কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ঘড়ির কাঁটায় তখন ৮টা বেজে ১ মিনিট। চারপাশটা কেঁপে উঠল। তীব্র আগুনের ঝলকানিতে হলুদ হয়ে গেল সাদা প্রাসাদটা। হলুদের ছোঁয়ায় রঙ বদলে গেল গোটা আকাশের। এ হলুদ শুভ নয়, এ হলুদ আগুনের রঙ। এ শব্দ বীভৎতার। গোটা এলাকা মুড়ে গেল ধুলো-বালিতে।
মুহূর্তের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে চোখ ফেরাতেই বহু দেহের খণ্ডাংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেল। যার মাঝে রয়েছে বছর ২১-এর নবীনের দেহ। আর পাঁচটা দিনের মতো কর্নাটকের ডাক্তারি পড়ুয়া ছেলেটা আজও বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। খারকিভের দোকানের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। নিত্যদিনের প্রয়োজনের জিনিস কেনাটাই ছিল উদ্দেশ্য। ঠিক তখনই আছড়ে পড়ে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র।
বাকি বন্ধুরা হস্টেলেই থাকতেন। নবীন থাকতেন একা। একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে। খারকিভে গভর্নর হাউসের পিছনেই ছিল তাঁর ঠিকানা, মঙ্গলবার যেখানে হামলা চালায় রুশ বাহিনী। গত রাতেও পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল। সকালে খাবার, আর পাঁচটা জিনিস কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। শেষ যারা নবীনকে দেখেছিলেন, তাঁদের একজন জানিয়েছেন, ঘরের পোশাকেই ছিলেন তিনি। সামনে বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়েছিল। খাবার নিয়ে হয়ত তড়িঘড়ি ফেরার পরিকল্পনা ছিল। হয়ত আজ কোনও বিশেষ কাজও ছিল। দোকানের লাইনের দাঁড়ানোর কয়েক মুহূর্ত বাদেই আছড়ে পড়েছিল রুশ বোমা।
আরও পড়ুন: Russia-Ukraine War: হাওয়ায় মিশে যায় শরীর! ইউক্রেনে কতটা মারাত্মক বোমা ব্যবহার করছে রাশিয়া?
নবীন কোনও যোদ্ধা নন, নবীন ইউক্রেনের বাসিন্দা নন। সে দেশ থেকে ডাক্তারি পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে এদেশে ফেরাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। সেই মতো পরিকল্পনাও ছিল। মাঝে মধ্যেই দেশে ফিরে কী করবেন, তা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথাও বলতেন নবীন। কিছুটা দিলখোলা, কিছুটা চাপা স্বভাবে নবীনের এই অকস্মাৎ চলে যাওয়া মানতে পারছেন না বন্ধুরা।
বিস্ফোরণের কয়েক মুহূর্ত পর দেখা গেল গোটা এলাকা ভেঙে-চুড়ে গিয়েছে। গুঁড়িয়ে গিয়েছে বেশ কিছু বাড়ি। রাস্তাঘাট এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। আগুনের ঝলাকানিতে ঝলসে গিয়েছে প্রশাসনিক ভবনের ঝাঁ চকচকে ঐতিহ্য। যেভাবে আকাশে উড়েছে আগুনের গোলা, যেভাবে কেঁপে উঠেছিল গোটা এলাকা, চোখ বুজলেই তা যেন প্রত্যক্ষ করছেন এলাকার বাসিন্দারা। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেহর টুকরো, যা বুঝিয়ে দিচ্ছে, নবীনের মতো আরও অনেক নবীন-প্রবীণকে ছিনিয়ে নিয়েছে ৮.০১ মিনিটের সেই ক্ষেপণাস্ত্র।