Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeফিচারমুখ যে ঢাকব, শিশুপাঠ্য থাকবে তো?

মুখ যে ঢাকব, শিশুপাঠ্য থাকবে তো?

Follow Us :

সকাল শুরু হত মদনমোহন তর্কালঙ্কার দিয়ে। অবশ্য বর্ণপরিচয় হওয়ার পর সবকিছু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নামে চালিয়ে দেওয়ার বদ অভ্যেস শুরু থেকেই ছিল‌। “মানে না নয়ন যেন ফিরে ফিরে চায়‌”। না মেনে অবশ্য যাবই বা কতদূর‌! আধোআধো কথা, “শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে” অবধি তো তাও চলে গেল। কিন্তু তর্কালঙ্কার মহাশয়ের শুধু লঙ্কাটুকুই মনে থাকত। তর্ক তখনও শিখিনি‌‌। দাঁত গজানো আর দাঁত পড়ার মাঝে তখন পেরিয়ে এসেছি অনেকটাই পথ। সহজপাঠ, হাসিখুশি, আবোল তাবোলের রাস্তা ধরে সোজা রাজকাহিনী, ক্ষীরের পুতুল।

ভাবনার বহর কত! তালগাছ কেন একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে? ও কি খুব একা? উপহার মানেই তখন বই‌। স্কুলের অফ পিরিয়ডগুলোয় ক্লাস শান্ত রাখার জন্য যখন গল্প বলতে বলতেন দিদিমণিরা, তখন বুঝেছিলাম বইয়ের মাহাত্ম্য। টিভিতে তখন জোরকদমে চলছে ঠাকুমার ঝুলি, পঞ্চতন্ত্র। আমার তো বেশ ‘কলার তোলা’ ব্যাপার। ধুস! নতুন কী আর দেখাচ্ছে! এসব তো আমার আগেই জানা। আগেই পড়া। রাতে এসব পড়তে পড়তেই তো চোখ বন্ধ হয়ে যেত আস্তে আস্তে‌‌‌। মাঝের বছরগুলো কীভাবে পরপর যেন পুরনো খবরের কাগজের মতো ঠোঙা হয়ে গেল। হারিয়ে গেল দুয়োরানি, সুয়োরানি, সাদা বা কালো ভূতগুলো।  মৌচাক, শুকতারা, কিশোর ভারতীগুলো বাড়িতে রইল। আর আমি পেস্তার বরফি নিয়ে চলে এলাম শহরে‌। দৈর্ঘ্য প্রস্থে বাড়লাম। মগজে রয়ে গেল ভূতের গল্প, ডাকাতের গল্প, রূপকথার গল্প।

হিরে, মুক্ত, মাণিকের ছটা। ছোট থেকে বড় হলাম‌‌। আরও কত শিশু এল। তারাও বেড়ে গেল তড়তড় করে। আমার সময়টা এখন ফ্ল্যাশব্যাক‌। ওদের দিনলিপিতে এখন শুধুই ইউটিউব‌। খাওয়ার জন্য ঘ্যানঘ্যান করে না। খোক্ষসকে ভয় পায় না‌, পক্ষ্মীরাজের স্বপ্ন দেখে না। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকে ফোনের দিকে। যেন এ জগতে তাদের দেহটুকুই‌। মনটা ইউটিউবের ওপারে।

নিজের ছোটবেলার কথা বললেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের

 

কথা হল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এই মুহূর্তের জনপ্রিয়তম শিশুসাহিত্যিকের বক্তব্য, এটাই দস্তুর। কিচ্ছু করার নেই। আমরা তো পিছিয়ে যাচ্ছি না। আমরা এগিয়েই যাচ্ছি। এই যে একটা সম্মুখগতি, তার ফলটাই হল অনেক জিনিস পাল্টে যাবে। একসময় তো তালপাতায় লেখা হত। সেই কালটা আমরা ফেলে এসেছি। কিন্তু তার জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে তো লাভ নেই। অনেক বাবা মা এসে তাঁর কাছে বলেন, বাচ্চারা বই পড়ছে না। আবার অনেক শিশুই আছে, যারা বইও যেমন পড়ে, তেমন ইউটিউবে কমিকসও দেখে। অনলাইনে বই বিক্রি হচ্ছে। লেখকেরা যথেষ্ট পরিমাণে রয়্যালটি পাচ্ছেন। নিজের ছোটবেলার কথাও বললেন শীর্ষেন্দুবাবু। সেই সময় মফসসলের অধিকাংশ বাড়িতেই বুকশেলফ বিষয়টাই ছিল না। তাই এটা মনে করার কোনও কারণ নেই যে বাঙালি আগে প্রচুর বই পড়ত। তা একেবারেই নয়‌। অধিকাংশ বাড়িতে বইয়ের চর্চা নেই, সঞ্চয় নেই। তাঁর বইয়ের খিদে মেটানোর মতো দোকানও তখন মফসসলে ছিল না। তারপর বইমেলার কল্যাণে বিক্রি বাড়ল। এই মুহূর্তে কোনও শিশু বই পড়ে, কেউ পড়ে না‌। তবে কোনও বাবা-মাই চান না,  তাঁদের বাচ্চা বই না পড়ে ইউটিউব দেখুক। তাল মেলানো ছাড়া কিছু করার নেই‌।

শিশুসাহিত্য কে কি আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা যায়?

একাধারে স্কুল কলেজে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত সাহিত্যিক বিজিত ঘোষ।  সময়টা আক্ষরিকভাবেই ৩৩ বছর।  তিনি হতাশ নন। তবে কিছু আক্ষেপ তো আছে। জানালেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরে আবোলতাবোল পড়ানো হচ্ছে। ফোন দেখে ক্লাস করছে পড়ুয়ারা‌। বইটুকুও নেই। সুকুমার রায়কে তারা দয়া করে মোবাইলে স্থান দিয়েছে, তাও পাঠ্য হয়েছে বলে। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, শিশুসাহিত্য কে কি আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা যায়? লেখক বিজিত ঘোষ এক কথায় জানিয়েছিলেন, না। কারণ সময় পাল্টে গেছে। তবে অন্য মোড়কে অন্যভাবে একটা মাঝামাঝি কিছু একটা যেখানে হ্যারি পটারের ঝাঁ চকচকে প্রযুক্তিও থাকবে না আবার রূপকথার অবাস্তবতাও থাকবে না। তাহলে হয়তো শিশুদের একপ্রকার গিলিয়ে শিশুসাহিত্যের কাঠামোটা দাঁড় করানো যাবে।

অধীর বিশ্বাস। দীর্ঘকাল শিশু সাহিত্যের চর্চার সঙ্গে যুক্ত। তাঁরও মত, বাবা-মা না চাইলে শিশুমনের বিকাশ সম্ভব নয়। ওরা সেই প্রযুক্তির টানেই এগোবে। আসলে গতিকে থামানো যায় না, উচিতও না। যেটা করা যায়, তা হল ডিজিটাল জগৎ ব্যতিরেকে যদি বাড়ির পরিবেশটা বদলানো যায়। ওরা শান্ত থাকে আর আমরা আমাদের কাজ করতে পারি। তাই প্রশ্রয় আমরাও দিই। কিন্তু যে কোনও মাধ্যমেরই নিয়ন্ত্রণ খুব জরুরি। সেটা যতদিন না হবে, ততদিন শিশুমনের বিকাশ হবে না।

বাবা চলে যাচ্ছেন বিভুঁইয়ে। কবি শিশুটির অভিব্যক্তি বোঝাতে গিয়ে লিখছেন, “সে কহিল বিষণ্ন-নয়ন  ম্লান মুখে যেতে আমি দিব না তোমায়।”  কিন্তু একালের শিশুটির চোখে আনন্দ বা দুঃখ- কোনওটাই নেই। বরং তার চোখমুখের ভাব দেখে মনে হয়, এবার ভিডিয়ো গেম নিয়ে বসা যাবে। সন্তানরা ডিজিটাল জগতে অভ্যস্ত। এখন বন্ধুবিচ্ছেদের আফসোস নেই।

ইউটিউবের থেকেও ভয়াবহ অনলাইন গেম

এখন ঘরে তিনজন থাকলে তিনজনেরই কানে হেডফোন। ইউটিউবের থেকেও ভয়াবহ অনলাইন গেম। দু একটা ‘মিম’ চোখে পড়ে ইদানীং। আগে মা মাঠ থেকে শিশুকে টেনে আনতেন। এখন ঠেলে মাঠে পাঠাচ্ছেন। কঠিন সত্যি‌। অনলাইন গেমের ধূসর জগৎটা মাকড়শার জালের থেকেও নৃশংস। অদ্ভুত একটা প্রবণতা তৈরি হচ্ছে শিশুদের মধ্যে। ‘মুখে তার হাসি নাই।’ গুলি-বন্দুকের সঙ্গে বসবাস। ওপারে কাউকে একটা মারার প্রবণতা, জেতার প্রবণতা, হাসির প্রবণতা। কেশবতী কন্যার চুল বেয়ে রাজকুমারের ওঠাকে শিশুমন অবাস্তব ভাবত‌। কিন্তু এখন  গেমের ওপারের জগৎটাই তাদের বাস্তব। বাকিটা সত্যি হলেও গল্প।  আমাদের আগের প্রজন্ম এই তফাতটা আরও ভাল বুঝতে পারেন। প্রথমে দাদুরা নাতি-নাতনিদের গল্পই শোনাতে চাইতেন। তারপর তাঁরা দেখলেন বাচ্চাগুলো ইউটিউব দেখে বেশি হাসে‌‌। অত এব শিশুদের হাসির খাতিরে তাঁরা বৃদ্ধ হলেন। আবার নিজেই শিখে নিলেন ডিজিটাল দুনিয়ার মাহাত্ম্য। আমে দুধে মিশে গেল আর আঁটি হয়ে গড়াগড়ি খেল বই।

জীবনস্মৃতির কটা লাইন মনে পড়ল। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, “স্মৃতির পটে জীবনের ছবি কে আঁকিয়া যায় জানি না। কিন্তু যেই আঁকুক সে ছবিই আঁকে। অর্থাৎ যাহা কিছু ঘটিতেছে, তাহার অবিকল নকল রাখিবার জন্য সে তুলি হাতে বসিয়া নাই। সে আপনার অভিরুচি-অনুসারে কত কী বাদ দেয়, কত কী রাখে। কত বড়কে ছোট করে, ছোটকে বড় করিয়া তোলে। সে আগের জিনিসকে পাছে ও পাছের জিনিসকে আগে সাজাইতে কিছুমাত্র দ্বিধা করে না। বস্তুত তাহার কাজই ছবি আঁকা, ইতিহাস লেখা নয়।”

 কেমন জানি মনে হয়, কদিন পরে হয়তো সবটাই ইতিহাসই হয়ে যাবে। আর মুখ ঢাকার জন্য শিশুপাঠ্যও থাকবে না।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলার ৪২ | মেদিনীপুরে কোন দল এগিয়ে?
06:38
Video thumbnail
আজকে (Aajke) | দেশের আইন কানুনের উপর এতটুকুও আস্থা নেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা বিজেপি নেতাদের
09:14
Video thumbnail
চতুর্থ স্তম্ভ | Fourth Pillar | এই নির্বাচনের সময়েই দাবি তুলুন, আমাদের মৌলিক অধিকার ফেরত পেতে চাই
12:29
Video thumbnail
Politics | পলিটিক্স (01 May, 2024)
23:25
Video thumbnail
Beyond Politics | রোবট ঘুরছে আরডিএক্স বেরোচ্ছে!
11:47
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | অপসারণে অভিমানী কুণাল, আমাকে 'অগ্নিপরীক্ষা' দিতে হবে?
43:49
Video thumbnail
Stadium Bulletin | সব মিথ্যা!! ঋদ্ধিকে ওপেন চ্যালেঞ্জ বোরিয়ার
55:39
Video thumbnail
নারদ নারদ | সিবিআই-এর কাছে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ স্থানীয়দের
20:48
Video thumbnail
Sera 10 | আমি তৃণমূলে ছিলাম, আছি, তৃণমূলেই থাকার চেষ্টা করব: কুণাল
15:56
Video thumbnail
Jelar Saradin | দেখে নিন জেলার সারাদিনের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি...
10:41