কলকাতা: তৃণমূল ছাড়লেন প্রবীণ তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় (Tapas Roy)। দলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ এবং অভিমান উগরে দিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে ২৫ বছরের সম্পর্ক ছেদ করলেন তাপস। বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেই তিনি বিধানসভা চলে যান বিধায়ক পদে ইস্তফা দিতে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং উত্তর কলকাতার আরও এক বিদ্রোহী নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) তাঁর বউবাজারের বাড়িতে তাপসকে বোঝাতে গিয়েছিলেন। তাঁদের তাপস জানিয়ে দেন, এই দলে আর থাকা সম্ভব নয়। লোকসভা ভোটের (2024 Lok Sabha Election) প্রবীণ এই তৃণমূল বিধায়কের দলের কাছে বড় ধাক্কা। দুুপুরে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বিধায়ক পদে ইস্তফাপত্র জমা দেন তাপস। উপ-মুখ্য সচেতক সহ একাধিক সরকারি কমিটির চেয়ারম্যান এবং সদস্যপদও তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। ছাড়লেন সরকারি গাড়ি এবং নিরাপত্তা।
সোমবারই সকালে বিধায়কের মান ভাঙাতে তাঁর বাড়িতে যায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। কিন্তু তাতে খুব বেশি লাভ হয়নি। অভিমানী তাপস জানিয়ে দিলেন, তিনি আর তৃণমূলের থাকবেন না। দলের বিরুদ্ধে প্রবীণ তাপসের মূল অভিযোগ উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। তাঁর অভিযোগ, সুদীপের সঙ্গে বিজেপির ভালো যোগাযোগ রয়েছে। তাঁর পরামর্শেই গত ১২ জানুয়ারি তাপসের বউবাজারের বাড়িতে ইডি হানা হয়। তাপস সোমবার বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, আমার বাড়িতে ইডি অভিযান নিয়ে আজ ৫২ দিন পরেও দলনেত্রী কিংবা অন্য কেউ একটি কথা বললেন না। অথচ দলের কারও কারও বাড়িতে অভিযান হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী তার বিশদ বিবরণ দিতে ভোলেন না সমাবেশে কিংবা বিধানসভায়। নাম না করে তিনি টার্গেট করেন কলকাতার মেয়র এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে। ববির বাড়িতে ইডি হানার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার মুখ খোলেন দলের সভায়, এমনকী বিধানসভাতেও। সম্প্রতি সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতা। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওরা শাহজাহানকে টার্গেট করেছিল প্রথমে। এতে তাপসের অভিমান আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী শাহজাহানের কথা বিধানসভায় উল্লেখ করলেন। আর আমার বাড়িতে ইডি হানা নিয়ে একটি কথা বললেন না। আমার পরিবার আছে, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা রয়েছে। কেন আমার বাড়িতে এই হানা, আজ পর্যন্ত জানলাম না। ক্ষুব্ধ তাপস দলের মধ্যে সীমাহীন দুর্নীতি চলছে বলেও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এত দুর্নীত, সন্দেশখালির ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছে। আর এই দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যায় না। সব মিলিয়ে আমি আহত, অপমানিত, ক্ষুব্ধ। তাই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম। তিনি বলেন, ইডি অভিযানের দিনই তাঁর পিছনে দলেরই কেউ-কেউ রীতিমতো আনন্দ-উল্লাস করেন। দলের ৪০-৫০ জন যাঁরা আমায় ভালোবাসেন, তারাই বলেছেন আমার পিছনে দলের কেউ কেউ যখন রেড চলছে উল্লাস করেছেন। যদিও অনেকেই প্রতিবাদ করেছেন।
আরও পড়ুন: ছাপ্পা ভোট কী, রাজনৈতিক দলগুলির কাছে জানতে চাইল কমিশন
গত কয়েকমাস ধরেই সুদীপের বিরুদ্ধে তাপস নানা ক্ষোভ জানিয়ে আসছিলেন। দলের পুরনো সৈনিক তাপসের সঙ্গে উত্তর কলকাতার সাংসদ এবং তৃণমূল জেলা সভাপতি সুদীপের বিরোধ বহু পুরনো। তাপসের অভিযোগ, সুদীপের জন্যই তাঁকে দলের মধ্যে বারবার হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। তাঁর থেকে অনেক কম যোগ্য নেতা দলে এবং সরকারে অনেক উচ্চ পদ পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমি দলের থেকে এক পয়সারও সুযোগ নিইনি।
অন্য খবর দেখুন: