কর্নাটকের ভোটে কংগ্রেস জেতার পর তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি বিরোধী জোটের বার্তা দেন। তিনি বলেন, যেসব বিজেপি বিরোধী রাজ্যে যে যে দল শক্তিশালী, তাদের এগিয়ে রাখতে হবে। আমরা কংগ্রেসের শক্তি আছে, এমন রাজ্যে কংগ্রেসকে সুবিধা দেব। তবে কংগ্রেসকেও ছাড়তে হবে। তাঁর প্রস্তাব ছিল, এভাবেই একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়া যায়।
মমতার প্রস্তাব মেনে নিলে কংগ্রেসকে সারা দেশে ২০০টি আসনে লড়তে হবে। বাকিগুলিতে আঞ্চলিক দলগুলিকে সমর্থন করতে হবে। সেটা কত দূর সম্ভব, তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন আছে। এই আবহে মমতার প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। সোমবার তিনি বলেন, মমতার প্রস্তাবকে স্বাগত। আলোচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে অসুবিধা হবে না।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে সমর্থন করার বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের অন্তত ২০০ লোকসভা আসনে কংগ্রেসকে সমর্থন করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেসকে বাংলায় তৃণমূল বিরোধিতার রাস্তা থেকে সরতে হবে বলেও পরোক্ষে শর্ত দেন তৃণমূল নেত্রী। এবার সেই বিবৃতিতে স্বাগত জানালেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম। পাশাপাশি তিনি আত্মবিশ্বাসী যে আলোচনার মাধ্যমে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেতে পারে। সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
চিদম্বরম আরও বলেন, আমারও ব্যক্তিগত মত হল, একটি রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী অবিজেপি দলকে সেই রাজ্যে অগ্রণী হিসেবে মেনে নিতে হবে। কংগ্রেস অনেক রাজ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বিজেপি বিরোধী দল। আবার অনেক রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলির শক্তি বেশি। সেখানে তাদের অগ্রণী ভূমিকায় থাকতে দিতে হবে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এই বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতেই পারে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরেই সওয়াল করছেন মমতা। বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী শক্তিকে জোটবদ্ধ রাখতে কংগ্রেসকে সমর্থনের বার্তাও দেন তিনি। এই প্রেক্ষিতে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতার এই মন্তব্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চর্চা।
চিদম্বরম আরও বলেন, ইতিমধ্যে অবিজেপি দলগুলির মধ্যে জোটবদ্ধ হওয়ার একটি উদ্যোগ চলছে। তাঁর বিশ্বাস, খুব তাড়াতাড়ি বিরোধী দলগুলি একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে কাছাকাছি আসবে।
কিন্তু এই ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গে কী হবে, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। রবিবার ঠিক হয়েছে, ১২ জুন পাটনায় বিজেপি বিরোধী দলগুলির মেগা বৈঠক বসবে। তাতে অন্তত ১৯টি বিরোধী দল যোগ দেবে বলে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দাবি। ওইদিনই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় তাদের তৃণমূল বিরোধিতার লাইন বজায় থাকবে। তার মধ্যেই সোমবার সাগরদিঘির একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ক বায়রন বিশ্বাস তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে রাজ্য বিধানসভায় আবার কংগ্রেস শূন্য হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, রাজ্য কংগ্রেস তৃণমূলের বিরোধিতা করে আসলে বিজেপির হাত শক্ত করছে। অধীর আবার বায়রনের দলবদলের জন্য তৃণমূলকে দায়ী করেছেন। তিনি তৃণমূলকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। সব মিলিয়ে কী হবে আগামী দিনে, তা নিয়ে কৌতূহল থাকছে রাজনৈতিক মহলে।