কলকাতা: সিনেমা এমন একটি মাধ্যম যা পরিচালকের। সেই জাহাজের ক্যাপ্টেন ,তার কথাতেই নির্ধারিত হয় গতিপথ। কৌশিক গাঙ্গুলীর সাম্প্রতিকতম ছবি অযোগ্য মূলত তিনজন মানুষের গল্প। প্রসেন , পর্ণা এবং রক্তিম। অভিনয়ে যথাক্রমে প্রসেনজিৎ, ঋতুপর্ণা ও শিলাজিৎ। কোভিড কালে চাকরি হারানো রক্তিমের স্ত্রী পর্না গৃহবধূর জীবন ছেড়ে চাকরি করতে আসে। আর কৈশোরের প্রেমিক প্রসেন ঘটনাচক্রে রক্তিমের বন্ধু হয়ে ওঠে। সে বন্ধুত্বের সুবাদেই রক্তিমের বাড়ি এসে আবিষ্কার করে তার অতীত প্রেমিকাকে। এই তিনজনের সম্পর্কের মধ্যে ডানা মেলে রয়েছে প্রায় ২২ বছর আগের ঘটনা। অতীতের লেনদেন, সুখ-দুঃখ, প্রেম বিরহ ছায়া ফেলে বর্তমানের ঘটনা প্রবাহে। গল্প এত দূর পড়ার পর যারা ভাবছেন যে এটা চিরাচরিত ত্রিকোণ প্রেমের গল্প বাস্তব তা নয়। আর এখানেই ছবিটির সম্ভাবনা ছিল অনেকটাই।
কিন্তু এখানেই জাহাজ তার পথ হারালো বা ক্যাপ্টেন জাহাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না। টেলিভিশন চ্যানেলের অসাধারণ কিছু টেলিফিল্ম তৈরি করা এবং পরবর্তীকালে বড় পর্দায় নিজের সিগনেচার সিনেমা তৈরি করা কৌশিক গাঙ্গুলী ক্রমশ এই ছবিতে নিয়ন্ত্রিত হলেন নায়কের তারকা ইমেজে। “শব্দ” বানিয়েছেন যিনি তার তো এমন হওয়ার কথা ছিল না। মনে পড়ে তাহাদের কথা সিনেমায় মিঠুন চক্রবর্তীর শরীরী ভাষা। এই ছবিতে শিলাজিতের কিছু সংলাপ ছাড়া তাকে কখনোই চাকরি হারানো বিপন্ন মানুষ হিসেবে তুলে ধরতে পারেননি কৌশিক। ঝিন্টি বৃষ্টি হতে পারতো কিনা জানিনা তবে বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বিপন্ন মানুষকে তুলে ধরতে পারেননি শিলাজিৎ, আর সে দায় পরিচালক কৌশিককেই নিতে হবে।
উল্টো দিকে এই ছবি প্রসেনজিৎ ঋতুপর্ণার জুটির ৫০ তম ছবি তো বটেই, তবে তার থেকেও অনেক বেশি এই ছবি প্রসেনজিৎ এবং প্রসেনজিতেরই। ঋতুপর্ণার অভিনয় দেখানোর সুযোগ খুব বেশি ছিল না। তাহলে এই ছবি কি আসলে একটা মার্কেটিং প্যাকেজ? যেখানে খুন আছে, প্রেম আছে, আবার সম্পর্কের নানা অলিগলিও আছে। বিশেষ করে ছবির শেষে যেন তৃতীয় শ্রেণীর বলিউড থ্রিলারের ছায়া। তবে সেখানেও প্রসেনজিৎ অনবদ্য।
তাহলে একথা বলাই যায় এই ছবি নায়কের ছবি। তার দাপটে মুগ্ধ দর্শক। কিন্তু পরিচালকের কি হলো? আমরা তো জানতাম কৌশিকের ছবির শেষে সেই সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখার ” পোস্ত দানার মত” কিছু একটা থেকে যায়। এ প্রসঙ্গে পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের কথা ধার করে বলা যায়, এই ছবি এক আধুনিক রেফ্রিজারেটর, যার একটা সুইচ টিপলে গান শোনা যায়, একটা সুইচ টিপলে ডাইনিং রুম ভরে যায় আলোয়, চাইলে তার গুঁজে ফোনও রিচার্জ করে নেওয়া যায়, কিন্তু খাবার ঠান্ডা হয় না। মূল পথ থেকে সরে গিয়ে এই সিনেমা কিছু দৃশ্যের সমাহার হিসেবেই থেকে যায়। এই ছবিতে আমরা সেই কৌশিক গাঙ্গুলিকে পাইনি। তবে তার ক্ষমতা ও যোগ্যতা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই , তাই অপেক্ষা থাকবে কৌশিকের পরবর্তী ছবির।