দেবাশিস দাসগুপ্ত:
লোকসভা নির্বাচনের কথা ভেবে একেবারে ভোটমুখী বাজেট (WB Budget 2024) পেশ করল তৃণমূল সরকার। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করলেন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya)। এক কথায় এটা হল আমজনতাকে খুশি রাখার বাজেট। এবারের রাজ্য বাজেটে সব চেয়ে বড় ঘোষণা হল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে ভাতা বৃদ্ধি। সাধারণ ক্ষেত্রে এই ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে হাজার টাকা করা হল। আর এসসি, এসটি মহিলাদের ভাতা হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করা হল। আরও একটি ঘোষণা হল এদিন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের (Lakshmir Bhandar) প্রাপকরা ৬০ বছর বয়স হলে সরাসরি বার্ধক্য ভাতার আওতায় চলে আসবেন।
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আরও ৪ শতাংশ ডিএ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী মে মাস থেকে তা কার্যকরী হবে। এর ফলে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএর ফারাক কমে ৩২ শতাংশ হল। তবে এতে খুশি নয় সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনকারী সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। বাজেটে সিভিক, গ্রিন এবং ভিলেজ পুলিশদের ভাতা হাজার টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বঞ্চিত ২১ লক্ষ উপভোক্তার টাকা ২১ ফেব্রুয়ারি অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেড রোডের ধরনা মঞ্চ থেকে আগেই ঘোষণা করেছিলেন। সেই খাতে ৩৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ্ করা হয়েছে বাজে়টে। সেদিন মমতা বলেছিলেন, আবাস যোজনায় বঞ্চিতদের জন্য কী করব, সেটা পরে ঘোষণা করব। বৃহস্পতিবার বা়জেট প্রস্তাবে বলা হল, আগামী এক মাসের মধ্যে যদি ১১ লক্ষ অনুমোদিত পরিবার টাকা না পায়, তবে রাজ্য সরকার তাদের তহবিল থেকে সেই টাকা দিয়ে দেবে। চন্দ্রিমার পেশ করা বাজেটে আরও বেশ কিছু প্রকল্পে ভাতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজ্য সরকারি কর্মীচারীদের ৪ শতাংশ ডিএ বাড়ল
বিভিন্ন প্রকল্পে ভাতার টাকার পরিমাণ বৃদ্ধির কথা বলা হলেও সেই টাকা কোথা থেকে আসবে, তার কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এই সরকার চোরেদের সরকার। দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছে সরকার। সন্দেশখালিতে গণজাগরণ ঘটেছে দুর্নীতিবাজ, অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে ভয়ে রয়েছে তৃণমূল সরকার। তাই ভোটের আগে বাজেটে সকলকেই কিছু না কিছু পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা আসবে কোথা থেকে, তার কোনও দিশা নেই বাজেটে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষের উপর কোনও করের বোঝা চাপাইনি। এই বাজেটে সবাই খুশি হবে। এই বাজেট মানুষকে ভোরের আলো দেখাবে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, এই বাজটে জনমুখী, গরিব মানুষকে দিশা দেখাবে। বিশেষ করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভাতা বৃদ্ধিকে সরকারের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূল নেতা। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করেন। এই প্রকল্প ভোটে তৃণমূলকে ভালো ডিভিডেন্ড দেয়। পরবর্তীকালে পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটেও এই প্রকল্পের মাধ্যমে তৃণমূল বিশেষ লাভবান হয়। মহিলারা ঢেলে ভোট দেন তৃমমূলকে। প্রতিটি সভা, সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রীকে বারবার বলতে শোনা যায়, কোথায় আমার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মায়েরা, কোথায় আমার রূপশ্রী, কন্যাশ্রীরা।
অন্য খবর দেখুন