নয়াদিল্লি: বিচারপতিদের যদি অবসরপ্রাপ্তির পর পুনর্বাসন-নিয়োগের দিকে পাখির চোখ থাকে, তাহলে দেশে কোনওদিনই নিরপেক্ষ বিচার হবে না। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি দীপক গুপ্তা এক অনুষ্ঠানে এই নির্মম সত্যটি বলেই ফেললেন। ‘বিচারবিভাগীয় নিয়োগ এবং সংস্কার’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় বলছিলেন শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন বিচারপতি গুপ্তা। ক্যাম্পেইন ফর জুডিসিয়াল অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যান্ড রিফর্মস (CJAR) আয়োজিত ওই আলোচনাসভায় স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য কলেজিয়াম গঠনের উপর বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তিনি।
প্রাক্তন বিচারপতি গুপ্তার মতে, অবসরের পরেই শাঁসাল সরকারি পদে পুনর্নিয়োগের রঙিন চশমা যতক্ষণ চোখে আঁটা থাকবে, ততক্ষণ বিচারের স্বাধীনতা খর্ব হবেই। নিরপেক্ষতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, অবসরের পর আর কোনও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত নয়। এ ধরনের সুবিধা দেওয়া হতে থাকলে, আমরা নিরপেক্ষ বিচার থেকে বঞ্চিত হব। বিচারপতিরা যদি ভেবে থাকেন তাঁরা অবসরের পরেও ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করার সুযোগ পাবেন, তাহলে তাঁদের কাছ থেকে সুবিচারের আশা করা যায় না, বলেন প্রাক্তন বিচারপতি।
আরও পড়ুন: Delhi Liquor Policy Case: সিবিআইয়ের তলবে এক সপ্তাহ সময় চাইলেন মনীশ সিসোদিয়া
কলেজিয়াম ব্যবস্থাকে কীভাবে উন্নত করা যায়, তা নিয়েও বলেন তিনি। তাঁর মতে, নিরপেক্ষ বিচারপতি হতে গেলে তাঁর সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মতো শিরদাঁড়া থাকার দরকার। যিনি বিনা ভয়ে দেশের সংবিধান রক্ষার কাজ করবেন। সংবিধানের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রেও বিচারপতিদের মতের তারতম্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। তাঁর ভাষায়, যদি সুপ্রিম কোর্টে উদারপন্থী বিচারপতিতে ভরে যায়, তাহলে বুঝতে সেটা দেশের পক্ষে দুর্দিন।
প্রাক্তন বিচারপতি আরও বলেন, যদি হাইকোর্টে সঠিক বিচারপতিকে নিয়োগ না করা হয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট উন্নত বিচারপতি পাবে কী করে? প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বেশ কয়েকজনকে অবসরের পর পুনর্বাসন-নিয়োগ নিয়ে সম্প্রতি বেশ চর্চা হয়েছে। যেমন, এই সারিতে দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ (Former CJI Ranjan Gogoi) এবং বিচারপতি অশোক ভূষণের (Justice Ashok Bhushan) পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন বিচারপতি আবদুল নাজির (Justice Abdul Nazeer)। যাঁকে সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল (Governor of Andhra Pradesh) নিয়োগ করেছে সরকার। এঁরা সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার (Ram Janmabhoomi-Babri Masjid case) ‘ঐতিহাসিক’ সেই রায়ের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের তিন সদস্য। আরও একজন ছিলেন, যিনি তৎকালীন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বর্তমানে দেশের প্রধান বিচারপতি।