হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp), টেলিগ্রাম (Telegram) এবং সিগন্যালের (Signal) মতো জনপ্রিয় ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনের (Instant Messaging Application) কারণে মুঠোফোনের জগতের এসএমএস (SMS) পরিষেবা অনেকদিন আগেই গুরুত্ব হারিয়েছে। গত এক দশকের কথা ধরলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একেবারে কোণঠাসা মোবাইল দুনিয়ার একসময়কার অত্যন্ত জনপ্রিয় ফিচার শর্ট মেসেজ সার্ভিস (Short Message Service)। অস্তিত্ব আছে বটে, কিন্তু সেটা পুরোপুরি ব্যবসাগত কারণে। যেমন ধরুন কোনও প্রোমোশনাল মেসেজ, কিংবা ওটিপি শেয়ারিং, কিন্তু এমার্জেন্সি পারপাসে কোনও মেসেজ আসা। তাছাড়া আরও কোনও ব্যবহার নেই। সাধারণ মোবাইল ব্যবহারকারীর কাছে এসএমএস-এর আর তেমন কোনও গুরুত্ব নেই, যবে থেকে আমরা হোয়াটসঅ্যাপ দুনিয়ার আস্বাদ পেয়েছি।
অ্যাপল আইফোনের (Apple iPhone) একটা ফ্যানবেস আছে। কিন্তু সেটা বাদ দিলে বর্তমানে স্মার্টফোন জগতে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম পরিচালিত স্মার্টফোনের (Smartphones Powered by Android OS) রমরমা। এদিকে, অ্যাপল সম্প্রতি তাদের আইমেসেজ (iMessage)-এ অনেক পরিবর্তন এনেছে। ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিস যেভাবে রিয়েল টাইমে সবকিছু দেখায়, সেরকমই করে তোলা হচ্ছে আইমেসেজকে। এবার সেই পথেই হাঁটছে গুগল। তবে স্ট্র্যাটেজি একটু আলাদা। ডেটা হ্যাকিং, ডেটা লিকের যুগে আজকাল আমরা বড্ড বেশি সতর্ক। ইনস্ট্যান্টম মেসেজিং অ্যাপের (Instant Messaging Apps) সফলতার অন্যতম কারণ হল এন-টু-এন্ড এনক্রিপশন (End-to-End Encryption)।
আরও পড়ুন: Athiya Shetty-KL Rahul Wedding : রাহুল-আথিয়ার বিবাহ সংবাদ
টেক জায়ান্ট গুগল সম্প্রতি তাদের ব্লগস্পটে ঘোষণা করেছে, গ্রুপ চ্যাটের ক্ষেত্রে তাঁরা এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড আরসিএস (Rich Communication Services – RCS) নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে তা বিটা প্রোগ্রাম (Beta Program)-এ উপলব্ধ হবে। গুগল জানিয়েছে, এই ফিচার সর্বসাধারণের জন্য বাজারে এলে ব্যক্তিগত চ্যাট সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত ও সুরক্ষিত (Private and Secure) থাকবে, প্রেরক এবং প্রাপক (Sender and Recipient) ছাড়া আরও কোনও তৃতীয় পক্ষ (Third Party) দেখতে পাবে না কোনও কিছুই।
আরসিএস (RCS)-এ প্ল্যাটফর্মে টেক্সট করা যেমন সুরক্ষিত হবে, তেমনই ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (User Experience) আরও বাড়বে। গুগলের ব্লগপোস্ট বলছে, স্মার্টফোন যেসব কাজে সক্ষমে, তার অনেক কিছুই নেই এসএমসএস পরিষেবায়। আরসিএস-অর অর্থ হলো হাই-কোয়ালিটি ফটো ও ভিডিয়ো সেন্ড এবং রিসিভ করা। রিয়েল টাইমে গ্রুপ চ্যাট করা, গ্রুপ চ্যাট থেকে কাউকে কন্ট্যাক্ট লিস্টে যোগ করা কিংবা রিমুভ করা। জানা গিয়েছে, তাদের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা সমস্ত মোবাইল নির্মাতা এবং মোবাইল পরিষেবা দেওয়া ক্যারিয়ারদের আরসিএস ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করছে। আরসিএস হল এসএমএস-এর সুপারচার্জড ভার্সন। ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিসের মতো ইউজার এখানেও টাইপিং ইন্ডিকেটর্স এবং ডেলিভারি ও রিড রিসিপ্ট দেখতে পাবেন।
মোবাইল দুনিয়ায় তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অপর টেক জায়ান্ট অ্যাপলকেও তাদের মেসেজিং সার্ভিসের জন্য এই পরিষেবা গ্রহণ করার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করছে গুগল। এর পিছনেও একটা কারণ রয়েছে। ব্লগস্পটে গুগল তরফে জানানো হয়েছে, একমাত্র অ্যাপল ছাড়া অন্যান্য সমস্ত মোবাইল নির্মাতা এবং মোবাইল ক্যারিয়ার আরসিএস স্ট্যান্ডার্ড গ্রহণ করে নিয়েছে। কিন্তু অ্যাপলের আইমেসেজ এখনও সেই ১৯৯০ সালের যুগে পড়ে। কেন না অ্যান্ড্রয়েড থেকে অ্যান্ড্রয়েড মেসেজ করার ক্ষেত্রে আরসিএস যুগান্তকারী পরিবর্তন আসতে চললেও, আইফোন থেকে অ্যান্ড্রয়েডে মেসেজ হলে, সেই চিরাচরিত ভঙ্গিমাতেই মেসেজ আসছে। অ্যাপলে রয়েছে ব্লু বাবল, গ্রিন বাবলের বৈষম্য। ফলে বাজার থেকে ইনস্ট্যান্টম মেসেজিং সার্ভিসের জনপ্রিয়তা কমাতে ও মোবাইল দুনিয়ায় আরও এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে গুগলের মূল সংস্থা অ্যালফাবেট (Alphabet Inc.) এবং অ্যাপল (Apple Inc), উভয় সংস্থাকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই চলতে হবে।