আই এস এল ডার্বিতে পর পর তিন বার হারার পর শনিবার যে কোনও ভাবেই হার এড়াতে চায় এস সি ইস্ট বেঙ্গল। তবে তাদের ডিফেন্সের যা অবস্থা তাতে কাজটা সহজ হবে বলে মনে হয় না। তেরো ম্যাচে নয় নয় করে মোট ২৫টি গোল খেয়েছে ইস্ট বেঙ্গল। এক নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড ছাড়া এত গোল কেউ খায়নি। চোদ্দ ম্যাচে ২৮ গোল খেয়েছে খালিদ জামিলের ছেলেরা। তবে তাদের পয়েন্ট এখন দশ। ইস্ট বেঙ্গলের চেয়ে এক পয়েন্ট বেশি। ইস্ট বেঙ্গল তাই আছে পয়েন্ট টেবলের একেবারে নীচে। এগারো নম্বরে।
পর পর চারটে ম্যাচের মধ্যে দুটো ড্র এবং একটি জয়ের পর লাল হলুদ সমর্থকরা খানিকটা আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাদের টিম নিয়ে। কিন্তু হায়দরাবাদের কাছে চার গোলে হার তাদের সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। আবার হারের আশঙ্কায় লাল হলুদ সমর্থকরা শুধু ভাবছেন শনিবার যেন হারতে না হয়। কিন্তু আদিল শেখ এবং তাঁর সতীর্থরা যে ডিফেন্সে খেলছেন তারা কি গোল আটকাতে পারবে। শনিবার হয়তো হীরা মণ্ডল শুরু করবেন প্রথম থেকেই। হায়দরাবাদ ম্যাচে তাঁকে পরের দিকে নামানো হয়েছিল। তবে বিরতির আগেই তিন গোলে পিছিয়ে পড়া ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে তিনি খুব একটা কিছু করতে পারেননি। আদিল শেখের সঙ্গী ছিলেন ফ্রানিও পার্সে। পেনাল্টি মিস করা ছাড়া তাঁকে সেভাবে নজরে পড়েনি। ডান দিকে অমরজিৎ মন্দের ভাল। তবে বক্সের মধ্যে বিপক্ষের আক্রমণের সময় তাঁকে বেশ নড়বড়ে ঠেকেছে। আর এদের পিছনে গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য সম্পর্কে যতই কম বলা যায় ভাল। আই এস এল-এর অন্যতম সিনিয়র গোলকিপার অরিন্দম খুবই বাজে ফর্মে আছেন। হায়দরাবাদ ম্যাচে প্রথম গোলটা খুবই বাজে খেয়েছেন। তাঁর গ্রিপিংয়ে সমস্যা আছে। এরিয়াল বল কোনও রকমে ঘুসি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রথম শ্রেণীর গোলকিপারের কাছে থেকে আরও ভাল খেলা আশা করা যেতেই পারে। সাতাশে নভেম্বর এই বছরের প্রথম ডার্বিতে বাইশ মিনিটে তিন গোল খেয়ে চোট পেয়ে বসে যান অরিন্দম। তাঁর চোটটা শরীরে না মনে তা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে।
এই ডিফেন্স এবং গোলকিপার নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল হার এড়াতে পারে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ মোহনবাগানের ডিফেন্সে একটু সমস্যা থাকলেও তাদের আক্রমণভাগ বেশ ভাল। হুগো বুমো খেলতে পারেননি ওড়িশা ম্যাচে। তাঁর কার্ড সমস্যা ছিল। শনিবারের ম্যাচে তাঁকে পাওয়া যাবে। ফরাসি মিডফিল্ডার বুমোকে গত বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফ সি থেকে অনেক টাকায় নিয়ে এসেছে মোহনবাগান। বুমো তাঁর প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এখন পর্যন্ত পাঁচটি গোল করেছেন তিনি। সঙ্গে তিনটি অ্যাসিস্ট আছে। সবুজ মেরুন আশা করছে ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারবেন বুমো। শুধু বুমোই নন, খুবই ভাল ফর্মে আছেন লিস্টন কোলাসো। এই গোয়ান লেফট উইঙ্গার এখন পর্যন্ত নটা গোল করে ফেলেছেন। ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই এখন টপ স্কোরার। বাঁ দিক দিয়ে তাঁর দৌড় এবং সুযোগ পেলেই গোল করা তাঁকে বিপক্ষের কাছে আতঙ্ক করে তুলেছে। ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্সকে তিনি যে সমস্যায় ফেলবেন তা অনুমান করা যায়।
মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দোর কাছে সমস্যা হল রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসকে এক সঙ্গে নামানো নিয়ে। ওড়িশা ম্যাচে দুজনকে এক সঙ্গে নামিয়েছিলেন তিনি। কৃষ্ণ প্রথম দিকে খুবই ভাল খেলছিলেন। পরে তিনি ম্যাচ থেকে হারিয়ে যান। তাঁর বদলে জুয়ান নামান প্রবীর দাসকে। ম্যাচের সহজতম সুযোগটি নষ্ট করেন প্রবীর। ছয় গজের মধ্য থেকে তিনি বল উড়িয়ে দেন বারের উপর দিয়ে। আর কৃষ্ণকে তুলে নেওয়ার জন্য মিডিয়ার এক অংশে সমালোচিত হন জুয়ান। প্রবীর দাস গোলটা করে ফেললে কথা উঠত না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জুয়ান কি শনিবার কৃষ্ণ এবং উইলিয়ামসকে শুরু থেকেই নামাবেন? কারণ বুমোকে মাঝ মাঠে এবং ডিফেন্সে তিরি খেললে আর মাত্র দুজন বিদেশির জায়গা হবে। সেখানে মাঝ মাঠে কার্ল ম্যাকহিউকে বসিয়ে দুই বিদেশি স্ট্রাইকারে খেলার ঝুঁকি কি নেবেন জুয়ান। কারণ তাঁর হাতে লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং কিংবা হুগো বুমোর মতো গোল করার লোক আছে। ডিফেন্সে এ বছরের মতো অভিষেক হতে পারে সন্দেশ ঝিঙ্গনের। তবে দীর্ঘ দিন মাঠের বাইরে থাকা সন্দেশকে এ রকম একটা বড় ম্যাচে নামানো ঠিক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
ইস্ট বেঙ্গলের সামনের দিকটা বরং পেছনের চেয়ে ভাল। বিশেষ করে সাসপেনশন থেকে আন্তোনিও পেরোসেভিচ ফেরায় এবং ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার মার্সেলো দলে যোগ দেওয়ায় ফরোয়ার্ড লাইন আগের চেয়ে ভাল। ডিপ ডিফেন্সে ফ্রানিও পার্সে এবং মাঝ মাঠে ড্যারেন সিডিওলকে নিয়ে লাল হলুদ কোচ মারিও রিভেরা তাঁর দল সাজাতে পারেন। এর সঙ্গে লড়াকু এক ঝাঁক পাহাড়ি ছেলে লাল হলুদের লড়াইকে অন্য মাত্রা দিতে পারে। কিন্তু সমস্যা তো হচ্ছে ডিফেন্স এবং গোলকিপার। তারা দক্ষতার শেষ বিন্দুতে না পৌছলে আবার না ভরাডুবি হয় ইস্ট বেঙ্গলের।