skip to content
Tuesday, June 25, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | জওয়ান, শাহরুখ খান

Fourth Pillar | জওয়ান, শাহরুখ খান

Follow Us :

জঙ্গি দেশপ্রেম আর হিন্দু ভাবাবেগকে তুলে ধরে বেশ কিছু সিনেমা হচ্ছিল, বেশ কিছু দিন ধরেই। এটা মোদি জমানার অন্য আর পাঁচটা প্রচারের মতনই চলছিল। বিবেক অগ্নিহোত্রীর কাশ্মীর ফাইলস, সুদীপ্ত সেনের দ্য কেরালা স্টোরি ইত্যাদি। বড় পর্দায় হেট স্পিচ চলছে তো চলছে, ঘৃণা ছড়ানোর এক নতুন কায়দা। সাভারকর নিয়ে সিনেমা আসছে, একইভাবে আবার ইতিহাস বিকৃতি দেখব আর ঘৃণা ছড়ানো হবে। কিন্তু এই বিবেক অগ্নিহোত্রী বা সুদীপ্ত সেনদের একটা লিমিটেশন তো আছেই। প্রধানমন্ত্রীকে ছবির প্রচার চালাতে হয়, তারপরেও কতজন মানুষ ছবি দেখেছেন? এইরকম একটা প্রেক্ষিতে শাহরুখের জওয়ান এল, সারা দেশ জওয়ান রোগে আক্রান্ত। সাতসকালের ৫টা-৬টার শো হাউসফুল হয়ে যাচ্ছে, রেকর্ড বক্স কালেকশন আর দর্শকদের উচ্ছ্বাস, প্রতিটা ডায়ালগে হাততালি, এক ৫৭ বছরের যুবক স্ক্রিনে এলেই আগুন লেগে যাচ্ছে। দেশজুড়ে একই ছবি, দক্ষিণের নায়িকা আছে, বিজয় সেতুপতি আছেন, দক্ষিণের জনপ্রিয় অভিনেতা, দীপিকা পাড়ুকোন আছেন, কিন্তু ওই একাই শাহরুখ কাফি হ্যায়। আর গোটা ছবি জুড়ে অনর্গল এই সময়ে দেশের রাজনৈতিক ইস্যুগুলো ঘুরে ফিরে আসছে, এবং মানুষ সেই কথাগুলো শুনছেন তালি বাজাচ্ছেন। হ্যাঁ, হিন্দি মেনস্ট্রিম ছবিতে এসব উঠে গিয়েছিল সেই কবে। মেনস্ট্রিম ছবি মানে এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট। এটাই ছিল আপাতত দস্তুর, সেই ফাঁকে ওই কাশ্মীর ফাইলস, তাসখন্দ ফাইলস, কেরালা স্টোরি ইত্যাদির আমদানি শুরু হয়েছিল। অনেকদিন পরে নাচাগানা আর মারকাটারি ফাইট সিন, কার চেজিং, ধামাকার সঙ্গে জরুরি কিছু কথাও অনায়াসে বলে ফেলা হল। আসুন আগে দেখে নিই কী কী কথা বলা হল। 

কৃষকদের আত্মহত্যার কথা বলা হল, কীভাবে সামান্য ব্যাঙ্কলোন চোকাতে না পারলে কৃষকের ট্রাক্টর তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, দেখানো হল। আর জানানো হল যে মার্সিডিজ কিনলে ঋণের উপর সুদ লাগে ৮ শতাংশ আর ট্রাক্টরের উপর সুদ লাগে ১৩ শতাংশ। ওই একই গল্পে বলা হল কীভাবে এক শিল্পপতির ৪০ কোটি ৫৭ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৫৬ টাকার ঋণ মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। মানুষের বুঝতে এক ছটাক অসুবিধে হবে না, মেসেজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। এটাই তো সামনের নির্বাচনে মানুষকে বোঝাতে হবে, শাহরুখ অর্ধেক কাজ করে দিয়ে গেলেন, বলে দিলেন সরকারের জঘন্য নোংরা ভূমিকার কথা। বললেন আমাদের অন্নদাতাদের আত্মহত্যার কথা, যাঁদের বলার দরকার তাঁদের বললেন, এবং তাঁরা বুঝলেন। উঠে এল জমি অধিগ্রহণের প্রশ্ন, এল কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি আর তার দূষণের প্রশ্ন, এবং বলা হল এটা ধারাবাহিকভাবেই চলছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা। একজন মেনস্ট্রিম অ্যাক্টরের কত সাহস থাকলে এই জমানায় সপাটে এই কথাগুলো বললেন। এবং এইখানেই থামলেন নাকি? এরপরে এলেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রসঙ্গে। কেন নেতাদের অসুখ হলেই তাঁরা সটান চলে যান প্রাইভেট নার্সিং হোমে বা সেই সব জায়গায় যেখানে তাঁদের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হবে, আর সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য মাটিতে বিছানা, ওষুধ নেই, অপারেশন থিয়েটার কাজ করে না। চোখের সামনে দেখানো হল, হ্যাঁ, এই কথাই তো আমাদের বলতে হবে, সবকা সাথ সবকা বিকাশ ইত্যাদি বাওয়ালের পরে এখনও চিকিৎসা ব্যবস্থা মানুষের নাগালের বাইরে কেন? 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | দেশের কাজে ব্যস্ত মোদিজি ছুটি নেন না 

গোটা সিনেমাতে দেখানো হল কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে দেশ চালাচ্ছে, ঠিক এই সময়ের ছবি। এবং প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহা কী ভালো, আপনারাও দেখুন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে ট্যাক্স ফ্রি করে দেওয়া, বিজেপির এমএলএ এমপিরা মিলে ছবি দেখতে বসা ইত্যাদির দরকার হয়নি, ছবি চলছে দেশ জুড়ে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রসঙ্গেই উঠে এল ডঃ কাফিল খানের কথা, গোরক্ষপুরের সেই ডাক্তার যিনি নিজের পয়সায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে এনে শিশুদের বাঁচানোর চেষ্টার পরেও দু’ বছর জেল খেটেছেন। যোগীজির রাজত্বে শেষমেশ জেল থেকে বেরিয়ে আর উত্তরপ্রদেশে থাকতেও পারেননি, কারণে অকারণে তাঁকে আবার জেলে পোরার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এই কথাগুলোই তো বলা প্রয়োজন, আবার বলছি শাহরুখ অর্ধেক কাজ করে দিলেন। এবার বাকি কাজ আমাদের প্রত্যেকের, যাঁরা এই সাম্প্রদায়িক, জনবিরোধী মোদি সরকারের পতন দেখতে চান, তাঁদেরকে ঠিক এই বিষয়গুলোই মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সিনেমার একদম শেষে এসে মিনিট তিন-চার শাহরুখ ভোটের কথা বলছেন, বলছেন আমরা কত সাধারণ ছোট কিছু কেনার আগে কত প্রশ্ন করি, সেটা ঠিক চলবে কি না তা জানার চেষ্টা করি। অথচ একটা সরকার যা নাকি ৫ বছর ধরে আমাদের দেশটাকে চালাবে, আমাদের অর্থনীতিকে চালাবে তাদের নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, জাতপাত ধর্মের নামে নয় আমাদের প্রশ্ন করতে হবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বেকারত্ব নিয়ে। হ্যাঁ, এই কথাগুলো তিনি বলছেন, হলজুড়ে উল্লাস, হলজুড়ে হাততালি। ঠিক এই কথাগুলোই কি আমরা বলতে চাইছি না। এমনিতে দক্ষিণের ছবিতে এই ধরনের পলিটিক্যাল রেফারেন্স খুব স্বাভাবিক, দক্ষিণের ছবিতে সমসাময়িক রাজনীতি অনায়াসে চলে আসে। তাঁদের মেনস্ট্রিম মুভিতে এমন এমন বিষয় আসে, যা চমকে দেয় বারবার। কিছুদিন আগেই কান্তারা বলে একটা ছবিতে আদিবাসীদের জল জঙ্গল জমির অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিষয় এসেছিল, এরকম আরও হাজারটা আসে। কিন্তু হিন্দি মেনস্ট্রিম ছবিতে অনেকদিন পরে এই প্রথমবার, তাও আবার শাহরুখ খানের ছবিতে। পরিচালক দক্ষিণের বলেই কি এত সহজে এই রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে নিয়ে আসলেন? তাও নয় কারণ সব্বাই জানেন যে শাহরুখ খান গোত্রের হিরোদের ছবির প্রতিটা জিনিস হিরোর অনুমোদন ছাড়া হয় না। কাজেই এক্ষেত্রে শাহরুখ অত্যন্ত সচেতনভাবেই নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। অবশ্যই তার সঙ্গেই আছে নাচাগানা ঢিসুম ঢুসুম, সে সবের মধ্যেও বিষয়গুলো কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে না। এবং আমি নিশ্চিত এই একটা ছবিতেই শেষ হবে না, এবার বলিউড মেনস্ট্রিম মুভিতে এই ন্যারেটিভগুলো আসবে, আসতে থাকবে। কিন্তু এসব বলার পরে আমরা আমাদের মানে বাংলা ছবির দিকে তাকাব না? 

একজন হিরো আছেন যাঁর এই সাহস আছে? যিনি কন্টেমপোরারি পলিটিক্স নিয়ে একটা কথাও বলতে পারবেন? ইডির ভয়ে কাঁপতে থাকা নায়ক আর লবি বিস্তার করে জাতীয় পুরস্কার বাগিয়ে নেওয়ার জন্য লালায়িত পরিচালকের দল একটা ছবিও করতে পারবেন আজকের সরকারের বিরুদ্ধে? করতে পারবেন একটা ছবি, গত হনুমান জয়ন্তীতে কীভাবে পরিকল্পনা করে এই বাংলার বিভিন্ন অংশে দাঙ্গা লাগানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছিল তা নিয়ে? বা ছাত্র আনিস খানের মৃত্যু নিয়ে? কেন আমাদের বাংলা ছবিতে এলই না নন্দীগ্রাম সিঙ্গুরের কথা? কেন আসেই না নকশালবাড়ি আন্দোলনের কথা? ঋত্বিক ঘটকের পরে কোনও পরিচালকের মনেই নেই আমাদের বাংলাকে বিভাজন করা হয়েছিল। দু’ টুকরো করা হয়েছিল, কেন আসে না সে প্রসঙ্গ? মিষ্টি দুষ্টু প্রেম আর নায়কের বোকা বোকা নাচ। মেনস্ট্রিম বাদই দিলাম পাশাপাশি যে সিনেমা হচ্ছে সেখানেও রাজনৈতিক কথাবার্তা আছে? নেই কারণ সেই ধক তাঁদের নেই। অন্যদিকে এক মেনস্ট্রিম হিরো, নাচাগানা মারপিটের জন্য বিখ্যাত, তিনি ছবিতে তুলে ধরলেন অত্যন্ত জরুরি কিছু কথা, যা আজকের ভারতে মানুষের জীবনের সঙ্গে জুড়ে থাকা বিষয়, যা আদতে স্পষ্ট রাজনৈতিক উচ্চারণ। এবং আছেন এ বাংলায় কেন, সর্বত্র কিছু উন্নাসিক আছেন, তাঁদের মনে হবে, মনে হয়েছে, এক নাচাগানা হিরোর ছবি নিয়ে এত মাতামাতি কেন? এঁদের অনেকেই আবার প্রতিবাদী ছবি ইত্যাদি তৈরিও করেন, ভালো করেন। কিন্তু এঁদের মনে হয় যে ওই প্রতিবাদ বিষয়টা এক মাত্রিক আর প্রতিবাদের যাবতীয় গ্লোবাল রাইটস ওঁদের কাছেই রাখা আছে। অন্যরাও যে তাদের মতো করে প্রতিবাদ করতে পারে, তা ওঁরা বিশ্বাস করেন না। কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে বেশ কয়েকটা ডকুমেন্টারি হয়েছে, একটা ছবিও হয়েছে তিতলি লাইভ। কিন্তু এরকম হাউসফুল শো তো ছেড়েই দিন, ক’জন দেখেছেন সেই ছবি? অবশ্যই তাতে ওই ছবির গুরুত্ব কমে যায় না, কিন্তু মেনস্ট্রিম মুভিতে এই বিষয়গুলো আসা উচিত, এসেছে, আমরা খুশি। ছবির স্পয়লার দেওয়া উচিত নয় দেবও না, তবে শাহরুখ এ ছবিতে নানান বেশে নানান বয়সের মেক-আপে এসেছেন, কিন্তু শেষটা অনবদ্য। চুল ব্যাকব্রাশ, তামাটে রং আর মুখে সিগার। হ্যাঁ, সারাক্ষণই মুখে সিগার, দেখলেই প্রথমেই চে গ্যেভারার কথা মনে পড়বে। দক্ষিণে চে গ্যেভারা এই বাংলার চেয়েও বড় নায়ক, তাই কি দক্ষিণী পরিচালক অ্যাটলি কুমার এক প্রতিবাদী চরিত্রে শাহরুখকে চে বানিয়ে দিলেন? এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? যাই হোক হলে ভিড় আছে, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখছেন, আগামী নির্বাচনের মূল ন্যারেটিভ সেট করে দিয়ে গেলেন শাহরুখ খান।     

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Mamata Banerjee | হাওড়ার বারোটা বাজালো কে? বিজেপি প্রার্থীর নাম বললেন মমতা
01:40:01
Video thumbnail
Mamata Banerjee | টেন্ডার দিতে পারবে না, পুরসভাগুলি ক্ষমতা কেড়ে নিলেন মমতা
03:17:06
Video thumbnail
Mamata Banerjee | বিরোধীদের অভিযোগ মমতার মুখেই, এবার আর কী বলবে বিজেপি?
03:04:40
Video thumbnail
Mamata Banerjee | নর্দমা কি আমি পরিস্কার করব? বিস্ফোরক মমতা শুনুন কী বললেন
01:32:36
Video thumbnail
Mamata Banerjee | লোভ বাড়ছে নেতাদের, জমি দখল করছে বহিরাগতরা, বিস্ফোরক মমতা
01:36:31
Video thumbnail
Mamata Banerjee | পুর-বৈঠকে বড় খবর!, কী বললেন মমতা?
01:50:11
Video thumbnail
Sayani Ghosh | প্রথমবার সাংসদ দিল্লি গিয়ে কী করলেন সায়নী?
03:06:26
Video thumbnail
Shantanu Thakur | বনগাঁর ঠাকুর বাড়ি থেকে সংসদে শপথ, কী বললেন শান্তনু ?
01:20:50
Video thumbnail
Rachana Banerjee | সংসদে পা রচনার, সেলফি তুললেন কি?
03:03:00
Video thumbnail
June Malia | বিধায়কের পর সাংসদ জুন মালিয়া, দিল্লি গিয়ে কী করলেন?
02:14:00