শীতকালে দ্রুত ওজন বাড়ে। আর তাই অনেকেই ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে জিমে যাওয়া শুরু করেন। আবার স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন এমনও অনেকে আছেন যাঁরা ওজন বাড়ুক বা না বাড়ুক নিয়ম মেনে কোনও ফাঁকি না দিয়েই বারো মাস জিমে যান। সুস্থ থাকতে শরীরচর্চা অত্যন্ত আবশ্যক। আর তাই কেউ যোগাসন করেন, কেউ বাড়িতে শরীরচর্চা করেন আবার কেউ নিয়মিত জিমে যান। কিন্তু সাম্প্রতিককালে যেভাবে জিমে ওয়ার্কআউট করতে গিয়ে অসু্স্থ হয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন সেলিব্রেটি থেকে সাধারণ মানুষ তা রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে ‘ফিটনেস ফ্রিক’ থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের।
এই ধরণের প্রত্যেকটি মৃত্যুর ক্ষেত্রে যেটা দেখা গিয়েছে তা হল মৃত্যুর আগে এরা প্রত্যেকই যথেষ্ট সুস্থ ছিলেন। কোথাও কোনওরকম শারীরিক সমস্যা দেখা যায়নি। এখন প্রশ্ন উঠছে তা হলে কেন এমন ঘটছে? জিমের মধ্যে কোথায় লুকিয়ে বিপদ?
জিম করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে একাধিক সমস্যা
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিককালে জিম করতে গিয়ে কারও কোমরে ব্যথা, কারও শিড়দাঁড়ায় চোট, কারও আবার টেন্ডন ছিঁড়ে গিয়েছে। তবে এর থেকেও মারাত্মক জিমে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন একের পর এক সেলিব্রিটি ও আম জনতাও। জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা রাজু শ্রীবাস্তব, সিরিয়াল এর জনপ্রিয় অভিনেতা সিদ্ধান্ত সূর্যবংশী, সিদ্ধার্থ শুক্লা, কন্নড় সিনেমার অভিনেতা পুনিত রাজকুমারের মৃত্যু হয়েছে জিম ওয়ার্কআউট করতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। রাজু শ্রীবাস্তব ছাড়া এঁদের প্রত্যেকের বয়সই ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যে। এমনকী সম্প্রতি যে তরুণী জিমে গিয়ে মারা গেছেন তাঁর বয়স আরও কম। চিকিৎসকদের মতে , জিমে শুধু শরীরচর্চা নয় বরং অতিরিক্ত শরীরচর্চা করে ফেলছেন অনেকেই। কার দৈহিক ক্ষমতা কতটা তা পরখ না করেই শুরু করছেন ওয়ার্কআউট। জিমে হাজারো রকমের আধুনিক সরঞ্জাম থাকে তবে সেই সব সরঞ্জাম ব্যবহার করার ক্ষমতা বা প্রয়োজনীয়তা প্রত্যেকের আছে কী না সেটা জানা অত্যন্ত জরুরী।
জিমে গিয়ে স্পন্ডেলাইটিস
সম্প্রতি জিমে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা সানি খান। বয়স ৩২। জিম করতে শুরু করেন মাস খানেক আগেই। হঠাৎ করে শুরু হয় ঘাড়ে ব্যথা। জিমে ট্রেনারকে বিষয়টা জানানো হলেও তিনি বিশেষ আমল দেননি। এই অবস্থায় জিমে যাওয়ার ফলে ব্যথা আরও বেড়ে যায়। এরপর বাধ্য হয়ে সানি চিকিৎসকের কাছে যান। এক্সরে করা হয়। ধরা পড়ে তাঁর স্পন্ডেলাইটিস শুরু হয়েছে। আপাতত তাঁর জিম করা বন্ধ।
কী বলছেন চিকিৎসক
ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ মৌলিমাধব ঘটক জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারও শারীরিক সমস্যা আছে কী না তা বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। বিশেষ করে কোনও ব্যক্তির হৃদযন্ত্র অতিরিক্ত শরীরচর্চার ক্ষমতা রাখে কী না , তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। ফলে ওজন কম করতে কিংবা নিজেকে ফিট রাখার হিড়িকে শুধু যে জিম করতে শুরু করেন তা নয় বরং দৈহিক পরিশ্রমের লেভেল আপ করতে থাকেন। আর এখানেই বিপদের সূত্রপাত।
জিম করতে ফিটনেস সার্টিফিকেট
ডাঃ ঘটক আরও জানাচ্ছেন, জিমে গিয়ে কে কী রকম ওয়ার্কআউট করতে পারবে তার একটা ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার নিয়ম চালু করা উচিত। জিমে গিয়ে ইচ্ছে মতো ওয়ার্কআউট করলেই যে সেটা শরীরের জন্য উপকারী হবে তেমনটা নাও হতে পারে। তাই জিমে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত শরীরচর্চা করে বিপদ ডেকে না আনাই উচিত। কারণ ফিট থাকতে গিয়ে অনেকেই একাধিক শারীরিক সমস্যার শিকার হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ দুর্ভাগ্যজনকভাবে চির বিদায় নিচ্ছেন।