লিপস্টিক নিয়েও একটা বিশেষ দিন যে থাকতে পারে তা অনেকেরই ধারনার বাইরে! প্রত্যেক বছর ২৯ জুলাই পালিত হয় ন্যাশনাল লিপস্টিক ডে। অন্য দিনের তুলনায় এই দিনটিতে লিপস্টিক লাগানোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নারীত্ব ও সৌন্দর্যের প্রতিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় লিপস্টিক। তাই ন্যাশনাল লিপস্টিক ডে কে উপলক্ষ করে প্রত্যেক বছর তাদের লিপস্টিকের বিক্রির থেকে লাভের একটা ভাগ ব্রেস্ট ক্যানসারের মোকাবিলায় দান করে বিশ্বের সেরা কয়েকটি কসমেটিক ব্র্যান্ড।
লিপস্টিক নিয়ে এ রকমই একাধিক জানা অজানা তথ্য রইল ন্যাশনাল লিপস্টিক ডে-তে-
১. ১৮৮৪ সালে প্রথম কমার্শিয়াল লিপস্টিক তৈরি করেছিল ফ্রান্সের ব্র্যান্ড গাহলেইন (Guerlain)। আজ দেড় শতক পরেও বিশ্বের সব থেকে দামী লিপস্টিক তৈরির রেকর্ড রয়েছে সেই গাহলেইনের ঝুলিতে। ব্রান্ডের সব থেকে দামী ৪২ লাখ টাকার কিস কিস গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড(Kiss Kiss gold and diamond) লিপস্টিকের ঢাকনায় খচিত রয়েছে ১৯৯টি হিরে।
২. লিপস্টিকের জন্ম সুমেরীয় সভত্যার সময়। মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে প্রথম যে সভ্যতা গড়ে ওঠে সেটা হল সুমেরীয় সভ্যতা। সেই সময় নানা রকমের পাথরের গুঁড়ো দিয়ে মহিলা ও পুরুষ উভয় ঠোঁট রাঙিয়ে নিত। শুনেই চমকে যাবেন অনেকেই! আর বেস হিসেবে ব্যবহার করা হত হোয়াইট লেড(white lead)। এই হোয়াইট লেড বিষাক্ত।
৩. তবে শুধু সুমেরীয় সভ্যতা নয় লিপস্টিক লাগাত রোমানরাও। রেড ওয়াইন দিয়ে ঠোঁট রাঙিয়ে নিত তারা। ধনী রোমানরা আবার হোয়াইট লেডের সঙ্গে ফিউকাস নামে এক ধরনের বাদামি রঙয়ের শাওলা ব্যবহার করত। এখানেই শেষ নয়।
৪. প্রাচীনকালে লিপস্টিক তৈরি করতে ব্যবহার করা হত পোকা ও জন্তু জানোয়ারের দেহের অংশ। যদিও এখনও লিপস্টিক তৈরির ফর্মুলাতে একাধিক বদল এলেও এখনও আমিষ উপাদান যেমন মাছের আঁশ থেকে গুয়ানাইন, ভেঁড়ার লোমের থেকে ল্যানোলিন এবং চর্বি থেকে তৈরি গ্লিসারিন, শার্ক মাছে যকৃৎ , স্কোয়ালিন ও ককনিয়াল নামের বিশেষ ধরনের কীট গুঁড়িয়ে পাওয়া রজক ব্যবহার করে লিপস্টিক বেস কয়েকটি ব্র্যান্ড।
৫. এভাবে কীট পতঙ্গ টিপে (কারমাইন বিটেলস ও পিঁপড়ে থেকে) মেরে ফেলে সেগুলো থেকে রঙ বানিয়ে ঠোঁট রাঙানোর প্রচলন করেছিলেন সম্ভবত ক্লিওপেট্রা। নীল, কালো, কমলা, রানি কালারে ঠোঁট রাঙিয়ে নেওয়ার চল ছিল মিশরে। তবে ক্লিওপেট্রার প্রিয় রঙ ছিল লাল। সেই সময়ে মিশরে মহিলাদের পাশাপাশি লিপস্টিকের ব্যবহার করত পুরুষরাও।
৬. তবে রেড লিপস্টিকের আজকের যা গুরুত্ব তা পুরোটাই ম্যারিলিন মনরোর কারনে। আর ম্যারিলিন মনরোর ঠোঁটের আবেদনময়ী লাল রঙয়ের ব্যপারই আলাদা। শুধু রুবি রেড শেডের লিপস্টিক নয়। ম্যারিলিন মনরোর পছন্দের রঙ পেতে তার মেকআপ আর্টিস্ট আউটার লিপ লাইনে প্রথমে গাঢ় রঙয়ের লাল রঙ লাগাতেন, তারপর ঠোঁটের মাঝাখানে এক কোট হালকা লাল রঙ লাগিয়ে এবার এই দু’টো ভাল করে ঠোঁটের সঙ্গে মিশিয়ে নিতেন। এর ওপর লালের আরেকটি শেড লাগিয়ে নিতেন ঠোঁটে।
৭. ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানঞ্চেস্টারের একটি অধ্যায়নে জানা গেছে লাল লিপস্টিক সব থেকে বেশি আকৃষ্ট করে পুরুষদের । একটি সমীক্ষা অনুযায়ী জানা গেছে এই লাল রঙে রাঙানা ঠোঁটের দিকে পুরুষরা চেয়ে থাকে প্রায় ৭.৩ সেকেন্ড আর গোলাপি লিপস্টিকের দিকে তাকিয়ে থাকে অন্তত ৬.৭ সেকেন্ড তার তুলনায় রঙ বিহিন ঠোঁটে পুরুষরা চোখ রাখেন শুধু ২.২ সেকেন্ড।
৮. অন্যদিকে আবার লাল রঙয়ের লিপস্টিক একেবারে অপছন্দ করত প্রাচীন গ্রিসের মানুষ। তাদের মতে বেশ্যাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত মহিলারাই ঠোঁটে লাল লিপস্টিক লাগায়। পরবর্তী সময়ে আইনত যৌনকর্মীদের লাল লিপস্টিক ব্যবহারের জন্য বাধ্য করা হত যাতে এই মহিলাদের সহজেই চেনা যায়। ১৫০০ সালে ইংল্যান্ডের পুরুষ সমাজ লাল রঙয়ের লিপস্টিক লাগানো মহিলাদের শয়তানের দূতের আখ্যা দেয় এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঠিক করা হয়।
৯. ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তে পান পাতা ও সুপারি খেয়ে গাঢ় লাল রঙ দিয়ে ঠোঁট রাঙানোর চল ছিল।
১০. মেক্সিকোর একটি অনলাইন বিপণি সংস্থা লিনিওর সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ভারত সহ ৫০টি দেশের মধ্যে গড়পড়তা লিপস্টিকের দাম ভারতে সব থেকে কম। দাম ৯২৬ টাকা।