দুর্গাপুর: রবিবার দুর্গাপুরের (Durgapur) ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মিলনপল্লি এলাকায় বাড়ির ভিতরে প্রশান্ত মণ্ডল, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের এক পুত্র ও কন্যার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রশান্ত মন্ডল নিজের মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে (WhatsApp) পারিবারিক অশান্তির বিভিন্ন বিষয় এবং তাঁকে বারবার মানসিক চাপ ও নির্যাতনের বিষয় তুলে ধরেছিলেন মৃত্যুর আগে। অভিযুক্তদের মধ্যে তাঁর মায়ের নাম ছিল সর্বপ্রথম। কয়েকশো কোটি টাকার মালিক প্রশান্ত মণ্ডল। কেন তিনি পরিবার নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন, তা নিয়ে নানান প্রশ্ন ওঠে।
খুন, নাকি আত্মহত্যা?। সকালে মৃতদেহ উদ্ধারের পরে পুলিশ দেহগুলি ময়নাতদন্তে পাঠানোর পর ঘটনাস্থলে আসে দুর্গাপুরে তৈরি হওয়া নতুন ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের দুই বিশেষজ্ঞ। তাঁরা পরীক্ষা করেন বাড়ির চারপাশ সহ বাড়ির ভেতরের বিভিন্ন জায়গা এবং জিনিসপত্র ও নমুনা সংগ্রহ করেন। রবিবারই মা সহ আরও দুই আত্মীয় মোট তিনজনকে গ্রেফতার করে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম বুলারানি মণ্ডল, প্রশান্ত নায়েক ওরফে গৌতম এবং শিলা নায়েক। ধৃতদের দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে (Durgapur Court) পেশ করে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। বিভিন্ন ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Corona Update | ফের চোখরাঙানি করোনার, জরুরি বৈঠকে বসছে সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটি
মৃতদের নাম অমিত মণ্ডল (৪২) পেশায় জমি ব্যবসায়ী। তাঁর স্ত্রী রূপা মণ্ডল (৩৪), তাদের পুত্র নিমিত মণ্ডল ( ৭) ও শিশুকন্যা নিকিতা মণ্ডল (১)। মৃতা রূপা মন্ডলের বাবা বিশ্বম্ভর পাল দুর্গাপুর থানার পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অমিত মণ্ডলের মা বুলা মণ্ডল। অমিত মণ্ডলের মাসতুতো ভাই গৌতম নায়েক ও মাসতুতো ভাইয়ের স্ত্রী শিলা নায়েককে গ্রেপ্তার করে রবিবার। যদিও মৃতার বাবা বিশ্বম্ভর পাল এই ঘটনায় কুড়ি জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেখানে তিনজন গ্রেফতার হলেও বাকি ১৭ জন এখনও অধরা রয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেশীরা জানান, সম্পত্তির বিবাদের জেরে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকত। মা থাকতেন মামার বাড়িতে। সেখান থেকেই বিভিন্নভাবে তাঁকে তাঁর মা আত্মীয়দের দিয়ে মানসিক নির্যাতন করতেন বলে অমিত হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে লিখেছিলেন। কার কার কাছে, কত টাকা পান, সে কথাও হোয়াটসঅ্যাপে লিখেছেন। সমস্ত বিষয়টি পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। যাদের বিরুদ্ধে, যেসব নাম তাঁর মেসেজে লেখা আছে, সকলকেই আটক করা হবে বলে জানিয়েছেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি কুমার গৌতম। যাঁরা তাঁকে বিব্রত করেছেন দিনের পর দিন, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের পুরোটা জুড়ে তাঁদের নাম লিখে গিয়েছেন অমিত।
এ ঘটনা আত্মহত্যা নাকি খুন, সে ব্যাপারটা এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরে তাঁদের দুই-একজন আত্মীয় প্রতিদিনই বাড়িতে যাতায়াত করছিলেন বলে খবর এবং নানান ভাবে তাঁকে মানসিক অত্যাচার করা হচ্ছিল। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে মিলনপল্লি এলাকায়। এলাকাবাসী এই ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন পুলিশের কাছে এবং দোষীদের যেন চরম শাস্তি হয় তারও দাবি জানিয়েছেন।
শেয়ার করুন