কলকাতা: কথায় বলে রহস্যে মোড়া পৃথিবী (Earth)। সত্যিই, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে গেলে নানা প্রশ্ন জাগতে পারে, সেই সব জায়গার সঙ্গে মিশে আছে নানা অলৌকিক কাহিনীও। যার কোনও ব্যাখ্যা বিজ্ঞানও দিতে পারেনি। তেমনি একটি জায়গা হল মেক্সিকোর (Mexico) এক রহস্যময় দ্বীপ (Island)। জলরাশির মাঝে সবুজে ঘেরা একটি দ্বীপ। দূর থেকে দেখলে চোখ ভরে আসে তার সবুজ বাহারে। অথচ এই দ্বীপে পা রাখলেই শিউরে উঠতে হয়। কারণ, এই দ্বীপের প্রতিটা গাছ থেকেই যেন ঝুলে রয়েছে একাধিক শিশু! কেউ মুণ্ডহীন, কারও হাত-পা কাটা, কারও আবার সারা শরীর যেন কেউ ছিঁড়ে নিয়েছে। যতদূর চোখ যাবে এই দৃশ্যই চোখে পড়বে। দ্বীপে প্রবেশ করলে অবশ্য ভুল ভাঙবে। ওগুলি মানুষের শিশু নয়, ওগুলো আসলে পুতুল। সব গাছ থেকেই ঝুলছে ছোট-বড় এমন নানা চেহারার পুতুল। কিন্তু, এই নির্জন দ্বীপে কোথা থেকে এল এত পুতুল? কেই বা গাছে সেগুলো ঝুলিয়ে দিল? নানারকম প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরতে থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এর ইতিহাস।
মেক্সিকো সিটির দক্ষিণে এই দ্বীপের নাম ‘দ্য আইল্যান্ড অব ডলস’। সময়টা বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। পরিবার-পরিজন ত্যাগ করে জনমানবশূন্য এই দ্বীপে এক সময় বসবাস করতে শুরু করেন ডন জুলিয়ান সান্তানা বরেরা নামে এক ব্যক্তি। কেউ বলত তিনি সন্ন্যাসী, কেউ আবার বলত তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। জানা যায়, এই দ্বীপে বসবাস করতে শুরু করার কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি নাকি দ্বীপে ঝোপ-জঙ্গলে ঢাকা একটি খাল থেকে এক বাচ্চা মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। জুলিয়ানের দাবি, পাশের একটি হ্রদে মেয়েটি ডুবে গিয়েছিল। তারপর তার শরীর ভেসে আসে এই নালায়।
আরও পড়ুন:এই ৫ গাছ আপনাকে পথের ভিখারি বানিয়ে দেবে, ভুলেও এদের বাড়িতে রাখবেন না
তারপর থেকেই নাকি জুলিয়ান কিশোরী কণ্ঠের আর্তনাদ শুনতে পেতেন।, “আমি আমার পুতুল চাই।” সেই আর্তনাদ অনুসরণ করে ডন জুলিয়ান এগিয়ে গেলে একটি পুতুল খুঁজে পান। বাচ্চা মেয়েটির আত্মাকে শান্ত করার একটা উপায় বার করেন তিনি। খাল থেকে পুতুলটি তুলে গাছে ঝুলিয়ে দেন আর নিজেকে ওই দ্বীপের রক্ষাকর্তা ভেবে বসেন। এরপর থেকে নাকি ওই দ্বীপ এবং আশপাশে এলাকায় প্রায়ই পুতুল খুঁজে পেতেন জুলিয়ান। সেই পুতুল ঝুলিয়ে দিতেন গাছে। পুতুলগুলির বেশিরভাগই ছিল ভাঙাচোরা। তাঁর নাকি বিশ্বাস ছিল যে এটি মন্দ আত্মার কাছ থেকে তাঁকে রক্ষা করবে। কিন্তু সেই পুতুলগুলির কোনও যত্ন নেওয়া হতো না।
২০০১ সালে ডন জুলিয়ানের মৃত্যুও হয় রহস্যজনক ভাবে। যে নালায় বাচ্চা মেয়েটির মৃতদেহ দেখার দাবি করেছিলেন তিনি, ঠিক সেখানেই ডুবে মারা যান জুলিয়ান। জীবিত থাকাকালীন ডনের আচরণ এবং রহস্যময় দ্বীপের গল্প লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। দ্বীপে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অনেক পর্যটক আজও ওই দ্বীপে গেলে মৃত কিশোরীর জন্য একটি পুতুল নিয়ে যান। সেগুলিই আবার ধীরে ধীরে ভয়ানক রূপ নেয়। দ্বীপে ভৌতিক কোনও ঘটনার কথা অবশ্য জানা যায়নি। তবে দ্বীপে পা রাখামাত্র যে এক ধরনের নেতিবাচক অনুভূতি হয় তা এক কথায় স্বীকার করে নিয়েছেন পর্যটকরা।