কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি! নাকি মানবিক ঋণের মানবিক প্রতিদান! ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য এখন আশ্রয় দিচ্ছে পোল্যান্ড। ইতিহাসের দিকে পিছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, প্রায় ৮০ বছর আগে যুদ্ধবিধ্বস্ত পোল্যান্ডের হাজারখানেক শিশুর প্রাণরক্ষা করেছিল ভারত। হ্যাঁ, অবাক হলেও এটা সত্যি!
কেউ কি জানেন, পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ’র প্রাণকেন্দ্রে একটি পার্ক রয়েছে, যার নামকরণ করা হয়েছে গুজরাতের জামনগরের মহারাজা দিগ্বিজয় সিংয়ের নামে। মহাত্মা গান্ধী নন, কেন জামনগরের মহারাজা পোল্যান্ডে এত জনপ্রিয়? তা জানতে পিছন ফিরে তাকাতে হবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাল। ১৯৩৯ সাল। পোল্যান্ড আক্রমণ করল জার্মানি। কয়েক হাজার পোলিশ সেনা প্রাণ হারালেন যুদ্ধে। শয়ে শয়ে অনাথ হল তাদের শিশু, স্ত্রী ও পরিবার। ১৯৪১ সাল পর্যন্ত যাদের ঠিকানা ছিল পোল্যান্ডের একটি যুদ্ধপীড়িতদের শিবির। কিন্তু তারপর রাশিয়া এই শিবির থেকে বিতাড়িত করে তাদের। প্রায় হাজারখানেক শিশু তখন পোল্যান্ড ছেড়ে অজানা ভবিষ্যতের উদ্দেশে পাড়ি দেয়। কেউ সমুদ্রে একা নৌকায় চড়ে। কেউ বা মায়ের সঙ্গে।
কিন্তু, ভাগ্য তাদের সহায় হল না। বিশ্বযুদ্ধ বিদীর্ণ কোনও দেশই ঠাঁই দিল না, এইসব ঠাঁইনাড়াদের। রাজনৈতিক আশ্রয় না পেয়ে তারা দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়াল। ঘুরতে ঘুরতে তাদের নৌকা এসে মুম্বইয়ে। ভারতে তখন ব্রিটিশরাজ চলছে। তারাও উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে চাইল না। সেই অসহায় অবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়ালেন জামনগরের মহারাজা। আশ্রয় দিলেন তাদের।
আরও পড়ুন-Russia Ukraine War LIVE: খারকিভে রাশিয়ানদের লাগাতার হামলা, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি
জামনগরের থেকে প্রায় ২৫ কিমি দূরে বালাচড়ি গ্রামে ভিটেছাড়া এই শিশুদের আশ্রয় দিলেন দিগ্বিজয় সিং। এরপর অবশ্য পোল্যান্ড সরকার তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। সেই মহানুভবতার স্মৃতিস্মারক হিসেবে ১৯৮৯ সালে রাজধানী ওয়ারশতে একটি পার্কের নামকরণ করা হয় জামসাহেব নামে। এখনও প্রায় প্রতিবছরই পোল্যান্ড থেকে মানুষ আসেন গুজরাতের এই গ্রামে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের কাছ থেকে যে আতিথেয়তা পেয়েছিল পোল্যান্ড, তা তারা আজও ভোলেনি। ইতিহাসের পাতা উলটে তাই আজ তারা ভারতীয়দের আশ্রয় দিয়ে ‘অতিথি দেব ভব’ ধর্ম পালন করছে।