Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeআজকেআজকে (Aajke) | বহরমপুরে ঝুমে জো পাঠান
Aajke

আজকে (Aajke) | বহরমপুরে ঝুমে জো পাঠান

Follow Us :

কাল বিকেল থেকে বহরমপুরে একটানা বেজেই চলেছে ঝুমে জো পঠান…। কেন বাজছে সব্বাই জানেন। বাংলার রাজনীতিতে এমন অহিনকুল সম্পর্ক আগেও কি ছিল? না, ছিল না বা থাকলেও  হয় তো তা ছিল ভেতরে ভেতরে, প্রকাশ্যে ছিল না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর অধীর চৌধুরির সম্পর্ক সেই দিক থেকে এক্কেবারে আলাদা। দুজনের উচ্চতার কোনও তুলনাই হবে না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ধৈর্য ধরে লাগাতার আন্দোলন করে সি পি এম জামানার অবসান এনেছেন তা অধীরের অওকাতের বাইরে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত সহজে মানুষের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারেন তার দশ ভাগের একভাগ ক্ষমতাও অধীর চৌধুরির নেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় কে হারিয়ে, মানে প্রায় সিংহ শিকার করে সংসদীয় রাজনীতিতে এসেছিলেন, অধীর চৌধুরি ১৯৯১ এ নবগ্রাম বিধানসভায় প্রথমবারে লড়ে হেরেছিলেন, মনে আছে শ তিনেক সিপিএম ক্যাডার ঘিরে রেখেছিল অধীর রঞ্জন চৌধুরিকে। ১৪০১ ভোটে তিনি হেরেছিলেন। তিনি চিরটা কালই থেকে গেছেন বহরমপুর, বড়জোর মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস নেতা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উথ্বান যুব কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে। না কোনও তুলনাই হয় না কিন্তু এক অহিনকুল সম্পর্ক আছে, যা সত্যিই অবিশ্বাস্য। কারণ অধীর চৌধুরিকে সি পি এম আমলে যে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল সি পি এম জামানাতে, বা যে ভাবে তাঁকে জেলে পুরে রাখার হুমকি দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তা এক কথায় ওই মাপের অন্য কোনও কংগ্রেস নেতার সঙ্গে হয় নি। কিন্তু অধীর চৌধুরির মমতা বিদ্বেষ সত্যি গবেষণার বিষয় এবং ভাইস ভারসা। তাঁর চরম বিরোধী সোমেন মিত্র কে দলে নিয়েছিলেন মমতা, কেবল নেন নি, আমজাদ আলি খান কে সরিয়ে ডায়ামন্ডহারবার আসন থেকে সাংসদ করে দিল্লি পাঠিয়েছিলেন, মানস ভুইয়া থেকে সৌগত রায়, মালা রায়, প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত ছিল, ভালো হয়েছে, মধুর হয়েছে আবার তিক্ত হয়েছে, এমনকি আবদুল মান্নানের সঙ্গেও হেঁসে কথা বলতে দেখেছি, সুব্রত মুখার্জি বলেছিলেন বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না, তাঁর সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক দেখেছি, কিন্তু অধীর চৌধুরির সঙ্গে সম্পর্ক একদিনের জন্যও ভালো হয় নি। বরং উত্তোরত্তর তা খারাপ হয়েই চলেছে, অধীর না থাকলে হয়তো দুটো কি তিনটে আসনের বিনিময়ে কং তৃণমূল জোট হত, কিন্তু এক এবং অদ্বিতীয় অধীর চৌধুরির জন্যই সেই জোট হয়নি বরং খুঁজে পেতে এক জবরদস্ত ক্যান্ডিডেট খাড়া করিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেটাই বিষয় আজকে, বহরমপুর ঝুমে জো পাঠান।

রাজ্যে জোট হোক বা জোট না হোক, অধীর চৌধুরির আসন এবারে এমনিতেই খুব সহজ ছিল না। কেন? কারণ মুর্শিদাবাদে ২০২৩ এ পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৭৮ টা জেলা পরিষদ নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ৪ টে আসন, তৃণমূল ৭২ টা আসন। বলবেন যে পঞ্চায়েত ভোটে তো মারপিট করে ভোট পেয়েছে তৃণমূল। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক, ২০২১ এর নির্বাচনের হিসেব, যে নির্বাচন হয়েছিল প্রায় মিলিটারি নামিয়ে। মুর্শিদাবাদ জেলাতে ২০ টা আসনের ১৮ টা জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস আর দুটো বিজেপি। ভোটের হিসেবটাও দেখে নেওয়া যাক, তৃণমূল পেয়েছিল ৫৪% ভোট, বিজেপি ২৪% আর কংগ্রেস, মানে অধীরবাবু পেয়েছিলেন মাত্র ১৪% ভোট, বামেরা ৫% ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে ছিল। তারপরে পঞ্চায়েতের ভোট হয়েছে, রেজাল্ট একই থেকেছে, এই তিন বছরে অধীরবাবু বা কংগ্রেস এমন কী করেছেন যাতে তিনি জিতেই যাবেন? এবং মাথায় রাখুন বিজেপি মাঠে নামিয়েছেন নির্মল কুমার সাহা, উনি নিশ্চই মন্দির মসজিদ নিয়েই নামবেন, মানে পোলারাইজেশন হবেই, অধীর চৌধুরির উল্টোদিকে ইউসুফ পাঠান, এবং মাথায় এটাও রাখুন যে বহরমপুরে ৫২% মুসলমান ভোট। এই হিসেবের একটাও কি অধীর বাবুর পক্ষে যাচ্ছে। এবং এই ইউসুফ পাঠানকে এনে এইখানে দাঁড় করানোর পেছনে আরেক হিসেবও আছে, মুর্শিদাবাদে অধীরের একদা অনুগামী ডেভিড, অপূর্ব সরকার ওদিকে সৌমিক হোসেন বা সুব্রত সাহা ইত্যাদি তৃণমূল নেতাদের আকচা আকচি থামাতে এক বহিরাগতকে দাঁড় করানো হল, টার্গেট অধীর বধ। অনেক হিসেব করেই ইউসুফ পাঠানকে নামানো হল এবং অধীর বাবুকে এবারে জীবনের সবথেকে কঠিন লড়াইটা লড়তে হবে। দুটো হিসেব কাজ করবে, প্রথমটা হল মুসলমান সংখ্যালঘু ভোটের মেরুকরণ, তা যদি আবার সেই ২০২১ এর মত হয়ে ওঠে তাহলে অধীর রঞ্জন চৌধুরি জীবনের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের মুখ দেখবেন, যদি তা না হয় তাহলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে কংগ্রেস আর তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে, যদি মমতা বিরোধী, সরকার বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যায় তাহলে তৃণমূল জিতে যাবে। সবমিলিয়ে এই মূহুর্তে বহরমপুরে বাজছে ঝুমে জো পাঠান, সেই পাঠান ফল বার হবার পরেও নেচে উঠবে কি না সেদিকে সবার নজর থাকবে। আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, আপাতত মুর্শিদাবাদের ২০ টা এম এল এর ১৮ টা তৃণমূলের হাতে, জেলাপরিষদের ৭৮ টা আসনের ৭২ টা তৃণমূলের হাতে, তার ওপরে প্রার্থী সংখ্যালঘু ভারত বিখ্যাত ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান, সবমিলিয়ে এই আসন থেকে কি অধীর চৌধুরি আবার দিল্লি যেতে পারবেন? শুনুন কী বলেছেন মানুষজন।

অন্যান্য রাজ্যে প্রায় সমস্ত রাজ্যেই ভোট হয়, কেরালা, বাংলা, ত্রিপুরাতে ভোট করানো হয়, এ রীতির চল বাম আমল থেকেই, বাম দলগুলো নির্বাচনকে স্রেফ গণতন্ত্রের এক এক্সারসাইজ বলে তো মনে করেন নি, মানুষের মধ্যে দলের প্রভাব আর ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যও ব্যবহার করেছেন। ত্রিপুরা কেরালা নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা হবে, এ রাজ্যে নির্বাচনের প্রাক শর্ত সংগঠন, পঞ্চায়েত লেভেলে দলের অবস্থা, এম এল এ, জেলাপরিষদ পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের ক্ষমতা। কারণ ঐ পঞ্চায়েতের হাতে, সমিতি বা জেলা পরিষদের হাতে আছে বিরাট মধু ভান্ডার, তার বিলি বন্দোবস্ত ক্ষমতাকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। মুর্শিদাবাদে সেই ক্ষমতা তৃণমূলের কাছে আছে, আর তার সঙ্গে যোগ হবে এক বড় সড় সেলিব্রিটির জনপ্রিয়তা, হ্যাঁ বলেই রাখছি অ্যাডভানটেজ ইউসুফ পাঠান, ঝুমে জো পাঠান।

RELATED ARTICLES

Most Popular