাগের বারিয়ানাথ পুলিশ স্টেশনে৷ আচ্ছা এটাই কি প্রথম? গত বছরেই ঘটেছিল এক, হবহু একই ঘটনা। নিজের ট্রাক্টরের তলায় পিষে মারা গেলেন কৃষক। উত্তরপ্রদেশের সীতাপুরের ঘটনা। লোন নিয়ে শোধ দিতে না পারায় টাকা ফেরত চাইতে এসেছিল কয়েকজন এজেন্ট। তাদের সঙ্গে বাদানুবাদের সময় ট্রাক্টর থেকে পড়ে গিয়ে তার নিচে চাপা পড়ে যান জ্ঞানচাঁদ নামে বছর ৪৫-এর ওই চাষি মেহমুদাবাদের সার্কল ইনস্পেক্টর মহম্মদ জাভেদ খান বলেন, ভাউরি গ্রামের বাসিন্দা জ্ঞানচাঁদ কয়েক মাস আগে ট্রাক্টর কেনার জন্য একটি ঋণদানকারী কোম্পানি থেকে লোন নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মাসিক কিস্তির টাকা দিতে পারছিলেন না। ৯০ হাজার টাকা বকেয়া ছিল। গতকাল কয়েকজন রিকভারি এজেন্ট আমাদের বাড়ি আসে। ওরা জোর করে ট্রাক্টরটা নিয়ে যাচ্ছিল। জ্ঞানচাঁদ ওদের বাধা দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে পড়ে যায়। যে রিকভারি এজেন্ট ট্রাক্টরের চালকের আসনে বসে ছিল, সে ট্রাক্টর চালিয়ে দেয়। সেটি পিষে দেয় জ্ঞানচাঁদকে। জ্ঞানচাঁদের ভাই এই তথ্য জানিয়েছে পুলিশ অফিসার বলেন।

সারা দেশজুড়ে এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটে চলেছে, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষজন ঠেকায় পড়ে ব্যাঁঙ্ক থেকে ধার নিয়েছেন৷ তারপর সেই ঋণ না চোকাতে পারলে বাড়িতে এসে অপমান, হুমকি, মারধোর, গাড়ি কেড়ে নেওয়া, বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া, এসব হয়, আমরা সবাই জানি। মাঝে মধ্যে তারথেকেও কিছু বেশি হলে, মারা গেলে, আত্মহত্যা করলে খবর হয়। অথচ ওই একই ব্যাঙ্কের কোটি কোটি টাকা ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনও নেই রিকভারি এজেন্টও নেই, তাদের জেলেও পোরা হয় না, বরং তাঁরা সব মিলিওনিয়ার, বিলিওনিয়ার সম্মানীয় শিল্পপতি বনে বসে থাকেন। 

ব্যাঙ্ক ফেল মারছে, ১০.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা মেরে দিয়েছে ব্যাঙ্কের, কারা মারল? শিল্পপতিরা, কাদের জন্য এনপিএ হল? শিল্পপতিদের জন্য, মোদিজীর রাহত প্যাকেজ ২০ লক্ষ কোটি টাকা আর নন পারফর্মিং অ্যাসেট ১০.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা, মোট OUTSTANDING LOAN ২০১৯-এ ৮৬.৩৩ লক্ষ কোটি টাকা, এরমধ্যে ২০ জন, মানে ২০টা কোম্পানির মোট ঋণ যা শোধ করা হয়নি তার পরিমাণ, ১৪ লক্ষ কোটি টাকা। আসুন এবার দেখা যাক কৃষি ক্ষেত্রে যে ঋণ পরিশোধ করা হয়নি তার পরিমাণ কত? ১২.৬ লক্ষ কোটি টাকা। মানে দেশের ২০টা পরিবারের কাছে যত ঋণ পরিশোধ বাকি তার চেয়েও কম সারা দেশের কৃষক দের কাছে পড়ে আছে। এদিকে ঋণ মাফ? কাদের? কত? এই সেদিনকে নীরব মোদি সমেত ৫০ টা কোম্পানির ৬৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ মাফ করা হলো, আর ঋণ মাফ করারই বা কী আছে ঋণ নিয়ে শোধ দেননি এবং পরিশোধ হবেই না এমন টাকাই তো ১০.৩৫ কোটি টাকা। এবং একটা কথা মাথায় রাখবেন কৃষি ঋণের ও বেশির ভাগ মানে প্রায় ৮০% বড় ধনী কৃষকরাই পেয়ে থাকেন, দেশের আম কৃষকদের জন্য আছে প্রধানমন্ত্রীর সন্মান যোজনা, বছরে ৬০০০ টাকা, যে প্রধানমন্ত্রী ১ লাখ টাকার পেনে নাম সই করেন।

এই কি প্রথম হল এমন? না তাও নয়, হিসেব বলছে ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে এই ব্যাঙ্ক ফ্রড, ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে খোয়া গিয়েছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা, শুনেই চোখ কপালে উঠল তো? সত্যিই তো ২৫ হাজার কোটি টাকা কম নয়, কিন্তু তারপর এক ফকির চাওয়ালা আমাদের দেশের মাথায় বসলেন, ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এই জালিয়াতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল, এক লক্ষ বত্রিশ হাজার কোটি টাকায়। ২০১৯ – ২০২১, যখন দেশ করোনা কালে ঢুকে পড়েছে, ব্যবসা বন্ধ, পরিযায়ী শ্রমিকরা মাইলের পর মাইল হাঁটছেন, চাকরি চলে যাচ্ছে, মাইনে ছাঁটাই হচ্ছে, তখন চুরি হল ৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা৷ কেবল চৌকিদার যখন পাহারায়, তখন ব্যাঙ্ক জালিয়াতির পরিমাণ, ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার কোটি টাকা। কারা নিল? কিভাবে নিল? তারা কোথায়? তাদের ধরার জন্য কী করা হচ্ছে? কত টাকা আদায় করা হল বা কত টাকা আদায় করা যাবে? এ নিয়ে চৌকিদার সংসদে একটা কথাও বলেছেন? না বলেননি, তিনি ফেডারেলিজমের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, অশিক্ষিত, অসত্য ব্যাখ্যা। কিন্তু এটাও হিমবাহের চূড়া মাত্র, টিপ অফ দ্য আইসবার্গ। কারণ চুরি করে পালিয়ে যাওয়া, ব্যাঙ্ক জালিয়াতিই কেবল সমস্যা নয়, সমস্যা আরও গভীরে। 

একটা কথা ইতিমধ্যে সব্বাই জেনে গিয়েছেন, এনপিএ, নন পারফর্মিং অ্যাসেট, আসলে হল শুদ্ধ ভাষায় ঝাপু হয়েছে, মার গিয়েছে, খোয়া গিয়েছে। যে টাকা ব্যাঙ্ক ধার দিয়েছিল, তার এতটা আর কোনওদিন ফেরত আসবে না। আচ্ছা আপনি একটা ৬০ লক্ষ টাকার ঋণ নিলেন ব্যাঙ্ক থেকে, ২০ লক্ষ টাকা ফেরত দিলেন, তারপর বললেন আর পারবো না। ব্যাঙ্ক আপনার গাড়ি বা বাড়ি বেচে ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে আপনাকে ছেড়ে দেবে? ঋণ ৬০ লক্ষ টাকার হলে হরগিজ ছেড়ে দেবে না, গলায় গামছা দিয়ে আদায় করবে, আপনার বৌ-এর গয়না, আপনার অন্য ব্যাঙ্কে রাখা টাকা, আপনার বাবার বাড়ি নিয়েও টানাটানি করবে। কিন্তু টাকাটা যদি ১০০০ কোটি হয়? তাহলে ব্যাঙ্ক ৪০০ কোটি টাকা আদায় করে বাকি ৬০০ কোটি ওই নন পারফর্মিং অ্যাসেটে ঢুকিয়ে দেবে, এটাই রীতি, তার কায়দা কানুন আপনাকে জানতে হবে ব্যস, তাহলেই ঐখানেই গল্পের ইতি, খাতায় লেখা হয়ে যাবে ৬০০ কোটি নন পারফর্মিং অ্যাসেট, কিছুদিন পর তা মুছে ফেলা হবে। আসুন আজ অনিল আম্বানির কথা বলা যাক, আপাতত মিডিয়ার আলো থেকে একটু দূরে, এক পা পিছিয়েছেন বটে, কিন্তু দু পা এগোনোর ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। প্রাইমারি অ্যাসেসমেন্টে জানা যাচ্ছে ৮৬ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে। রিলায়েন্স কমিউনিকেশনে ৪৯ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা, রিলায়েন্স টেলিকমে ২৪ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা, রিলায়েন্স ইনফ্রাটেল এ১২ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার তছরুপ হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। মানে ওই চারজন ঋণখেলাপীর মোট ঋণের থেকেও অনেক বেশি। তাহলে তার নাম নেই কেন? তাকে নিয়ে ব্যাড বয়েজ বিলিওনিয়ার বানানো হচ্ছে না কেন? নামের পাশে আম্বানি আছে বলে। লোকটি মুকেশ আম্বানির ভাই বলে? এই নাম বেরিয়ে আসলে আরও অনেক নাম পিল পিল করে বেরিয়ে আসবে বলে? শাসক দল, সরকার, এমন কি বিরোধী দলেরও বহু নেতা প্রচুর ভেট পেয়েছেন বলে? এসব প্রশ্ন তো আসবেই, আসছে। আসুন আরো বিশদে আলোচনা করা যাক।

৫০ লক্ষ কেন? ৫ লক্ষ টাকার ঋণ নিয়ে শোধ না দিলে নোটিশ জারি হয়ে যায়, ঘরে আসে মাসলম্যানরা, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঋণখেলাপীর সম্পত্তি নিলামে তোলা হয়, আমরা দেখেছি। আর ৮৬ হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপীর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্ক কী ব্যবস্থা নিল? দেশের জনগণ শুনে নিশ্চয়ই সুখী হবেন, অন্তত তাঁরা তো হবেনই, যারা মনে করেন, নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদির নেতৃত্বে এক দুর্নীতিমুক্ত সরকার এই দেশ চালাচ্ছে, তাঁরা বিশেষ করে আনন্দ অনুভব করবেন যে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা নেওয়া তো দুরের কথা, এ বিষয়কে লুকিয়েই রেখেছিলেন, চেপে রেখেছিলেন, যাতে এই নোংরা সত্যিটা প্রকাশিত না হয়ে যায়, তাঁরা অনিল আম্বানিকে আড়াল করছিলেন।

কিভাবে এই অনাদায়ী ঋণের কথা, এই তছরুপের কথা বাইরে এল? সেই ইডি করল? যারা মধ্যরাতে বিরোধী দলের নেতৃত্ব বা তাদের আত্মীয় স্বজনদের দরজায় কড়া নাড়ে? না, তারা কিছুই জানে না। তাহলে সিবিআই? যারা চমকায় ধমকায়, আদালতের ভাষায় তোতাপাখি, সরকারের বুলি বলে? না, তারাও জানতে পারেনি এই লুঠমারের কাহানি! তাহলে কি ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া আর ওভারসিজ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া নিজেরাই বার করে দিল এ তথ্য, এই তছরুপ বেরিয়ে এলে যাদের আর্থিক অবস্থার কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে আসবে? তারাই কি আগেভাগে খবর লিক করে নিজেদের বাঁচাতে চাইলো? দেশ কে বাঁচাতে চাইলো? দেশ গয়া ভাড় মে, আপনাকে নিয়ে চিন্তা করতে ওদের বয়ে গেছে, এখবর দেওয়া তো দুরস্থান, তাঁরা এই খবর লোকানোর চেষ্টা করছেন, আপ্রাণ চেষ্টা।

আসলে অনিল আম্বানি, নতুন মুর্গি ধরে কোম্পানি বেচে নিজের কাঁধের বোঝা, সমস্ত ঋণ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নয়া সকালের দিকে এগোবেন, সম্ভবত তাই কিছু ক্রেতা যোগাড় করেছিলেন, বিষয়টি ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুনালে যায় রেজেলিউশন হয়, নয়া ক্রেতা রা হাজির হয়, তারা একটা রেজেলিউশন নেয়, সেটা জানায়, যেটাতে তারা একটা এনওসি চেয়েছে, তারা বলেছে এই মালিকের অন্যান্য বেআইনী ঋণ, বা তার থেকে যে ক্ষতি তা কিন্তু আমরা বহন করবো না, অতএব যা আছে জানাও। গলগল করে বেরিয়ে এসেছে সব তথ্য, ৮৬ হাজার কোটি তছরুপের গল্প, এতদিন যা চেপে রাখা হয়েছিল!

ব্যাঙ্ক ঋণ তো মুখ দেখে দেবার কথা নয়, একটা কোম্পানিকে ঋণ দেবার আগে তার ব্যবসা, তার লাভ, তার গুডউইল ইত্যাদি বহু হিসেব করেই দেওয়া হয়। আসুন দেখা যাক অনিল আম্বানির আর কমকে ব্যাঙ্ক কী দেখে লোন দিল? ২০১৮-২০১৯ সালে অনিল আম্বানির আর কম তাদের নিজেদের খাতায় ৪৫০ কোটি টাকার ক্ষতি দেখাচ্ছে, তার আগের আর্থিক বছর, মানে ২০১৭-২০১৮ তে ২৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি দেখাচ্ছে, মজার কথা হল সেই বছরেই তারা ১৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছে, তার মানে এক লস মেকিং কোম্পানিকে ঋণ দেবার জন্য ব্যাঙ্ক উঠে পড়ে নেমেছিল? কেন? কারা তাদের এই নির্দেশ দিয়েছিল? কেন দিয়েছিল? এসব প্রশ্ন তো উঠবেই। প্রশ্ন আরও আছে, এই টাকা সাইফন হয়ে গেল কোথায়? এ তো ভারি মজা, ৩০০০ কোটি তাকা ধার নাও, ১০০০ কোটি টাকা রাজনৈতিক দল শাসক দলকে ভেট দাও, তারও লিগ্যাল বন্দোবস্ত করা আছে, আর ১০০০ কোটি টাকা ব্যাঙ্ককে ফেরত দাও, বাকি ১০০০ কোটি টাকা নিয়ে কেটে পড়ো। সোজা হিসেবে খেলা চলছে, আর কিছু বললেই, সীয়াচীন মে জওয়ান খড়ে হ্যাঁয়! দেশপ্রেম নয়তো হিন্দু খতরে মে হ্যায়, মুসলমান জনসংখ্যা নাকি এমন বাড়ছে যে দু তিন বছরে হিন্দু দের পার করে যাবে, এমন খাড়াই মিথ্যে কে সামনে রেখে স্লোগান দেওয়া হবে অভি না জিসকো খুন না খৌলে, খুন নহিঁ ওহ পানি হ্যায়। রাজকোষে চুরি হয়ে যাবে, চোরেরা জন্মদিন পালন করবে, ছেলের বিয়ে, নিজের ম্যারেজ অ্যানিভারসারি পালন করবেন, রাজনৈতিক নেতারা হেঁ হেঁ করতে করতে গিয়ে হাজির হবেন, সেখানে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার কর্তাব্যক্তিরাও থাকবেন, তাঁরা দেখবেন পরিষ্কার, কাকে ঋণ দেওয়া উচিত, কাকে নয়।

অনিল আম্বানির আর কম কোম্পানির বোর্ড অফ ডাইরেক্টরসে,  স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান, হ্যাঁ নকড়া ছকড়া ম্যানেজার ইত্যাদি নন, ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এ কে পুর্বা ছিলেন, এক ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, নিজে এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত, কে কাকে ধরবে? কে কাকে আটকাবে? একটা ফরেনসিক অডিট হয়েছিল, ২০১৮-১৯ এ, এই আর কম কোম্পানি তে। ফরেনসিক অডিটে কোম্পানির ক্ষতি কেন হল, কিভাবে হল, কারা দায়ী, এসব কিছুই খুঁজে বার করা হয়, তাতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ৫৫০ কোটি টাকা বিভিন্ন ভাবে ঘোরানো হয়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত কোম্পানি থেকে সাইফন হয়ে গিয়েছে। হ্যাঁ, এই রিপোর্ট ২০১৮-২০১৯ এর। তাহলে সেই রিপোর্ট বাইরে এল না কেন? সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে অনিল আম্বানিকে লক আপে পোরা হল না কেন? তার দাদা মুকেশ আম্বানিকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হল না কেন, যে এসবের হদিশ তিনি রাখতেন কিনা? আরও বড় প্রশ্ন হল একটা জালিয়াতি করা কোম্পানিকে তো এন সি এল টি, মানে ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুনালে পাঠানোই যায় না, কার নির্দেশে পাঠানো হল? না খাউঙ্গা, না খনে দুঙ্গা, মনে আছে? দেশের প্রধান সেবক নরেন্দ্র ভাই এর কথা? কে খাচ্ছে? কাকে খাওয়াচ্ছে? 

৮৬ হাজার কোটি টাকা কার? সাধারণ মানুষের। সামান্য হাজার, দশ হাজার চুরির জন্য থানা লক আপে উলটো করে বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয়, আর ৮৬ হারা কোটিটাকা চুরি করে অনায়াসে বেরিয়ে যায় ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্পরেটের দল, এই মোদী জামানায় তা বাড়ছে। যারা দেশের টাকা মেরে চলে গেল, যারা দেশের টাকা মেরে দিয়ে দেশেই লুকিয়ে আছে, যারা দেশের টাকা মেরেদিয়ে নির্ভয়ে দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের কিচ্ছু হবে না? তাদের উলটো করে বেঁধে থার্ড ডিগ্রি দেওয়া হবে না কি এই জন্য, যে তারা অনেক অনেক বেশি টাকা চুরি করেছে, যে চুরির ভাগ পেয়েছে মন্ত্রী সান্ত্রী কোতওয়াল? তাদের শাস্তি হবে না কি এই জন্য যে যে তারা শাসকদল ঘনিষ্ঠ, তারা শাসক দলকে যথেষ্ট নির্বাচনী দক্ষিণা দিয়ে থাকে? নিশ্চয়ই তাই। এবং সেই কারণেই বিজেপি যখন দুর্নীতির কথা বলে, বিজেপি যখন দুর্নীতি মুক্ত ভারতের কথা বলে, তখন তাদের একটাই প্রশ্ন করা উচিত, আজ সেই প্রশ্ন আমি করছি, কাল থেকে সব্বাই প্রশ্ন করুন, অনিল আম্বানির মেরে দেওয়া এই ৮৬ হাজার কোটি টাকার কতটা পেয়েছেন, জানান৷ 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments