Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: আপনার জন্য লজ্জায় মাথা হেঁট হয়েই আছে মিঃ প্রাইম মিনিস্টার

চতুর্থ স্তম্ভ: আপনার জন্য লজ্জায় মাথা হেঁট হয়েই আছে মিঃ প্রাইম মিনিস্টার

Follow Us :

৮ বছর হয়ে গেল নরেন্দ্র মোদি সরকারের, সেই উপলক্ষে মিঃ প্রাইম মিনিস্টার গুজরাটের রাজকোটে গিয়েছিলেন এক অনুষ্ঠানে৷ সেখানে ভাষণ দিতে গিয়ে দুটো কথা বললেন৷ মানে অনেক কথাই বলেছেন৷ তিনি তো ছোট করে কিছু বলা পছন্দও করেন না, তাই প্রচুর বলেছেন৷ তারমধ্যে দুটি মাণিক্যকে আমি বেছে নিয়েছি। আমার সরকার দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য সৎ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ৮ বছর পরে দেশের প্রধানমন্ত্রীর, এমন কী দরকার পড়ল যে মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, আমরা কিন্তু সৎভাবেই সরকার চালাচ্ছি। এমনটাও কি বলার চেষ্টা করলেন যে এর আগে কোনও সরকার, এমন কি অটলবিহারী বাজপেয়ির সরকারও সৎভাবে কাজ করেনি? নেহরু, ইন্দিরা, রাজীব, নরসিমহা রাও, মনমোহন সিং বা বাজপেয়ির সরকার নয়, ভারতবাসীর পিতৃপুরুষের ভাগ্য যে এতদিনে একখানা সৎ সরকার পেয়েছে, সেটাই সম্ভবত বলার চেষ্টা করলেন। এ নিয়ে আলোচনা বৃথা, আমরা ইদি আমিন বা হিটলারকেও নিজের সরকারের প্রসংশা করতে শুনেছি। এরপরে কী বললেন? বললেন এই আট বছরে ভুল করেও এমন কাজ করিনি, যাতে লজ্জায় দেশের মানুষের মাথা হেঁট হয়ে যায়।

আসুন মিঃ প্রাইম মিনিস্টার, গুনে দেখা যাক, শুধুমাত্র এই ৮ বছরে আপনি এমন কী কী করেছেন, কী কী বলেছেন, যা দেখে শুনে আমাদের, দেশের মানুষদের লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। শুধুমাত্র বললাম কেন? কারণ আপনার গুজরাতের কলঙ্কিত ইতিহাস সবার জানা, পৃথিবী শুদ্ধু মানুষ জানে সেই কলঙ্কিত অধ্যায়ের কথা৷ যেদিন ভোটার লিস্ট বার করে মুসলমান খুন করা হয়েছিল, পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল পুতুলের মতো৷ আপনি ছিলেন প্রশাসনের মাথায়, আপনি ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাদই দিলাম সেই গুজরাত দাঙ্গার কথা৷ আসুন ২০১৪ পরবর্তী ইতিহাসই দেখা যাক। আমরা জানি, বিশ্বের সবাই জানেন, দেশ বিদেশের অর্থনীতিবিদরা জানেন, আপনিও জানেন স্যর, দেশের অর্থনীতি খুব ভালো কিছু ছিল না৷ কিন্তু যাই হোক করে অর্থনীতি চলছিল, খানিক হলেও জিডিপি বাড়ছিল৷ পার ক্যাপিটা ইনকাম বাড়ছিল৷ হঠাৎ আপনার মনে হল কিছু করা দরকার৷ আপনি নোটবন্দি আনলেন৷ মাস দেড়েক টাকা নেই৷ মানুষ এটিএম লাইনে, দুর্দশার একশেষ৷ এবং সবচেয়ে বড় কথা এখানেই শেষ নয়, সেই যে অর্থনীতি নীচুর দিকে নামা শুরু করলো, আর থামেনি, এখনও নামছে। সারা পৃথিবী দেখলো, বিশ্বের বাজারে ক্রমাগত উঠতে থাকা এক অর্থনীতিকে দায়িত্ব নিয়ে সেই দেশের প্রাধানমন্ত্রী খাদে ফেলে দিল, আমাদের লজ্জা হয়েছিল৷ আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছিল৷ এইজন্য নয় যে আপনি ভুল, চরম ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ এইজন্য যে সেই চরম ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরের দিনই, দেশের শিক্ষিত মানুষজন অর্থনীতিবিদরা আপনাকে সিদ্ধান্ত ফেরত নেওয়ার কথা বলেছিলেন৷ আপনি কথা কানে নেননি, বরং ব্যঙ্গ করেছিলেন। আপনার চূড়ান্ত অশিক্ষিত ভুল সিদ্ধান্তের জন্য দেশ এখনও মুল্য চোকাচ্ছে৷ হ্যাঁ আমাদের লজ্জা হয়৷ আপনার না হলে সেটা বোধ আর সংবেদনশীলতার ব্যাপার৷ সেটা সবার সমান হয় না।

এরপরেই আপনি আমেরিকায় গেলেন৷ সেই আমেরিকায় যেখানে ক’বছর আগে আপনাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ সেখানে গিয়ে বিশ্বের তাবত রীতিনীতি, ডিপ্লোম্যাটিক নর্মস ভেঙে বলে এলেন অবকি বার ট্রাম্প সরকার৷ বলা যায় না৷ এই বলার অপরাধে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়৷ আপনি বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ করে হাসলেন৷ আমাদের মাথা কাটা গেল লজ্জায়, ঘেন্নায়। একদেশের প্রধানমন্ত্রী অন্যদেশের রাষ্ট্রপতির নির্বাচনী প্রচার করছেন, জবাব দিয়েছেন আমেরিকার মানুষ৷ চরম হারের মালা পরানো হয়েছে ওই ট্রাম্পের গলায়৷ এবার বাইডেনের সঙ্গে গলা জড়াজড়ি, আবার লজ্জা। আমাদের লজ্জা হয় বৈকি যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে পরস্পর বিরোধী তথ্য দিতে থাকেন, এমন তথ্য যা খোলা চোখেই দেখে বলা যায় মিথ্যে, ফেক, জাল। এমন একটা বিষয় নিয়ে আপনি গ্র্যাজুয়েশন করেছেন? এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স, কী এটা? পিওনের চাকরিতেও বানানো শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হলে চাকরি চলে যায়, আর আপনার? আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যায়। মাথা হেঁট হয়ে যায় যখন দেখি, দেশের প্রধানমন্ত্রী অনর্গল মিথ্যে কথা বলেই চলেছেন, বলছেন এক স্টেশনে চা বিক্রি করতেন৷ জানা গেল, সেই স্টেশনই তখন ছিল না।

তিনি বলছেন, ই মেলে ছবি অ্যাটাচ করে পাঠিয়েছেন৷ যখন মেলের সঙ্গে ছবি অ্যাটাচ করার ব্যবস্থাই ছিল না৷ কেন বলছেন? প্যাথলজিক্যাল লায়াররা এমন বলে৷ আপনি কেন বলছেন? আমাদের মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে আসছে৷ আর একটা উদাহরণও পাচ্ছি না, আমাদের এর আগের কোনও প্রধানমন্ত্রী সর্বসমক্ষে এত মিথ্যে এর আগে বলেননি, আপনি বলেছেন। লজ্জা পাই, মাথা হেঁট হয়ে যায় যখন শুনি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখে আজগুবি কথা, অবৈজ্ঞানিক কথা, অশিক্ষিত কথা, যখন আপনি বলেন গণেশের মাথা জোড়া হয়েছিল প্ল্যাস্টিক সার্জারি দিয়ে৷ যখন আপনি বলেন মেঘের আড়াল দিয়ে প্লেন চললে রাডারে ধরা পড়ে না৷ তখন হাসি পায়, লজ্জাও পায়। এবং হাগুন্তির লাজ নেই দেখুন্তির লজ্জা আছে, সবাই জানে।

আপনি একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী, যে দেশ মহাত্মা গান্ধীকে জাতির পিতা বলে অবিহিত করে, নেতাজি বলেছিলেন, দেশের মানুষও সেটা মেনে নিয়েছেন, সেই গান্ধীকে যে লোকটা হত্যা করলো, গুলি করে মারলো, আপনার দলের সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর সেই গডসেকে দেশপ্রেমিক বললেন৷ তাকে জেলে পোরা হল না৷ তার সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়া হল না, আপনার লজ্জাও হল না, যে আপনি সেই দলের নেতা৷ আমরা লজ্জা পেয়েছি, জাতির জনকের হত্যাকারীকে যারা পুজো করে তাদের জন্য আমাদের ঘৃণা রইলো একরাশ৷ আর তাদের আপনি প্রশ্রয় দেন, আপনার জন্য আমাদের মাথা লজ্জায় হেঁট হয়।

অন্য সব দেশে কোভিড ছড়িয়েছে, লকডাউনও হয়েছে, কোথাও, কোথাও এরকম ছবি দেখেছি আমরা? পরিযায়ী শ্রমিকরা মাইলের পর মাইল হেঁটেছে, ট্রেনের চাকার তলায় কাটা পড়ে মারা গিয়েছে, রাস্তায় না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছে, অক্সিজেন ছিল না, ওষুধ ছিল না, মানুষের মৃতদেহ ভাসানো হয়েছে নদীর জলে, আপনার লজ্জা নেই৷ তাই লজ্জা পাননি, আমাদের সেই বোধ আছে, আমাদের কষ্ট হয়েছে৷ এমন পোড়ার দেশে জন্মেছি বলে লজ্জাও পেয়েছি। দেশের কৃষকেরা তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামল, তাদের ওপর লাঠি চললো, জলকামান চালানো হল, ৮০০ জন মারা গেলেন আন্দোলনের সময়ে, সেই তিনটে কৃষি কানুন আপনি রিপিল করলেন, ফিরিয়ে নিলেন, ৮০০ জনের প্রাণ চলে গেল৷ আপনি একবারের জন্যও দুঃখপ্রকাশ করলেন না। আপনার লজ্জা হল না৷ আমাদের কৃষক, আমাদের ৮০০ জন অন্নদাতাদের প্রাণ চলে গেল।

গণতন্ত্রের সূচকে আমরা পিছিয়ে, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে আমরা পিছিয়েই চলেছি, আপনার লজ্জা হয় না, আমাদের হয়৷ বুদ্ধ নানক, গান্ধীর দেশে গণতন্ত্রের এই দুর্দশা আর কখনও হয়নি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, এই তলানিতে নেমে আসা আমরা এর আগে দেখিনি, সারা পৃথিবীর সামনে লজ্জায় আমাদের মাথা নিচু হয়েছে বৈকি। একটা দেশ যেখানে, জ্যান্ত মানুষকে মুসলমান বলে পুড়িয়ে মারা হয়, যেখানে এক বৃদ্ধ অশক্ত মানুষকে চড় মেরে খুন করা হয়, কেবল এই অপরাধে যে সে পরিষ্কার করে বলতে পারেনি, যে আমি মুসলমান নই। একটা দেশ যেখানে আপনার দল, হ্যাঁ ভারতীয় জনতা পার্টি, দলের পতাকা নিয়ে ধর্ষণে অভিযুক্তকে হাজত থেকে ছাড়ার জন্য মিছিল করে, স্লোগান দেয়।

আপনার দল, দলের মুখ্যমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের কাছে বাবরি মসজিদ ভাঙা হবে না, এই মর্মে এফিডেবিট করার পরে, ষড়যন্ত্র করে, পরিকল্পনা করে শতাব্দী প্রাচীন এক সৌধকে ধুলোয় পরিণত করেছে, সেখানেই থেমে নেই, আরও ভাঙতে চায়, এখন আরো মন্দিরের নাম সামনে আনছে, কখন? যখন দেশের ২৩ কোটি মানুষ চলে গেছেন দারিদ্র সীমার নীচে, তখন আমাদের লজ্জা হয়, মাথা হেঁট হয়ে যায়। আপনার হয় না? ঘুমানোর আগে মনে হয় না যে এই রাতে কত শিশু অভুক্ত থেকে গ্যালো? লজ্জা হয় না যখন শোনেন আপনার রাজত্বকালেই রেকর্ড বেকারত্ব? আপনার হিসেব, আপনার সরকারের হিসেব বলছে বেকারত্ব বাড়ছে রেকর্ড হারে, আমাদের লজ্জা হয়, আপনার হয় না? ঘেন্না হয় যখন শুনি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, মানুষের জামাকাপড় দেখে, সেই মানুষের জাত বিচার করেন, এর থেকে লজ্জা জনক আর কিইই বা হতে পারে? সেই প্রধানমন্ত্রী, তেনার ৮ বছর শাসনের পরে, গুজরাটের রাজকোটে গিয়ে আবার মিথ্যেই বললেন, মিঃ প্রাইম মিনিস্টার, আপনার জন্য আমাদের মাথা হেঁট হয়েই আছে, এটা নতুন কিছু নয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে রণহুঙ্কার | পিএম কেয়ারের টাকা কোথায় গেল? প্রশ্ন তুললেন মমতা
05:14
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধের দামামা | সন্দেশখালি নিয়ে দিল্লিতে তোপ সাগরিকার
12:48
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে মুখোমুখি | তৃণমূলের আমলে একাধিক দুর্নীতি: ভাস্কর সরকার
06:55
Video thumbnail
Jelar Saradin | দেখে নিন জেলার সারাদিনের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি...
12:41
Video thumbnail
৪ টেয় চারদিক | রাজভবনে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, পুলিশি তদন্তের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন রাজ্যপালের
34:56
Video thumbnail
Sandeshkhali | অবিলম্বে গঙ্গাধর কয়ালকে গ্রেফতারের দাবি কুণাল ঘোষের
04:52
Video thumbnail
Sandeshkhali Viral Video | গঙ্গাধরকে ফাঁসানো হয়েছে, দাবি বিজেপি কর্মীদের
10:28
Video thumbnail
Mitali Bagh | আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগের গাড়িতে ভাঙচুর, অভিযুক্ত বিজেপি বলছে, জনরোষ!
08:16
Video thumbnail
Abhishek Banerjee | মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে কৃষ্ণনগরের কালীগঞ্জে অভিষেকের প্রচার
21:17
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar) | গরমে হিট শশা মাখা! ভিড় জমাচ্ছেন পথচলতি মানুষ
02:15