Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeআজকেAajke | বোমা না বাজি?  

Aajke | বোমা না বাজি?  

Follow Us :

এ বাংলায় কিছু মানুষ মাঝেমধ্যেই বলেন, আমরা চোখে চোখ রেখে কথা বলি। সেই চোখে চোখ রাখনেওলারা গতকাল চিল চিৎকার করে জানিয়েছে বোমা কারখানার কথা। সদ্য খবরটা এসেছে, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা থেকে। সেখানে সাহাড়া নামের এক গ্রামে বিস্ফোরণ হয়েছে, বড় বিস্ফোরণ, কিছু মানুষ মারা গিয়েছেন। এটাই প্রাথমিক রিপোর্ট। আমরা আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছি, তিনিও ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন, আমরা জানার চেষ্টা করছি ঠিক কী হয়েছে। হঠাৎ চোখে চোখ রাখনেওয়ালা চ্যানেল জানিয়ে দিল বোমার কারখানায় বিস্ফোরণ, ২২ জন মৃত। ব্রেকিং নিউজের ঘনঘটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিউজিক এবং অ্যাঙ্কারের চিৎকার। বোমা কারখানায় বিস্ফোরণ, মৃত ৮। ব্যস, অন্য চ্যানেলেও কপি পেস্ট। কিছুক্ষণের মধ্যেই তৃণমূল সরকারের পদত্যাগের দাবি ইত্যাদি। 

সেই কবে হেমন্ত বসুকে কিছু দুষ্কৃতী খুন করেছিল প্রকাশ্য দিবালোকে। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ছিলেন দার্জিলিংয়ে, ওনার স্ত্রী মায়া রায়ের সঙ্গে, দলাই লামা এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন লুই জুবিলি স্যানেটোরিয়ামে, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, এর পেছনে আছে সিপিএম। কলকাতায় সিপিএম নেতা প্রমোদ দাশগুপ্ত চটজলদি বলেছিলেন, উনি কি কুকুর নাকি যে গন্ধ শুঁকেই বলে দিলেন? এ নিয়ে বিস্তর হইচই হয়েছিল। এই চটজলদি সিদ্ধান্তে আসার যে কোনও ঘটনাতেই ওই গল্প মনে পড়ে যায়। ঘটনা ঘটলে খবর হবে, ঘটনা ঘটলে শাসকদল, সরকারের দিকে আঙুল উঠবে, এ তো স্বাভাবিক। কিন্তু সাত তাড়াতাড়ি ঘটনাটাকেই নিজের মতো বানিয়ে নেওয়ার কী মানে হয়? নাকি চোখে চোখ রাখনেওয়ালারাই সত্যি কথা বলছিলেন। আজ এটাই আমাদের বিষয় আজকে, সাহাড়ায় বিস্ফোরণ।

আরও পড়ুন: Aajke | চাকরি ভ্যানিশ?   

চোখে চোখ রাখনেওয়ালাদের বোমার গল্প বা সর্বহারার মুখপত্র গণশক্তির রিপোর্টিংয়ের কথা বাদই দিলাম, কিন্তু এটা তো খুব পরিষ্কার যে ওখানে একটা অবৈধ বাজির কারখানা চলছিল। যিনি চালাচ্ছিলেন তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের এতটাই দহরম মহরম ছিল যে সেই স্থানীয় পঞ্চায়েত কারখানায় যাওয়ার রাস্তাও তৈরি করে দেয়। এর আগে এই একই মালিকের বাজি কারখানায় তিনবার দুর্ঘটনা ঘটেছে, মানুষ মারাও গিয়েছেন, উনি অ্যারেস্টও হয়েছিলেন, জামিন পেয়েছেন। এক্ষেত্রে সেই বাজি কারখানার লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা, বাতিল হয়নি কেন? স্থানীয় প্রশাসন কী করছিল? স্থানীয় পুলিশ কী করছিল? একটা অবৈধ কারখানায় বাজি তৈরি হচ্ছে, সেই গ্রামে দিদিকে বলো থেকে দুয়ারে সরকার সব হয়েছে, পুলিশ আছে, প্রশাসনের লোকজন আছেন, এখানেও নিশ্চই জনজোয়ার উঠছে বা উঠবে, কেউ খবর রাখলেন না, তা তো হয় না, তাহলে? এরকম হাজারো অবৈধ ব্যবসা চলতে থাকে ততদিন যতদিন না মানুষ মারা যায়। কখনও সেটা বাজি কারখানা, কখনও চোলাই মদ, কখনও পাইপ গান কখনও বা সেটা সত্যিই বোমার কারখানা। ঘটনা ঘটার আগে কেউ খবর পায় না। কেউ খবর পেল না যে কোটি কোটি টাকা চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে তোলা হচ্ছে। কেউ খবর পেল না কোটি কোটি টাকা গরিব মানুষের কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে চিট ফান্ডের এজেন্টরা। যখন সবটা ধসে পড়ে, যখন মানুষ মারা যায়, যখন দুর্নীতি পাহাড়প্রমাণ হয়ে ওঠে তখনই সরকারের টনক নড়ে। এটাই রেওয়াজ হয়ে উঠেছে। ঠিক সেটাই দেখলাম এবারের ঘটনাতেও। বাজি কারখানার মালিক তৃণমূল ঘনিষ্ঠ, বাজি কারখানা অবৈধ, বাজি কারখানায় এর আগে দুর্ঘটনা ঘটেছে, মালিক জেলে গেছে, অথচ পুলিশ-প্রশাসনের চোখের সামনে বারুদের স্তূপের ওপর বসে আছে গ্রাম। সেখানে বাজি তৈরি হয়? হ্যাঁ আমাদের খবর সাধারণভাবে মানুষ ওটাকে বাজি কারখানা বলেই জানে। ৮ জন মৃতদের তালিকায় ৫ জন মহিলা, মহিলারা বোমা বাঁধতে যাননি, বাজিই বানাতে গিয়েছিলেন, খানিক রোজগারের জন্য, আপাতত লাশ কাটা ঘরে। কিন্তু প্রশ্ন তো থাকবেই যে অবৈধ বাজি কারখানা চলতে পারলে বোমার কারখানাই যে আরও অন্য জায়গায় চলছে না, সেটাই বা কী করে বলা যাবে? তারপর একদিন সেখানেও বিস্ফোরণ হবে, মানুষ মারা যাবে, জানা যাবে সেটা ছিল বাজি নয় বোমার কারখানা। এগুলোর দায় কি রাজ্য সরকার এড়াতে পারে? হ্যাঁ এই প্রশ্নই আমরা মানুষের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। বেশ তো বোমা নয়, এটা বাজির কারখানাই ছিল, কিন্তু এই অবৈধ বাজি কারখানায় মৃত্যুর দায় কি রাজ্য সরকারেরই নয়? 

পুলিশ প্রশাসন যদি তাদের কাজের ৬০-৭০ শতাংশও মন দিয়ে করে, সৎভাবে করে,তাহলে এমনটা হওয়ার কোনও কারণ নেই। ছবিটা এই রাজ্যের তাও তো নয়। গুজরাত নির্বাচনের ঠিক আগে ব্রিজ ভেঙে ১৩৫ জন মানুষ মারা গেলেন, বিহারে এই ক’দিন আগে বিষ মদ খেয়ে ১৩ জন, কেরলে গত ৭ মে নৌকাডুবি হয়ে ২২ জন মানুষ মারা গেলেন। নৌকাতে অত মানুষ নেওয়ার কথাই নয়। এই বাংলাতেও বাজি কারখানায় আগেও বিস্ফোরণ হয়েছে, বজবজের কাছে নুঙ্গিতে হয়েছে, এরকম দুর্ঘটনা ঘটে যা স্রেফ পুলিশ, প্রশাসনের চূড়ান্ত গাফিলতি। আর এই গাফিলতির পেছনে অবশ্যই থাকে সরকারের ভূমিকা। স্বচ্ছ প্রশাসনের জন্য চাই এক পরিচ্ছন্ন সরকার, মানুষের সরকার, মানুষের সঙ্গে যোগ থাকলেই এমন সব খবর সরকার, প্রশাসনের কাছে এসেই যাবে, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, আর সরকার প্রশাসন জনবিচ্ছিন্ন হলে এমন ঘটনা ঘটবে বারবার।

 

RELATED ARTICLES

Most Popular