skip to content
Monday, June 17, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | রামরাজ্যে ভুখা মানুষ

Fourth Pillar | রামরাজ্যে ভুখা মানুষ

Follow Us :

ঋক বেদে রামায়ণের উল্লেখ আছে, সেটা মেনে নিলে আজ থেকে সাত হাজার বছর আগে এক রামরাজ্যের কল্পনা ছিল। একজন রাজা ছিলেন, যাঁর কাহিনি রামায়ণে লেখা হয়েছে। সে কাহিনিতে সত্য কতটা, কল্পনা কতটা, আদৌ সত্য কিছু আছে কি না এসব নিয়ে তর্ক করাই যায়, কিন্তু মীমাংসা হয় না। কারণ সেই ৭০০০ বছর আগেকার কোনও প্রামাণিক ঐতিহাসিক তথ্য নেই, থাকা সম্ভবও নয়। তাহলে তা হয় কাহিনি, না হয় এক আস্থা, এক বিশ্বাস। এবং আমরা সবাই জানি যে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। কাজেই আজ দীপাবলির দিনে তা নিয়ে তর্ক করব না কেবল ওই অংশটা গুছিয়ে বলার চেষ্টা করা যাক। রাম ফিরছেন অযোধ্যায়, ১৪ বছর বনবাস শেষ, লঙ্কায় রাবণ কুম্ভকর্ণ, মেঘনাদ বধ হয়ে গেছে। সে রাজত্ব বিভীষণের হাতে তুলে দিয়ে রাম, সীতা, লক্ষ্মণ, হনুমান আযোধ্যায় ফিরছেন। অযোধ্যার মানুষজন প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করেছেন নগরীর রাজপথ জনপদকে, উলুধ্বনি হচ্ছে, আয়োজনে আছে নৃত্যগীত। চলছে যজ্ঞপাঠ, দানধ্যান। রিপাবলিক ইন্ডিয়া না থাকা সত্ত্বেও নগরের কিছু মানুষজন জেনেই ফেলেছেন সীতাকে অপহরণ করা হয়েছিল, উনি ছিলেন রাবণের লঙ্কায়। কাজেই ফিসফিসানি, সতীত্ব নিয়ে ফুসুর ফুসুর গুজুর গুজুর শুরু হয়েছিল। কিন্তু সে সবের মধ্যেও প্রদীপে আলোকিত রাজপথ ধরে রাম, সীতা, লক্ষ্মণ, হনুমান প্রবেশ করেছিলেন রাজপ্রাসাদে। রামায়ণে এরকম বিবরণই আছে। না, কোনওভাবেই বাজির কোনও কথাই নেই, ভারতবর্ষ বারুদ দেখলই তো বাবর আর ইব্রাহিম লোদির পানিপথের যুদ্ধে ১৫২৬-এ। বারুদ আবিষ্কারও তো এদেশে হয়নি, তা হয়েছিল চীনে, সেও আবার ওষুধ ইত্যাদির কাজে লাগত।

ইতিহাস বলছে ৯০৪ ক্রিস্টাব্দে প্রথমবার যুদ্ধে বারুদ ব্যবহার হয়েছিল। তাহলে দীপাবলিতে বাজি আর যাইহোক রীতি মেনেই পোড়ানো হচ্ছে, এমনটা নয়। বাজি পোড়ানোর রীতি ছিলই না। তাহলে বাজিই বা কেন? শব্দবাজিই বা কেন? দু’ নম্বর তথ্যটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। প্রদীপ তো জ্বালানো হয়েছিল, কিন্তু কী দিয়ে? না, সাত হাজার বছর আগে তেলের কোনও অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে না, ঘি ছিল, কিন্তু পুরো অযোধ্যা নগরীকে আলোকিত করার জন্য ঘি পোড়ানোটা, নেহাতই কষ্টকল্পনা। আর সরষের তেলে বিশুদ্ধ প্রদীপ? না, তাও সম্ভব নয় কারণ বিজ্ঞান বলছে সবথেকে পুরনো সরষের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে আজ থেকে ৬০০০ বছর আগে মধ্য এশিয়াতে। হ্যাঁ, মধ্য এশিয়া থেকেই সরষে ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীতে। তার আগে পর্যন্ত প্রদীপ জ্বালানো হত মৃত পশুদের চর্বি দিয়ে। হ্যাঁ, পুজো পাঠ, হোম যজ্ঞেও সেটাই ছিল আগুনের, প্রদীপের প্রাণ। কিন্তু গত বছরে ৫ লক্ষ ৮৪ হাজার ৩৭২টা মাটির প্রদীপে রাম ভক্তরা সরষের তেল ঢেলেছিলেন, সেই প্রদীপ জ্বালানো হয়েছিল অযোধ্যায়। এ বছর কাটলেই নির্বাচন, কাজেই হাওয়া আরও গরম করতে হবে, অতএব ৯ লক্ষ মাটির প্রদীপে বিশুদ্ধ সরষের তেল ঢেলে অযোধ্যাকে আলোকিত করা হল। গিনেস বুক অফ রেকর্ডে রামের আগমনের প্রদীপ জ্বালানোর রেকর্ড ভেঙে দেওয়া হল, নেতৃত্বে আদিত্যনাথ যোগী। ৯ লক্ষ মাটির প্রদীপ জ্বলেছে, যোগীজি তাঁর মন্ত্রীসান্ত্রী আমলাদের নিয়ে তা দেখেছেন। কিন্তু সেই প্রদীপের উজ্জ্বল আলোর নীচে যে জমাট অন্ধকার তা তাঁর চোখে পড়েনি। প্রদীপ জ্বালানোর কিছু পরেই বেশ কিছু মানুষ, বাচ্চা ছেলেমেয়ে, পুরুষ, মহিলা বিভিন্ন পাত্র হাতে সেই প্রদীপের থেকে সরষের তেল ঢেলে বাড়ি নিয়ে যেতে থাকে। না, তাদের বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানোর জন্য নয়, খাওয়ার জন্য।

আরও পড়ুন: দুর্নীতির এক্কেবারে শিখরে কারা? কারা ডুবে রয়েছে আকণ্ঠ দুর্নীতির পাঁকে?

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরষের তেলের দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। ২০১৪তে যখন মোদিজি সরকারের মাথায় বসলেন তখন এক লিটার সরষের তেলের দাম ৭৬ থেকে ৮০ টাকা। আচ্ছে দিন আনার প্রতিশ্রুতির পরে আজ সাধারণ মানুষ অযোধ্যা নগরীকে আলোকিত করার সরষের তেল দিয়ে নিজেদের ঘরে খাবার তৈরি করার জন্য ঢেলে নিয়ে যাচ্ছে। সেই কল্পিত রামরাজ্য, যার ছবি মাঝেমধ্যেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী থেকে আরএসএস প্রধান তুলে ধরেন, সেই রামরাজ্যে সেদিনেও কি মানুষজন এমনই প্রদীপের তেল ঢেলে নিয়ে গিয়েছিল? এদিকে রামের নামে সরষের তেল পোড়ানো হচ্ছে, শিবের মাথায় গ্যালন গ্যালন দুধ ঢালা হচ্ছে, ওদিকে প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন হিমাচলপ্রদেশে, পরনে পুরোদস্তুর সেনা পোশাক, সেনাবাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গেই তাঁর দীপাবলি। একধারে হিন্দুত্ব, তীব্র গোঁড়া আগ্রাসী হিন্দুত্ব অন্যধারে জঙ্গি জাতীয়তাবাদের কড়া ককটেল, প্রধানমন্ত্রীকে সেনা পোশাকে এর আগে কবেই বা দেখা গেছে? ইনি নিয়ম করেই পরেন, মনের ভেতরের সুপ্ত ইচ্ছে তো হিটলার হয়ে ওঠার। কিন্তু প্রদীপের নীচে তো অন্ধকার ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে। ২০১৪তে যখন এই হিন্দু হৃদয় সম্রাট ক্ষমতায় আসছেন তখন ১২০টা দেশের মধ্যে ক্ষুধা সূচকে আমরা ৫৫তে। মানে আমাদের পরেও ছিল ৬৫টা দেশ। আজ ১২৫টা দেশের মধ্যে আমরা ১১১তে, মানে আমাদের নীচে রয়েছে মাত্র ১৪টা দেশ। আচ্ছে দিন আয়েঙ্গে বলে যিনি হাঁক দিয়েছিলেন, তিনি আর আচ্ছে দিনের কথা মুখেও আনেন না, এখন মুখে কেবল রামনাম। নির্বাচন আসছে, মোদিজি জানিয়ে দিয়েছেন রামনামই তাঁর ভরসা, দেশজুড়ে রামের নামে এক আবেগের উপর ভর করেই তিনি নির্বাচন পার করতে চান। তিনি জানিয়েছেন, আরও পাঁচ বছর ধরেই দেশের ৮০ কোটি মানুষকে ফ্রিতে রেশন দেওয়া হবে। কোথায় নিয়ে গেছেন দেশের অর্থনীতিকে, যেখানে ১৪০ কোটি মানুষের ৮০ কোটি মানুষ ফ্রিতে দেওয়া সরকারি রেশনের উপর নির্ভরশীল? ক্ষমতায় এসেই ২০১৪ সালের বাজেট বক্তৃতার সময়ে যেমন নৌটঙ্কি করেন তেমনই হাত ঘুরিয়ে চোখ পাকিয়ে বলেছিলেন মনরেগা, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প তুলেই দেওয়া যেত, তুলে দেব না কারণ দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জানা উচিত কীভাবে কংগ্রেসি সরকার দান অনুদানের রাজনীতি করত। আর এখন? সেই ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দের ৯৫ শতাংশ ছ’ মাসের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে, খেতে না পাওয়া মানুষের চাহিদা এতটাই বেড়েছে, অন্তত কিছু টাকা ঘরে আসবে তার জন্য তারা ১০০ দিনের কাজে নাম লেখাচ্ছেন।

এসেই বলেছিলেন জিডিপি গ্রোথ দুই অঙ্কে নিয়ে যাওয়াটাই আমাদের লক্ষ্য। বাস্তবে এই সাড়ে ৯ বছরে গড় বৃদ্ধি ৫.৭ শতাংশ। ২ কোটি চাকরির ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদিজি, বেকারত্ব গত ৪৫ বছরের রেকর্ড ছুঁয়েছে। আরও সাংঘাতিক হয়েছে স্বনিযুক্তি প্রকল্পের হিসেব। এর আওতায় আগের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ এসেছেন, ৪ কোটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৫। কিন্তু সমস্যা তাদের রোজগার নিয়ে সবজি বিক্রি, চা মুড়ি চপ বিক্রি, প্লাস্টিকের জিনিস বিক্রি ইত্যাদি যাঁরা করতেন তাঁদের সংখ্যা বেড়েছে হু হু করে, আয় কমেছে তার চেয়েও বেশি। এর ফলে কোনও একমাসও যদি রোজগার কোনও কারণে বন্ধ হয়, তাহলেই পেটের ভাতে টান পড়ছে, কারণ তাদের এই স্বনিযুক্তি প্রায় দিন আনি দিন খাইয়ের পর্যায়ে চলে গেছে। স্থায়ী অসংগঠিত ক্ষেত্রে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২২–২৩এ শ্রমিকদের মজুরি কমেছে ২০ শতাংশ হারে। তার উপরে মূল্যবৃদ্ধি যোগ করুন, আয় আসলে কতটা কমেছে বোঝা যাবে। ভালো মানের ভালো বেতনের চাকরির সংখ্যা কেবল বাড়ছে না তাই নয়, ভালো বেতন যাঁরা পেতেন, পাচ্ছেন, গত পাঁচ বছর ধরে তাঁদের মাইনে বাড়েনি। গ্রামীণ বাজারের চাহিদার অবস্থা কতটা খারাপ? স্কুটার বা বাইকের চাহিদা কমেছে ৪০ শতাংশ। শহরের বাজারে মানুষ খরচ করতেই ভয় পাচ্ছেন, রিয়েল এস্টেট-এ মন্দা আসতে চলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। অন্যদিকে বৃদ্ধির এক কদর্য চেহারা দেশের মুষ্টিমেয় কিছু শিল্পপতিদের সম্পদের ভান্ডারে। গৌতম আদানির সম্পদ বৃদ্ধি ১২২৫ শতাংশ, হ্যাঁ, গত দশ বছরে গৌতম আদানির ২৫ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা এখন ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা। আজ তেনার হাতে দেশের সবচেয়ে বড় বিমান বন্দরগুলো, জাহাজ বন্দর থেকে খনি তুলে দেওয়া হয়েছে, বদলে উনি এবং ওনারা মিলে এই সরকারের ঢাক বাজানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা ধরে টিভিতে প্রায় প্রতিটি খবরের কাগজে মোদিজির জয়গাথা গাওয়া হচ্ছে, ছাপা হচ্ছে। একজন অন্যজনের বিনিময়ে টিকে থাকবেন, এটাই শর্ত। আর সেই কল্পিত রামরাজ্যের অযোধ্যায় এক শিশু প্রদীপের পোড়া তেলে ভেজে নেবে বাসি রুটি। অযোধ্যায় দীপাবলি তার কাছে আচমকাই এনে দিয়েছে রুটি নয় পরোটা, সেদ্ধ আলু নয়, আলুভাজার স্বাদ, এটাই আনন্দ তার কাছে। ছবিটা দেখার পরে মনে হল তাহলে রামের আর আসার দরকার নেই এই অযোধ্যায়, বরং প্রদীপ জ্বালার আগেই লুঠ হয়ে যাক সব তেল। শিবের মাথায় দুধ ঢালার আগেই তা পৌঁছে যাক ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে। সেই সব মানুষের ঘরে জ্বলুক আলো, পেটে জুটুক দু’ বেলার খাবার।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
BJP | ঠাঁই হল না দলবদলুদের সংঘের চাপে, ভোট প্রার্থী আদি বিজেপি?
00:00
Video thumbnail
লোকসভায় জোর ধাক্কা, হতোদ্যম বঙ্গ বিজেপি, প্রার্থীতালিকায় নেই চমক, সংঘের চাপে প্রার্থী আদি বিজেপি?
00:00
Video thumbnail
Sukanta | Kanchenjunga Express | কী করে হলো দুর্ঘটনা? দায়ী কে? শুনুন সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | ভাড়া বাড়িয়ে যাচ্ছে, সুরক্ষায় নজর নেই! বিজেপিকে জোর ধাক্কা মমতার
00:00
Video thumbnail
N. Chandrababu Naidu | BJP | স্পিকার পদ বিজেপির, জোটের হাতে ডেপুটি? বিরাট ঝড়ের মুখে এনডিএ?
00:00
Video thumbnail
Kanchenjunga Express | Sukanta Majumder | রেল দুর্ঘটনায় পাশে দাঁড়ানোর রাজনীতি? এগিয়ে কোন দল?
00:00
Video thumbnail
Sukanta Majumder | Railway | শকুনের নজর ভাগাড়ে, বিরোধীর নজর রাজনীতিতে, রেল দুর্ঘটনায় এ কী মন্তব্য?
00:00
Video thumbnail
Kanchenjunga Express | কাঞ্চনজঙ্ঘা দুর্ঘটনা বাতিল বহু ট্রেন দেখে নিন তালিকা
00:00
Video thumbnail
Kanchanjunga Express | উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল উড়ানে কি দেখা হবে মমতা-আনন্দ বোসের?
00:00
Video thumbnail
Train Accident | ১২ মাসে ৪টি ভয়াবহ দুর্ঘটনা , কতটা সুরক্ষিত রেলযাত্রা ?
00:00