Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: সত্যকে ঢাকতে তৈরি হচ্ছে মিথ্যের কারখানা

চতুর্থ স্তম্ভ: সত্যকে ঢাকতে তৈরি হচ্ছে মিথ্যের কারখানা

Follow Us :

সত্যকে ঢাকার সবথেকে বড় উপায় হল, সেই সত্যের পাশে এক বিরাট মিথ্যেকে এনে দাঁড় করানো৷ বিগ লাই, নিটোল, নির্ভেজাল মিথ্যে। এতবড় সেই মিথ্যে যা মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ার আগেই সত্য ঢাকা পড়ে যাবে৷ এ তত্ত্ব নতুন নয়৷ এ থিওরির জনক জোসেফ গোয়েবলস। এ ভারতে সেই নাৎসি দর্শনের গুণগ্রাহী, হিটলার শিষ্যের দল আরএসএস – বিজেপি, ওই মিথ্যের দর্শনকে আরও নিপুণভাবে এনে হাজির করছে৷ আপনার সামনে থেকে বাস্তবকে ঢেকে, সত্যিকে ঢেকে নিপুণভাবে রচনা হচ্ছে মিথ্যের জাল, কল্পকাহিনি, মিথ, মিথ্যে মিলেমিশে এক জোরদার ককটেল। কেবল তৈরি করা হচ্ছে এমনই নয়, তাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আরও বড় নেটওয়ার্ক রেডি৷ ফ্যাক্টরিতে তৈরি হওয়া টুথপেস্ট, সাবান, মশলা, চানাচুর যে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে যায় দেশময়৷ তারচেয়েও দ্রুত গতিতে এই মিথ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন কৌশলে, হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, টিভি চ্যানেল, খবরের কাগজ হয়ে আপনার মগজ পর্যন্ত সেই মিথ্যে পৌঁছচ্ছে৷ আপনি যা ভালোবাসেন, আপনার যেমন রুচি, আপনার যা পছন্দ, সেই রাস্তা ধরে মিথ্যে আপনার মগজের দখল নিচ্ছে।

আগেরদিন সন্ধ্যেয় বন্ধু আর বন্ধুর বৌ এসেছিল, দীর্ঘ লকডাউনে বন্দি জীবনের একঘেঁয়েমি কাটাতে আগ্রা যাওয়ার প্ল্যান করেছেন, কোন হোটেল থেকে তাজমহল পরিষ্কার দেখা যায়, তা নিয়ে নেট ঘেঁটে মগজমারি করেছেন, রাতে শুয়েছেন, সকালে বাজার ফেরত আপনার মগজ সবে ভাবছিল, ২০০ টাকা সরষের তেল? এক বছরে ১০০% দাম বাড়লো, মাইনে বাড়েনি, ঠিক সেই সময় আপনার হোয়াটস অ্যাপে চলে এল সেই বিরাট মিথ্যেটা, আগ্রার তাজমহল আসলে শিবের মন্দির, মমতাজ মহলের সমাধি আসলে শিবের মন্দির ভেঙে তৈরি, তাজমহলের তলায় ২০টা ঘর আছে, তাতে ২০ টা শিবলিঙ্গ আছে, সে শিব পুজো দেয়, আসুন হিন্দুভাইয়েরা, একটা বেলপাতা আর চন্দন দিয়ে যান সেই মন্দিরে৷ আপনার বাপকেলে পদবি চাটুজ্যে, ঘোষ, বোস, কি মাইতি, যাই হোক না কেন, আপনার রক্ত চলকে উঠল, সেই আহারে বেচারা শিব লিঙ্গগুলোর জন্য, আপনার বেলপাতার জন্য অপেক্ষমান সেই ভগবান শিবের জন্য, দূরে সরে গেল ১০০% মূল্যবৃদ্ধি, সরে গেল দু বছর ধরে মাইনে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার ব্যথা৷ আপনি তখন উত্তেজনায় ফুটছেন৷ তাহলে পেটে পেটে এত? শিবের মন্দির তেজো মহল হয়ে গেল তাজ মহল৷ লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান, হিন্দু খতরে মেঁ হ্যায়, দাম বাড়ছে? বাড়ুক। ঘরে বেকার ছেলে মেয়ের চাকরি নেই? না থাকুক। ২০টা শিব পড়ে আছে অচ্ছেদ্দায়? সেটার তো একটা বিহিত হওয়া দরকার, হিন্দু ধর্ম সহনশীল? তা বলে এতটাও সহনশীল নয়। একবারও সেই হোয়াটস অ্যাপ কিভাবে আসলো, কে পাঠালো? আপনার কাছেই এলো কী করে?

তার আগের দিনেই তাজমহলের কাছে হোটেলের খোঁজ নিতে নেট ঘাঁটলেন৷ পরের দিনেই আপনার কাছে খবর এলো কেন? এত শত ভাবার সময় কোথায়৷ হিন্দু খতরে মে হ্যায়। ৩৫০ বছরের মুসলমান শাসন, প্রায় ১০০ বছরের খ্রিস্টান শাসনে হিন্দু ধর্মের একটি লোমও ছেঁড়া গেল না৷ এই সময়ের মধ্যে তুলসীদাস রামচরিত মানস লিখলেন, তাঁর পুঁথি যখন হিন্দু ব্রাহ্মণ পান্ডারা পুড়িয়ে দিতে গেল, তখন মুসলমান শাসকেরা তা রক্ষা করল৷ রামায়ন ফারসিতে অনুবাদ করলো, সংস্কৃত সাহিত্যে ভুরি ভুরি রচনা হল, স্বাধীনতা এলো, দেশভাগ হলো, ৬৫ বছর কাটার পর হঠাৎ শোনা গেল হিন্দু ধর্ম খতরে মে হ্যাঁয়৷ যখন মসনদে আরএসএস–বিজেপি। আদালতে চলে গেল কিছু উন্মাদ৷ ধর্মাবতার, ওই তাজমহলের তলায় ২০টা ঘর খুলে দেখার অনুমতি দেওয়া হোক৷ আদালত এক কথায় নাকচ করেছে সেই অনুরোধ৷ বলেছে, ঘরে যান, গবেষণা করুন, পড়াশুনো করুন, আদালতের সময় নষ্ট করবেন না।

কিন্তু আদালতের এই কথা কি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো? না, ছড়ালো না, কারণ ছড়ানোর লোক নেই৷ কিন্তু ওই আবেদনের কথা? সব্বাই জানলো, জানানো হল, জানানো হল যে এক অত্যাচারি মুসলমান সম্রাট, তাঁর বৌয়ের সমাধির জন্য এক শিবমন্দির ভেঙে তৈরি করেছিলেন তাজমহল৷ এক মিথ্যের কারখানাতে তৈরি সেই বিরাট মিথ্যে, অসংখ্য সত্য তথ্যকে ঢেকে দেবার কাজ শুরু করল৷ এইভাবেই মিথ্যেরা ছড়ায়। আপনি গান ভালোবাসেন? উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত? গল্প আসছে মুসলমান মিয়াঁ তানসেন, হিন্দু বৈজু বাওরাকে খুন করিয়েছিলেন৷ আপনি ফুল ভালোবাসেন, গল্প আসছে, মুসলমানরা জবাফুল দেখলেই থুতু ফ্যালে কেন? আপনি ফুটবল পাগল? খেলা ভালোবাসেন? বিতর্ক শুরু, ধর্মের নামে ক্লাব থাকবে কেন? মহামেডান ক্লাব তুলে দাও। আপনি সিনেমা ভালোবাসেন৷ আছে অর্ধ সত্য আর প্রচুর মিথ্যে দিয়ে তৈরি কাশ্মীর ফাইলস৷ আপনি খেতে ভালোবাসেন? চাউমিনে আছে গরুর চর্বি, জানেন তো? এ খবর বাজারে আছে। এমন হাজারে হাজারে মিথ্যে, যার প্রত্যেকটার আসল লক্ষ্য একটাই, দেশের সংখ্যালঘু মানুষজনদের বিচ্ছিন্ন করো৷ দেশের মানুষের মধ্যে এক ধর্মীয় মেরুকরণ হোক, দেশে আসুক হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ, প্রতিটি হিন্দু, আচরণে না হোক, পদবিতে হলেই হবে৷ ভগবানে না হোক পদবিতে হলেই হবে৷ তাদেরকে এক জায়গায় এনে এক সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাদ চায় আরএসএস, বিজেপি। সেই জন্যই এই বিরাট আয়োজন, এই বিরাট মিথ্যের কারখানা তৈরি হয়েছে। তেমন হাজারটা মিথ্যের মধ্যে এই তেজোমহল আছে৷ তিন চারখানা বই ইতিমধ্যেই লেখা হয়ে গিয়েছে, ভাবখানা হল ইতিহাসের গবেষণা, কিন্তু আদতে ইতিহাসের নাম গন্ধও নেই, তিনটে জিনিস বলা হয়েছে,

১) ঐখানে এক বিরাট শিব লিঙ্গ ছিল, এখন তাজমহলের মধ্যের গম্বুজ হল, আসলে শিব লিঙ্গ।
২) শাহজাহান ঐ তেজোমহল ভেঙে তাজ মহল তৈরি করেছিলেন।
৩) আসলে ওখানে মুমতাজ মহলের সমাধি নেই, তাজমহল তৈরি করতে তো ২২ বছর লেগেছিল, ততদিন কি মুমতাজের শরীর অন্য কোথাও রাখা হয়েছিল? ওখানে যেটাকে সমাধি বলা হচ্ছে, তার পাশেই রয়েছে ২০ টা ঘর, সেখানে ২০টা জ্যোতির্লিঙ্গ আছে।

প্রমাণ?

প্রমাণ হল, তাজমহলের মধ্যের গম্বুজটা নাকি শিব লিঙ্গের মত। প্রমাণ হল আর্কিওলজিক্যাল সোশাইটি৷ ওই ২০টা ঘরকে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে কেন? এখন আর মানুষজনকে সমাধি দেখতে তলায় যেতে দেওয়া হয় না কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। ইতিহাস কী বলছে? এই তাজমহলের তৈরির প্রায় শুরু থেকে, তাজমহল শেষ হওয়া দেখেছিলেন এক ফরাসী ব্যবসায়ী পর্যটক, জঁ বাপ্টিস্ট টাভেনিয়ার। মোট ছ’বার তিনি বাণিজ্যে বেরিয়েছিলেন৷ দ্বিতীয়বারের পর্যটনে তিনি ভারতে আসেন, শাহজাহানের দরবারে আসেন, আগ্রা যান, গোলকোন্ডা যান, চতুর্থবারের পর্যটনে আবার আসেন ভারতবর্ষে, আবার আগ্রা যান, তত দিনে শেষ হয়েছে তাজমহলের কাজ৷ সিংহাসনে তখন ঔরঙ্গজেব৷ শাহজাহান আগ্রা দূর্গে বন্দি। তিনি তাজমহল গড়ে উঠতে দেখেছেন, তিনি কেবল ব্যবসা আর পর্যটনেই থেমে থাকেননি, নিজের অভিজ্ঞতার কথা বিস্তৃত লিখেছেন, ইতিহাসের এক আকরগ্রন্থ, ট্রাভেলস ইন ইন্ডিয়া৷

তিনি লিখছেন “I witnessed the commencement and accomplishment of this great work, on which twenty-two years have been spent, during which twenty thousand men worked incessantly; this is sufficient to enable one to realize that the cost of it has been enormous. It is said that the scaffoldings alone cost more than the entire work, because, from want of wood, they, as well as the supports of the arches, had all to be made of brick; this has entailed much labour and heavy expenditure. Shahjahan began to build his own tomb on the other side of the river, but the war with his sons interrupted his plan, and Aurangzeb, who reigns at present, is not disposed to complete it. A eunuch in command of 2,000 men guards both the tomb of the Begam and the Tasimacan, to which it is near at hand. বিস্তৃত বিবরণে টাভেরনিয়ার লিখছেন, কিভাবে খিলান আর গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে, কত খরচ হয়েছে, কত মানুষ কাজ করেছেন এবং তাঁর লেখা থেকেই পাওয়া যাচ্ছে যে বেগমের সমাধি আগেই তৈরি হয়েছে, সেই সমাধির জন্য ২০০০ জন পাহারাদার ও ছিল। এ লেখা পাওয়া যায়, কিন্তু পড়বেন ক’জন? স্বাভাবিকভাবেই যিনি ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন, যিনি গবেষণা করেন, তাঁরা ছাড়া এ বই তো কেউ পড়বে না, সাধারণ মানুষের পড়ার কথাও নয়, সেই সুযোগটা নিয়েই মিথ্যের ফ্যাক্টরিতে মিথ্যে তৈরি হচ্ছে। আপনি বলতেই পারেন ওই একজন ট্যাভারনিয়ারের কথা দিয়েই কি ইতিহাস রচনা হবে? না, একদম নয়, শাহজাহান, ঔরঙ্গজেবের শাসনের বর্ণনা, ওই সময়ের ইতিহাস তো কেবল ট্যাভারনিয়ার লেখেননি, পিটার মুন্ডি, ব্রিটিশ পর্যটক থেকে শুরু করে অনেকের বিবরণ আছে, সামান্য কিছু পার্থক্যও আছে, কিন্তু ওই তেজোমহলের ঢপটা কোথাও নেই৷ আসলে এই ধরণের মিথ্যে দিয়ে বহু সত্যকে ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে, আমাদেরকে এক মিথ্যের আবরণে রাখার চেষ্টা চলছে, এই মিথ্যের মুখোমুখি হওয়াটাই আজকের প্রথম কাজ।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে রণহুঙ্কার | পিএম কেয়ারের টাকা কোথায় গেল? প্রশ্ন তুললেন মমতা
05:14
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধের দামামা | সন্দেশখালি নিয়ে দিল্লিতে তোপ সাগরিকার
12:48
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে মুখোমুখি | তৃণমূলের আমলে একাধিক দুর্নীতি: ভাস্কর সরকার
06:55
Video thumbnail
Jelar Saradin | দেখে নিন জেলার সারাদিনের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি...
12:41
Video thumbnail
৪ টেয় চারদিক | রাজভবনে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, পুলিশি তদন্তের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন রাজ্যপালের
34:56
Video thumbnail
Sandeshkhali | অবিলম্বে গঙ্গাধর কয়ালকে গ্রেফতারের দাবি কুণাল ঘোষের
04:52
Video thumbnail
Sandeshkhali Viral Video | গঙ্গাধরকে ফাঁসানো হয়েছে, দাবি বিজেপি কর্মীদের
10:28
Video thumbnail
Mitali Bagh | আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগের গাড়িতে ভাঙচুর, অভিযুক্ত বিজেপি বলছে, জনরোষ!
08:16
Video thumbnail
Abhishek Banerjee | মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে কৃষ্ণনগরের কালীগঞ্জে অভিষেকের প্রচার
21:17
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar) | গরমে হিট শশা মাখা! ভিড় জমাচ্ছেন পথচলতি মানুষ
02:15