কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: আমাজনের বৃষ্টি-অরণ্যের দাবানলের সংখ্যা ১৫ বছরে সর্বোচ্চ। ২০২১-এ আমাজনে ৭৫ হাজারেরও বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২০ সালে সেই সংখ্যাটা ছিল ১ লক্ষ ৩ হাজার। এ বছর সেই সংখ্যাটা ছাপিয়ে যাবে, তা বলায় বাহুল্য!
দাবানলের কারণে মাইলের পর মাইল বনাঞ্চল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমন্ডলীয় বৃষ্টি-অরণ্যের ৩ হাজার ৭৫০ বর্গ কিলোমিটার (১৪৫০ বর্গ মাইল) জঙ্গল উজাড় হয়েছে। আমাজনের বনভূমি ধ্বংসের ক্ষেত্রে এটা নতুন রেকর্ড। ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ এই পরিসংখ্যান দিয়েছে। ২০২১-এ ৩ হাজার ৬০৫ বর্গ কিলোমিটার জঙ্গল ধ্বংস হয়।
ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো আমাজনের জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবে আগুন লাগে না। স্থানীয় কৃষকরা জমি পরিষ্কার করার জন্য বন কেটে গাছে লাগিয়ে আগুন দেয়। সেই আগুনই কখনও কখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে দাবানলের রূপ নেয়। অগস্ট এবং সেপ্টেম্বর, এই দু’মাস আমাজনের আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। ফলে এই সময় আগুন নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়ে। অক্টোবরে ধীরে ধীরে বর্ষার সূচনা হলে সেই সমস্যা মিটে যায়।
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেও দাবানলের এই দাপট বলে মনে করছেন ভৌগোলিকরা। বর্তমান সময়ের উষ্ণ-শুষ্ক তাপমাত্রা দাবানলের অনুঘটক রূপে কাজ করছে। তবে বলে রাখা ভালো, ২০২২-এর তুলনায় ২০১৯-এর দাবানল-চিত্র আরও বিপজ্জনক ছিল। আমাজন বৃষ্টি-অরণ্যে সে-বার ৭২ হাজার ৮৪৩টি দাবানলের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। যা ২০১৩ সালের পরিসংখ্যানের দ্বিগুন।
ব্রাজিলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে, শুকনো বাতাসে দাবানল জ্বলে ওঠা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এবারের আগুনের কারণ দাবানল নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। তাঁদের মতে, অনেক সময়েই চাষের জন্য জমি বা খামার তৈরি করতে ইচ্ছাকৃত ভাবে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। সেখানেও এমনটাই হচ্ছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদের পাশে প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত সুবিশাল বৃষ্টি-অরণ্য (রেন ফরেস্ট)। ঘন সেই জঙ্গলে রয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির গাছগাছালি। পৃথিবীর মোট চাহিদার ২০ শতাংশ অক্সিজেনের যোগান দেয় আমাজন রেন ফরেস্ট। শুধু তাই নয়, খনিজ পদার্থের বিপুল ভান্ডার রয়েছে আমাজনে। সেই খনিজ পদার্থের জন্য লাগাতার জঙ্গল সাফ করে খনন কাজ চালানো হয়।