কলকাতা: আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় পুলিশের হেফাজতে অশোক সিংয়ের মৃত্যুতে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই বলে ময়নাতদন্তে জানানো হল। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, অশোকের ব্রেন টিউমার ছিল। হঠাৎই সেই টিউমার ফেটে যায়। সম্ভবত সেটি ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ছিল। হয়ত তার চিকিৎসাও চলছিল। এছাড়া অশোকের শরীরে অণ্ডকোষের নীচে একাধিক আলসার ছিল। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, তাঁর ত্বক ও নখ ছিল কালচে। সেটাও ক্যান্সারের কারণে হতে পারে। সেই কারণে বায়োপসি করা হবে। শরীরে বাহ্যিক কোনও আঘাত ছিল না। চিকিৎসকরা বলছেন, এধরনের রোগীর ক্ষেত্রে হঠাৎই নাটকীয় ভাবে মৃত্যু হতে পারে। সব মিলিয়ে ময়না তদন্তের রিপোর্টে অশোকের কোমর্বিডিটির কথাই উঠে এসেছে।
বিজেপি থানায় পুলিশের অত্যাচারের কারণেই অশোকের মৃত্যু হয়েছে বলে যে অভিযোগ তুলেছে, ময়না তদন্তের রিপোর্ট তার সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলছে। অশোকের পরিবার এবং বিজেপির অভিযোগ, চোরাই মোবাইল ফোন কেনার ব্যাপারে অশোকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ এসেছিল। তার ভিত্তিতেই বুধবার সন্ধ্যায় অশোককে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ডেকে পাঠানো হয়। সেখানেই তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়. কয়েকজন আত্মীয় থানায় এসে অশোককে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর মাথা থেকেও রক্ত পড়ছিল। পরে মেডিক্যাল কোলেকজে নিয়ে যাওয়া হলে অশোককে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। বিজেপি ও পরিবার এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করে। একই সঙ্গে কোনও কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালে ময়না তদন্ত করতে হবে বলে দাবি তোলা হয় তাঁদের তরফে। বিষয়টি নিয়ে বিজেপি কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও করে।
আরও পড়ুন: আমহার্স্ট স্ট্রিট কাণ্ডে পুলিশ নির্দোষ, দাবি কুণালের
এদিন অবশ্য রাজ্যের সকারী হাসপাতালেই ময়নাতদন্ত হয় অশোকের। তার ভিডিওগ্রাফিও করা হয়েছে। পুলিশ আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, সন্ধ্যা ৫ টা ৪৩ মিনিটে অশোক থানায় ঢোকেন। ৫ টা ৪৫ মিনিটে বেরিয়ে যান। এক মিনিট পর আবার অশোক থানায় ঢোকেন। ৫ টা ৫৪ মিনিটে মদনলাল গুপ্ত নাম এক বিজেপি নেতাকে অশোক ফোন করেন। দুজনের মধ্যে ১৩২ সেকেন্ড কথা হয়। অশোক তাঁকে বলেন, যে অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছিল, তিনি থানায় নেই। পরে মদনলাল সংশ্লিষ্ট পুলিশ সার্জেন্ট পি ভি সাউকে সন্ধ্যা ৬ টায় ফোন করেন। তাঁদের দুজনের মধ্যে ৪৫ সেকেন্ড কথা হয়। ৬ টা ২ মিনিট মদন আবারও ওই সার্জেন্টকে ফোন করেন। ৬ টা ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডে ওই সার্জেন্টের সঙ্গে অশোকের দেখা হয়। সার্জেন্ট তাঁকে তদন্তকারী অফিসারের ঘরে বসতে বলেন। ৬ টা ৪ মিনিটে অশোকের সঙ্গে আসা আরও দু’জন থানায় ঢোকেন। সার্জেন্টের প্রশ্নের জবাবে ওই দু’জন জানান তাঁরা অশোকের সঙ্গে এসেছেন।
পুলিশ রিপোর্ট বলছে তখনই সার্জেন্ট সাউ ওই দুজনকে জানান, অশোক হঠাৎ পড়ে গিয়েছেন। তাঁর মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। ৬ টা ১০ মিনিটে অশোককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যে দু’জন অশোকের সঙ্গে এসেছিলেন তাঁরা পুলিশকে জানান, ওর মৃগী রয়েছে। ওই দুজন অশোককে জুতো ও মোজার গন্ধও শোঁকান। পুলিশ আরও দাবি করে, ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা ১৫ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে এখন পর্যন্ত।
দেখুন আরও খবর: