Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: নীতীশ কুমার, সুশাসনবাবু, পাল্টুমার, হাওয়ামোরগ, পার্মানেন্ট চিফ মিনিস্টার

চতুর্থ স্তম্ভ: নীতীশ কুমার, সুশাসনবাবু, পাল্টুমার, হাওয়ামোরগ, পার্মানেন্ট চিফ মিনিস্টার

Follow Us :

সবাই জানেন কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম, ইহাই শ্রমিকের ধর্ম। তো সংবাদ মাধ্যমে সেই ইচ্ছেটা হল সম্পাদকের, তেনার নির্দেশেই কাজ হয়, তেনার নির্দেশে আজও আমরা বিহার নিয়েই কথা বলব। অবশ্য এছাড়া আর কিই বা উপায়৷ গতকাল থেকে সমস্ত সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়াতে খবর, জোকস, স্ট্যাটিসটিকস, মিম, ছড়া এবং পন্ডিতদের অ্যানালিসিস। মহারাষ্ট্রের মন্ত্রিসভা তৈরি হল, কারও কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই৷ প্রত্যেকে বিহার নিয়ে লটকে আছেন। কেন? তার প্রধান কারণ হল এই ঘটনা নিয়মবহির্ভূত। কারণ গত ৬/৭ বছর ধরে আমরা জেনেছি সরকার ভাঙা গড়ার হক তো বিজেপির আছে৷ তাঁরা ইডি, সিবিআই, ভিজিলেন্স লেলিয়ে, টাকার থলে নিয়ে বের হবেন, রিসর্টে বসে দাম দস্তুর হবে, তারপর সরকার বদল হবে। কিন্তু এ তো উলটো ব্যাপার। চোখের সামনে বিহার চলে গেল বিরোধী শিবিরে। দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। এরপর হল মহারাষ্ট্র। তারপর বাংলা, বিহার, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ। সেই তালিকায় বিরোধী শিবিরে চলে গেল বিহার। বিজেপি বসে থাকবে না, যাকে বলে হিট ব্যাক, তার জন্য তৈরি হচ্ছে তারা৷ কিন্তু ঠিক এই মূহুর্তে সম্ভব নয়। কাজেই একটু অক্সিজেন পেয়ে আপাতত উল্লসিত কংগ্রেস সমেত বিরোধী শিবির। 

মাত্র কদিন আগেই বিজেপির শরিক দল নিয়ে আলোচনা করার সময় বলেছিলাম, জনতা দল ইউনাইটেড এখনও এনডিএতে আছে বটে, কিন্তু গতিক ভালো নয়৷ ক’দিন থাকবে কে জানে? ১৯ জুলাই চতুর্থ স্তম্ভের ৬২৯ নম্বর এপিসোডে কী বলেছিলাম, আবার বলছি, -ঠিক এই মূহুর্তে নরেন্দ্র মোদি–অমিত শাহের এনডিএর বড় শরিক দল বলতে আছে কেবল নীতীশ কুমারের জেডিইউ৷ সেটাও কতদিন থাকবে বলা মুশকিল৷ সম্ভবত একদা লালুসখা নীতীশ, তাঁর ব্যাটন তেজস্বী যাদবের হাতেই দিয়ে যাবেন, ওনার ইদানিং সময়ের গতিবিধি সেরকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। লোক জনশক্তি পার্টির দিকে তাকান, রামবিলাশ পাশোয়ানের ছেলেকে ভর করে, নীতীশ কুমারের ভোট কেটে জেডিইউর আসন কমিয়ে দিল বিজেপি৷ সেই লোক জনশক্তি দল কোথায়? তাহলে দাঁড়ালো কী? আদতে এক গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী, ক্যাডার বেসড বিজেপি দল, যা নাকি আরএসএসের নির্দেশে ভারতের রাজনীতিতে আছে, তাদের যুক্তফ্রন্টের কৌশল হল নিজেদের ক্ষমতা বাড়ানো, ধীরে ধীরে কেবল প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সহায়ক দলগুলোতে ভাঙন ধরিয়ে, তাদের নেতাদের ভেঙে এনে গিলে খাওয়া, তাদের লক্ষ্য পরিষ্কার- এক হিন্দু জাতি, এক রাজনৈতিক দল বিজেপি, এক নেতা, এক ভাষার ভিত্তিতে এক হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি করা৷

তাকিয়ে দেখুন সারা দেশের দিকে, শিবসেনা থেকে অকালি দল, টিডিপি থেকে পিডিপি, তৃণমূল থেকে অসম গণপরিষদ, ডিএমকে থেকে এমনকি বিজেডি, কেউই আর এনডিএতে নেই৷ বিজেপির এই অজগরের মতো গিলে ফেলার কৌশল আজ পরিষ্কার৷ তাই নীতীশ কুমার বিজেপিকে গা থেকে ঝেড়ে ফেললেন। এর পিছনে কোনও আদর্শ নেই, কোনও মতবাদ নেই, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জেহাদ ইত্যাদি কথাবার্তা যাঁরা বলছেন তাঁরা হয় নীতীশকে চেনেন না, নয় মূর্খ। নীতীশ কুমার সেই লোহিয়াইট সমাজতন্ত্রীদের মধ্যেই পড়েন, যাঁরা একদা জনতা দলের মধ্যে থেকেও জনসঙ্ঘের নেতারা কেন দ্বৈত সদস্যপদ রেখেছেন, কেন এখনও আরএসএসের সদস্যপদ বজায় রেখেছেন, এই কঠিন আদর্শগত প্রশ্ন রেখেছিলেন, মোরারজী দেশাই এর সরকার ভেঙে গিয়েছিল। তারপর তাঁদের মধ্যে এই নীতীশ কুমার, জর্জ ফার্নান্ডেজ বিজেপির অটল মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হয়েছেন৷ নীতীশকুমার বিজেপির সাহায্যে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ইন ফ্যাক্ট ওটাই তাঁর প্রথম বিহারের মসনদে বসা।

লালু জেলে যাচ্ছেন, রাবড়ি দেবী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন, ২০০৫ এর নির্বাচনে নীতীশ – বিজেপি জোট তৈরি হল। ২০০৫ এ মার্চের নির্বাচনে হাং অ্যাসেমব্লি, ঝুলন্ত বিধানসভা৷ তাই আবার নভেম্বরে ভোট৷ জিতল নীতীশ–বিজেপি জোট৷ কিন্তু সেবার নীতীশ ৮৮টা আসন পেলেন, বিজেপি ৫৫, অতএব দুজনে মিলে ১৪৩৷ এর ওপরে রামবিলাসের দলও ছিল৷ ২৪৩ এর বিধানসভায় ভালোই সংখ্যাগরিষ্ঠতা, নীতীশ মুখ্যমন্ত্রী হলেন৷ লালু জামানায় পিছড়ে বর্গের হাতে ক্ষমতা এসেছিল, ব্যাকওয়ার্ড, আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসের মানুষজন ক্ষমতার ভাগেদারি পেয়েছিল৷ কিন্তু পাল্লা দিয়ে ছিল দুর্নীতি, গুন্ডাগর্দি। নীতীশ এসে দারুণভাবে সামলালেন, রাস্তা ভালো হল৷ ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া হল৷ ছাত্রী সংখ্যা বাড়ল৷ বিদ্যুৎ এল গ্রামে৷ গুন্ডাদের বিরাট অংশ জেলে গেল৷ নীতীশ কুমার উপাধি পেলেন সুশাসন বাবু৷ উপাধি দিলেন বিহারের মানুষ। 

২০১০, পরের টার্ম, সুশাসনের ডিভিডেন্ড। আবার জোট বিজেপি–নীতীশের৷ এবার নীতীশ ১১৫, বিজেপি ৯১। ২৪৩ জনের বিধান সভায় ২০৬ প্লাস৷ কারণ এর সঙ্গে রামবিলাশ পাশোয়ানের এলজেপির বিধায়ক ছিল৷ মহিলাদের ভোট উপচে পড়ল নীতীশের বাক্সে, মূলত শান্তিশৃঙ্খলার প্রশ্নে। এইবার দেশের রঙ্গমঞ্চে নরেন্দ্র মোদির আগমন। শুরু থেকেই এই অমিত শাহ–মোদি জুটিকে অপছন্দের তালিকাতেই রেখেছিলেন নীতীশ কুমার। তাই ২০১৪ নির্বাচনে একলা চলো রে, একাই লড়লেন নীতীশ এবং ৪০ টা লোকসভা আসনের মধ্যে পেলেন ২ টো৷ হারের দায়ভার নিয়ে পদত্যাগ করলেন৷ বসালেন জিতন রাম মাঝিকে৷ তিনি বসেই গড়বড় শুরু করলেন৷ আবার বসলেন নীতীশ কুমার এবং নির্বাচন এসে গেল। ২০১৫। সবাইকে অবাক করে দিয়ে, বিজেপিকে ছেড়ে এবার মহাগঠবন্ধন, নীতীশ, কংগ্রেস, লালু৷ বিজেপি পেল মাত্র ৫৩ টা আসন, আরজেডি পেল ৮০টা, কংগ্রেস ২৭ আর নীতীশ ৭১৷ আরজেডির চেয়ে কম আসন পেলেও চাচা মুখ্যমন্ত্রী হলেন, ভাতিজা উপমুখ্যমন্ত্রী৷

চাচা ভাতিজার সরকারে বছর খানেকের মধ্যেই গন্ডগোল শুরু হল৷ এরমধ্যে নীতীশ নশাবন্দি চালু করেছেন৷ মদ বেচা কেনা বন্ধ, রাজস্ব কমেছে অনেকটাই৷ মোদি সরকারের অসহযোগিতা, এদিকে আরজেডির তেজস্বী যাদব নিজের ইমেজ তৈরি করছেন। নীতীশ তেজস্বীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন, রাতারাতি বিজেপির হাত ধরলেন৷ ব্যস আবার সরকার বদলে গেল৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী? সেই নীতীশ কুমার। 

২০২০-র নির্বাচন, নীতীশের উচ্চতা কমানোর জন্যই চিরাগ পাশোয়ানকে কাজে লাগানো হল৷ রেজাল্ট? নীতীশ পেলেন ৪৩ টা আসন, মাত্র ৪৩ টা। আর বিজেপি ৭৪। কেবল চিরাগ পাশোয়ানের জন্য নীতীশের দল হারাল কম বেশি ২৫/২৬ টা আসন। কংগ্রেস গুচ্ছ আসনে লড়ে ১৯ টা আর বামপন্থীরা ১৬ টা আসন পেল। সেই তখনই আজকের চিত্রনাট্য লেখা শুরু। মহরমের দিন অ্যাকশন, বললেন নীতীশ কুমার। মানে একটা কথা তো সোজা, ২০০৫ থেকে যে দলকে নিয়েই সরকার হোক না কেন, সরকারের মুখ্যমন্ত্রী? সেই নীতিশ কুমার। কোনও সাংবাদিক ওনাকে খালি বগি, রেল ওয়াগন বলেছেন, যাকে যে কোনও ইঞ্জিনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায়৷ উনি তা মিথ্যে প্রমাণ করে নিজেকেই ইঞ্জিন হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন৷ নিজের আয়তনের চেয়ে অনেক বড় সংখ্যাকে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। কেউ কেউ ওনাকে জিমন্যাস্ট বলেছেন, উনি নিজেকে সার্কাসের রিং মাস্টার হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন৷ উনি খেলিয়েছেন, অন্যরা খেলেছে মাত্র। এটাই তাঁর শেষ খেলা? সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে নীতীশের সম্পর্ক আবার আগের মত হয়ে যাবে, তা আর সম্ভব নয়। 

এবার মুখোমুখি লড়াই হবে, তীব্র হবে সংঘর্ষ। তার কারণ নীতীশের কাছে নিজেকে প্রমাণ করারই শুধু নয়, আবার জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে নিয়ে যাবার একটা সুযোগ তিনি হাতছাড়া করবেন না৷ কেবল সেই কারণেই ১৯টা মাত্র ১৯ জন বিধায়কের দল কংগ্রেস সভানেত্রীর সঙ্গে তিনি বার তিনেক আলাপচারিতা সেরে রেখেছেন, কংগ্রেস নেত্রীও জানেন, নীতীশ, পাওয়ার, ডিএমকেকে পেলে বিরোধী মঞ্চে তাঁর দলের হিসসেদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। নিজের ঘর বড় করতে গিয়ে অনেক সময়েই অসতর্ক আঘাত পড়ে যায় বাড়ির ভিতে, বাড়ি ভেঙে পড়ে। বিজেপি খানিকটা হলেও সেই অবস্থায়, তাড়াহুড়ো করে সব গিলতে গিয়ে দেশের একটা বড় দলের সমর্থনও তাদের দিকে তারা রাখতে পারেনি৷ তাদের এই গিলে খাবার প্রবণতা প্রত্যেক রিজিওনাল দল বুঝেছে৷ তারা নীতীশকে উদ্ধব ঠাকরে মনে করেছিল৷ আরসিপি সিংকে একনাথ শিণ্ডে বানিয়ে জেডিইউ ভেঙে বিহারে বিজেপির শাসন, বিলকুল গলত। গোড়ায় গন্ডগোল। নীতীশ নিজের কবজির জোরেই ২০০৫ থেকে আজ ওবদি মুখ্যমন্ত্রী৷ নিজের জোরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং দেশের একজন ওজনদার রাজনৈতিক নেতা। উদ্ধব বড় হয়েছেন বালা সাহেব ঠাকরের ছায়ায়, নীতীশ মাঠে ময়দানে রাজনীতিটা করেছেন। এবং বিজেপির কাছে সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হল, নীতীশ কুমার আহত বাঘ, আহত বাঘ বড় ভয়ঙ্কর।

RELATED ARTICLES

Most Popular