ময়নাগুড়ি: আপ বিকানের এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনে (Maynaguri Train Accident) যে সমস্যা রয়েছে, তা কি চালক প্রদীপ কুমার আগেই টের পেয়েছিলেন? যদি তাই হয়, তা হলে ওই ইঞ্জিন নিয়ে কেন যেতে রাজি হলেন বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের চালক? কেন যান্ত্রিক ত্রুটির কথা তিনি জানালেন না? এমন হাজারো প্রশ্ন কিন্তু উঠতে শুরু করেছে। তদন্ত যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে কিন্তু চালকের ভূমিকাও আতসকাচের তলায়। শনিবার থেকে তদন্ত শুরু করেছে রেলওয়ে সেফটি কমিশন। লোকো পাইলট, গার্ড-সহ তিন দিনে ২৫০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সেফটি কমিশনের তদন্তকারী দল।
সেই জিজ্ঞাসাবাদেই জানা যায়, ট্রেনের ইঞ্জিনে আগে থেকেই সমস্যা ছিল। যে কারণে ট্রেনটিকে রানিনগর স্টেশনে দাঁড় করিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। স্টেশনের লগ বুকেও তার উল্লেখ রয়েছে। তদন্তের জন্য সেই লগ বুক টিসিআরএস নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।
এটা সামনে আসার পরেই অবধারিত ভাবে যে প্রশ্নটা উঠেছে, ইঞ্জিনে সমস্যা থাকলে গার্ড এবং চালক কেন রানিনগর থেকে ট্রেন নিয়ে রওনা দিলেন? কেন পরীক্ষার পরেও রেক পরিবর্তন করা হয়নি? তা হলে কি ইঞ্জিনের সমস্যা ধরা পড়েনি? নাকি সমস্যাকে তাঁদের গুরুতর বলে মনে হয়নি? ট্রেন দাঁড় করিয়ে রানিনগরে যখন একবার পরীক্ষা হল, তার পরেও ট্রেনের ট্র্যাকশন মোটর খুলে গেল কী করে? দুর্ঘটনা ঘিরে এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরছে। লগবুকে কী লেখা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
প্রাথমিক তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে এটা স্পষ্ট, দুর্ঘটনার সব রহস্য লুকিয়ে ইঞ্জিনে! যে কারণে ইঞ্জিনটিরও ফরেন্সিক করানো হচ্ছে। ফরেন্সিক দল ময়নাগুড়ির দোমোহনীতে রয়েছে। আরও অনেক অসংগতিও তদন্তকারীদের নজরে এসেছে।
দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের গতি নিয়েও প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার হতে পারেন। কারণ গাড়ি ৯৫ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলছিল।
এক্সপ্রেসের যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শী সঙ্গে কথা বলেও রেলওয়ে সেফটি কমিশন জানতে পবারে, চাকায় আগুনের ফুলকি ও ধোঁয়া যাত্রীদের একাংশ আগেই দেখেছেন। সন্দেহ ব্রেক শু-র ঘর্ষণে এমনটা হতে পারে।
আরও পড়ুন: Mainaguri Train Accident: ময়ানগুড়ি রেল দুর্ঘটনায় ২৫০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ, শুরু ফরেন্সিক তদন্তও
শুধু রানিনগর নয়, জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনেও কিছুক্ষণ ট্রেনটি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কেন দু-বার দাঁড়াতে হল? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। যদিও তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে রেলওয়ে সেফটি কমিশন সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি।
ময়নাগুড়ির আপ লাইনের ট্র্যাকে যে সমস্যা ছিল, তা রেলমন্ত্রী আগেই জানিয়ে গিয়েছেন। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখ সেফটি কমিশনারের তদন্তও তাতে সিলমোহর দিতে চলেছে। কারণ, ওই ট্রেন যাওয়ার আগে দু’টি মালগাড়ি গিয়েছে ওই রুটেই। দু’টি মালগাড়িরই গার্ড বা চালক লাইনের সমস্যা নিয়ে কোনও স্টেশনে কিছু জানাননি। তাই ট্র্যাকে যে সমস্যা ছিল না, এটা স্পষ্ট।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়নাগুড়ির দোমোহনির কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আপ বিকানের এক্সপ্রেস। বগি লাইনচ্যুত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়।