Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | ইন্ডিয়া জোটের পাটিগণিত আর রসায়ন 

Fourth Pillar | ইন্ডিয়া জোটের পাটিগণিত আর রসায়ন 

Follow Us :

জোট তৈরি আদৌ হবে কি না তা নিয়ে প্রচুর জল্পনা ছিল। আলোচনা এটাও হচ্ছিল যে আপ, কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, শিবসেনা একসঙ্গে বসবে কী করে? রাষ্ট্রীয় স্তরে শিবসেনা আর কংগ্রেস? একসঙ্গে? সম্ভব? পলিটিকাল পণ্ডিতদের বেশ কিছুদিন ধরে এটাই ছিল আলোচনার বিষয়। তারপর পাটনার বৈঠক হল, কী কাণ্ড, এঁরা সবাই একসঙ্গেই বসলেন। হ্যাঁ, শিবসেনা আপ কংগ্রেস সিপিএম একসঙ্গেই বসল, কিন্তু আপ থাকল না প্রেস কনফারেন্স-এ। ব্যস, আবার পলিটিক্যাল পণ্ডিতদের আলোচনা শুরু, হবে না, এ জোট সম্ভব নয়। এর মধ্যে মোদি-শাহ ভেঙে ফেললেন এনসিপিকে, আগেই ভেঙেছিলেন শিবসেনাকে, পণ্ডিতদের বিজ্ঞ মতামত এল, শরদ পাওয়ার মোদিজির সঙ্গেই আছেন। বেঙ্গালুরু বৈঠকে আপ এল, শরদ পাওয়ার এলেন, ডি কে শিবকুমার জড়িয়ে ধরলেন আপ-এর রাঘব চাড্ডাকে, রাহুল আর সোনিয়ার মধ্যে বসলেন মমতা। এমনকী জোটের নামও ঠিক হয়ে গেল, মারকাটারি নাম, ইন্ডিয়া, বিজেপি নেতাদের গা চিড়বিড় করে উঠল। অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মা থেকে বাংলার শুভেন্দু অধিকারী আগ বাড়িয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, গায়ে লেগেছে। বিজেপি ওই দিনেই ভুলে বিছড়ে গীতের মতো অনুষ্ঠানে ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন এনডিএ-কে, দিল্লির পাঁচতারা হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর দর্শন পেলেন এনডিএর তথাকথিত নেতারা, সেখানে মোদিজি তাঁর মন কি বাত বললেন। 

তো যাই হোক, জোট হল, নাম হল, জোটে আরও কিছু সদস্য বাড়বে, সবই ঠিক আছে, কিন্তু আজকের আলোচনা হল সেই ইন্ডিয়া জোটের পাটিগণিত আর রসায়ন নিয়ে। প্রত্যেক জোটের এক পাটিগণিত থাকে, দু’ দলের ভোটের পরিমাণ, দু’ দল মিশলে তা কেমন হবে, জোট হলে ভোট পার্সেন্টেজে কার লাভ ইত্যাদি হল জোটের পাটিগণিত। আর জোটের রসায়ন হল আরেক জিনিস, মানে এই জোটের সমর্থন জমি কতটা? মানে দলিত, আদিবাসী, ওবিসি, উচ্চবর্ণদের কতটা আসবে এই জোটে, এই জোট নিয়ে সংখ্যালঘুদের ধারণা কেমন? যে সব দলে জোটে এল তাদের ভোট একে অন্যের কাছে ট্রান্সফার হবে কি হবে না, আর দেশের মানুষের কাছে একটা বিশ্বাসযোগ্যতার পারসেপশন, ধারণা তৈরি করতে পারবে কি পারবে না। আমার মতে এই ইন্ডিয়া জোট পাটিগণিতের জায়গায় বড্ড কাঁচা, ইন ফ্যাক্ট পাটিগণিতের হিসেবে এই জোটের কোনও মুল্যই নেই বা যেখানে আছে, সেখানে ইতিমধ্যেই জোট আছে। আসুন আগে পাটিগণিতের আলোচনাটা করে নিই, তারপরে রসায়নের, কেমিস্ট্রির আলোচনায় আসা যাবে। ধরুন মহারাষ্ট্র আর বিহার, এখানে জোটের একটা পাটিগণিত আছে, মহারাষ্ট্রে মহাবিকাশ আগাড়ির মধ্যে আছে কংগ্রেস, উদ্ধব শিবসেনা, শরদের এনসিপি আর প্রকাশ আম্বেদকরের বঞ্চিত আগাড়ি। শেষ সমীক্ষা বলছে এখনও এদের মিলিত ভোট প্রায় ৪৭-৪৮ শতাংশ, অবশ্য এই জোটে সিপিএম নেই, ওঁরা হলেন ওই রাজ্যে সহি বিপ্লবী, কাজেই এ জোটে ওনারা থাকবেন না, যদিও এই সব দলের সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটে ওনারা আছেন। ওদিকে বিহার, এখানেও নির্বাচনী জোটে ছিল আরজেডি, কংগ্রেস, সিপিএম এবং সিপিআইএমএল, এবার যোগ হয়েছে নীতীশ কুমারের জেডিইউ। সবমিলিয়ে এক বিরাট সামাজিক ভিত্তি, অঙ্কের হিসেবে বিরাট। এবং খেয়াল করুন, ক’দিন আগে নয়, বারবার বিজেপির সঙ্গে ঘর করেছেন নীতীশ, তেনাকে নিয়ে সহি বিপ্লবী সিপিএম-এর কোনও সমস্যাই নেই। এরপর আছে ঝাড়খণ্ড। ওখানেও কংগ্রেস ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার জোট আছে, না সহি বামেরা এখানেও জোটে নেই, তাঁরা নির্বাচন এলেই করাপ্ট হেমন্ত সোরেন আর কমিউনাল বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার করবেন। যদিও ইন্ডিয়া জোটে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা এবং বাম দলেরা আছে। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ধর্ষণ, লুঠ, খুন— জ্বলছে ডাবল ইঞ্জিনের মণিপুর 

উত্তর-পূর্বে ত্রিপুরাতে কং-বাম জোট হবে, কিন্তু তৃণমূল বর্জিত সেই জোট হবে, এ তো বলা বাহুল্য। উত্তর পূর্বাঞ্চলে মেঘালয়ে তৃণমূল এবং কংগ্রেস জোট হতে পারে, সেখানে পাটিগণিত খানিকটা কাজ করবে। বাকি রাজ্যের মধ্যে নাগাল্যান্ড বা মিজোরাম বা মণিপুরে কংগ্রেস লড়বে, এবং এবার তাদের সমর্থন অনেক বেশি জুটবে। অসমে জোট আছে, এবার সেই জোটে সম্ভবত তৃণমূলকে জায়গা দেওয়া হবে। সুস্মিতা দেব সম্ভবত তাঁর বাবা সন্তোষমোহন দেবের শিলচর আসন থেকে নির্বাচনে নামবেন। উত্তরপ্রদেশের বড় প্লেয়ারদের মধ্যে এসপি-কংগ্রেস জোট হলেও অঙ্কের হেরফের হবে না, কিন্তু সে জোটে বিএসপিও শামিল হলে আর যাই হোক গতবারের থেকে বেশ কিছু আসন কম পাবে বিজেপি। দিল্লিতে, পঞ্জাবে বা গুজরাতে যদি জোট হয়, তাহলে তার পাটিগণিত দারুণ ভালো, কারণ আপ ভোট কেটেছে কংগ্রেসের। কাজেই সে ভোট জুড়ে গেলে বিজেপির দিল্লিতে সাতে সাত, গুজরাতে ২৬-এ ২৬ হবে না। এই তিন রাজ্যে আপ-কংগ্রেস জোট হলে বিজেপি আসন হারাবে কেবল পাটিগণিতের হিসেবে। রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটকে লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির, কাজেই সেখানে জোট হল বা হল না, তা দিয়ে আলোচনার অবকাশ নেই। তেলঙ্গানা, এখনও বিআরএস-এর দিকে ঝুঁকে কিন্তু দ্বিতীয় জায়গায় বিজেপি নেই, উঠে এসেছে কংগ্রেস, কাজেই এখানেও জোট নেই কিন্তু বিজেপির ক্ষতি কেউ আটকাতে পারবে না। অন্ধ্রতেও জোটের কোনও জায়গা নেই, এখনও নেই। আপাতত ইন্ডিয়া জোটের কেউ অন্ধ্রতেও নেই, ওড়িশাতেও নেই। এই দুই রাজ্যে কিন্তু কংগ্রেস বাম জোট হতেই পারে, দু’ চারটে আসন এখানে বামেদের ছাড়া হতে পারে, কিন্তু সে জোটের না আছে পাটিগণিত, না আছে কেমিস্ট্রি। তামিলনাড়ুতে জোট আছে, ইন ফ্যাক্ট কেবলমাত্র জোটের জন্যই এই রাজ্য থেকে সিপিআই আর সিপিএম দুটো করে লোকসভা আসন জিতেছে, এখানে নতুন করে জোটের কিছু নেই। কেরলে জোট হবে না, ওখানে কংগ্রেস-সিপিএম লড়াই হবে, প্রচার হবে। ভোটের পাটিগণিতে কোনও লাভ তো নেইই, কেমিস্ট্রিতে ক্ষতি আছে তা নিয়ে আলোচনায় পরে আসছি। রইল বাকি হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড যেখানে কংগ্রেসই আছে, জোটের কোনও অস্তিত্ব নেই। এবার কাশ্মীর, সেখানে অঙ্ক আছে ভালো রকমের, কংগ্রেস, টিডিপি, ন্যাশনাল কনফারেন্স এক জায়গায় এলে বিজেপির অসুবিধে আছে, জোটের পাটিগণিতের জন্য নয়, জোটের রসায়নের জন্য এই কাশ্মীরে সম্ভবত সিপিএম জোটে থাকবে। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | খেলেগা ইন্ডিয়া, জিতেগা ভারত 

এবং বাংলায় সরাসরি জোট হলে তা কং-তৃণমূল জোট হবে, তিন দলের জোট হওয়া অসম্ভব। যদিও তৃণমূলের ৪৪-৪৬ শতাংশ ভোটের সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের ১৮-১৯ শতাংশ ভোট যোগ হলে অঙ্কের হিসেবে এক অপ্রতিরোধ্য জোট হবে, কিন্তু রাজনীতিতে সব সময় জোটের পাটিগণিত কাজ করে না, অঙ্কের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায় রসায়ন। আসুন সেই রসায়নের আলোচনাটাই করা যাক, কারণ আমার মতে এই জোটের পাটিগণিত নয়, কেমিস্ট্রিটাই বড় ব্যাপার বা আসল ব্যাপার। অঙ্ক আর রসায়নের বিষয়টা কীভাবে আলাদা বুঝে নিন। ধরুন কেরল, দুটো শিবির, কংগ্রেসের আর সিপিএম-এর, দু’ দলের মিলিত ভোট প্রায় ৮৫ শতাংশ, সিপিএম-এর ভোট ৪৫ শতাংশ। এবার যদি কং-সিপিএম জোট হয়, তাহলে সরকার বিরোধী ওই ৫৫ শতাংশ ভোটের সিংহভাগ পাবে কংগ্রেস, কিন্তু কেরলে যদি জোট হয়, কং-বাম জোট? তাহলে ওই ৫৫ শতাংশের এক বড় অংশ পাবেই বিজেপি, তাতে জোটের ক্ষতি। যেখানে বিজেপির একজন এমপিও নেই সেখানে বিজেপি একটা দুটো আসন জিতে যেতে পারে। কাজেই ওখানে কং-বাম জোট না হওয়াই ভালো। একই ব্যাপার বাংলায়, এখানে তৃণমূল-বাম জোট হলে বামেদের ভোটের ৬০-৭০ শতাংশ চলে যাবে বিজেপিতে। এখানে বামেরা আলাদা লড়লে তৃণমূল বা সরকার বিরোধী ভোট অনেকটা বামেদের দিকেও যাবে। হ্যাঁ, এইটাই জোটের রসায়ন, অনেক জায়গাতেই অঙ্ক কাজ করে না। কংগ্রেসের কথা বললাম না কেন? কারণ বাংলায় কংগ্রেস আছে মুর্শিদাবাদ আর মালদায়, সেখানে বরং তৃণমূল-কংগ্রেস জোট হলে জোটের লাভ। 

আসলে এই বিরোধী জোট এক মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করতে পেরেছে বিজেপির উপরে, মানে প্রি পোল অ্যালায়েন্স-এ সবাই মিলে ২৫০ আসন পেলে, এনডিএ তার কম পেলেই খেলা হবে। সেখানে রাষ্ট্রপতি প্রিপোল অ্যালায়েন্সে যাদের বেশি আসন তাদের ডাকতে বাধ্য, কিন্তু জোট না হয়ে যদি সবাই আলাদা আলাদা লড়াই করে, তাহলে কিন্তু ওই অঙ্কটা কাজে দেবে না। আর এর থেকেও বড় ব্যাপার হল সারা দেশের মানুষের কাছে বিজেপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো এক শক্তি, মানে বিজেপিকে এরা হারাতে পারে, বিজেপি এদের কাছে হেরে যেতে পারে এই ধারণাটা তৈরি হওয়াটা এক বড় ব্যাপার আর এই ইন্ডিয়া জোট ঠিক সেই কাজটাই করছে। এই মুহূর্তে বিরোধী জোট সেই কাজটা করে ফেলেছে, তারা একটা জোট তৈরি করেছে ৫টা রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে, আর এই নির্বাচনের তিনটেতেও বিজেপি হারলে ওই যে ধারণা, মোদিজির জয়রথকে থামানো যায় না, বিজেপিকে আটকানো যায় না, এই মিথগুলো ভেঙে যাবে। এটাই এই জোটের রসায়ন। বাংলার মানুষ মমতার পক্ষে গেলে, দিল্লির মানুষ আপ-কংগ্রেসের পক্ষে গেলে, বিহার, মহারাষ্ট্রের মানুষ মহাগঠবন্ধনের পক্ষে গেলে সারা দেশের চাকা ঘুরবে, সেখানে সবথেকে বড় দায় এবং দায়িত্ব কংগ্রেসের, তাদেরকে কর্নাটকের জয়কে ধরে রাখতে হবে, তাদেরকে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড় ধরে রাখতেই হবে, হিমাচলপ্রদেশ হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবে না, তাহলেই দেশের রাজনীতি বদলাবে। একটা সময়ে ধারণাটা ছিল, জিতেগা তো মোদিজি, এখন সেটা বদলে হয়েছে, না ভাই টক্কর হবে, লড়াই হবে, লিখে রাখুন কিছুদিন পরেই শুনবেন কাঁটে কা টক্কর, তারপরে কী হয় সেটা তো সময় জানাবে, কিন্তু এই যে ধারণা তৈরি হচ্ছে এটাই জোটের রসায়ন, তাই বলছি ইন্ডিয়া জোটের পাটিগণিত ততটা স্ট্রং নয়, কিন্তু কেমিস্ট্রি দারুণ ভালো।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Stadium Bulletin | ত্রিমুকুট জয়ের অপেক্ষায় মোহনবাগান
02:15
Video thumbnail
Kaustuv Ray | ফের নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন কৌস্তুভ রায়ের
03:26
Video thumbnail
Bomb Recovered | ভোটের আগে ফের মুর্শিদাবাদে বোমা উদ্ধার! অশান্তির আশঙ্কা বহরমপুর লোকসভায়
00:44
Video thumbnail
Howrah News | দীপ্সিতাকে কল্যাণের 'কুকথা'! হাওড়ায় তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ
02:12
Video thumbnail
Mamata Banerjee | আজ বীরনগর ও চাকদহে সভা তৃণমূলনেত্রীর
01:37
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar) | সাদা পদ্মের শ্রীবৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে ভিড় পর্যটকদের
02:15
Video thumbnail
Murshidabad | ভোটের প্রচারে অধীরকে ছোট মোদি, ছোট অমিত শাহ বলে কটাক্ষ নওশাদ সিদ্দিকীর
03:05
Video thumbnail
Dilip Ghosh | রাজভবনের ঘটনা নিয়ে TMCকে নিশানা দিলীপের, কী বললেন দেখুন ভিডিও তে
05:29
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | দেখে নিন আজ সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি
12:15
Video thumbnail
বাংলার ৪২ | বনগাঁতে কোন দল এগিয়ে?
08:02