কলকাতা: পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Election 2023) চারদিন আগেও যখন জেলায় জেলায় রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা অব্যাহত, তখন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য (DG Manoj Malviya) সাফাই, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রের মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, ২-৩টি ঘটনা ঘটলেও পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। ডিজির দাবি, উপর মহলের নির্দেশ রয়েছে, কোথাও হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। রাজ্য পুলিশের অধিকর্তার এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনায় সরব বিরোধীরা।
ঝাড়খণ্ডের ডিজি অজয় কে সিংহ, বিহার পুলিশের ডিজি আরএস ভাট্টির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যের ডিজি। তার পরের সাংবাদিক বৈঠকে ওই মন্তব্য করেন এ রাজ্যের ডিজি। মনোনয়ন পর্ব এবং তার পরবর্তী সময়েও রাজ্যে হিংসার অভিযোগ উঠছে। রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ওঠা অভিযোগ নিয়ে ডিজি সংবাদমাধ্যমের ঘাড়ে দোষ চাপালেন। তিনি বলেন ছোট কোনও ঘটনা ঘটলে সেটাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম এমন ভাবে দেখাচ্ছে, যা উচিত নয়।দু-তিনটে ঘটনা হচ্ছে, যেখানে পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করেছে। উপর মনহল থেকে নির্দেশ রয়েছে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে বলে।
রাজ্যের বেলাগাম হিংসার মধ্যেই রাজ্যে পুলিশের ডিজি মতে জেলায় জেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু সমীকরণ বলছে, অন্য কথা গত ২৪ দিনে রাজ্যে রাজনাতিক হিংসায় ১৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে। ডিজি যখন বলছে রাজ্য শান্ত তখন মঙ্গলবারই সকালে তৃণমূল- সিপিএমের সংঘর্ষ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কুলতলি। অন্যদিকে আইএসএফ তৃণমূলের সংঘর্ষে উত্তপ্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার হটুগঞ্জ। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী। এদিন গোসাবা, বাসন্তিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মনোনয়ন পর্বের মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে কংগ্রেস কর্মী খুন হয়। ক্যানিং, ভাঙড়, ডোমকল, রানীনগর, চোপড়া, দিনহাটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ভাঙড়ে তৃণমূল আইএসএফ সংঘর্ষে মৃত্যু হয় তিনজনের। প্রার্থীদের ভয় দেখানো, মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ দেওয়া নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন: Panchayat Election | বিজেপির মহিলা প্রার্থী সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য, বিতর্কে তৃণমূল নেতা
সোমবার দুবরাজপুরের যশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পছিয়াড়া গ্রামের তেঁতুল পাড়ার শেখ জানে আলমেরবাড়ির থেকে এক জার তাজা বোমা উদ্ধার করল দুবরাজপুর থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে প্রায় ১৫- ১৬ টি তাজা বোমা রয়েছে। রবিবার রাতেই হাড়োয়ার (Haroa)শালিপুরে বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে একজনোর। রবিবার রাতেই বাসন্তিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় এক যুব তৃণমূল কর্মীর। একাধিক জায়গায় অশান্তিতে বাড়িঘর ভাঙচুর, বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যের হিংসা নিয়ে সোমবারই বাসন্তীতে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বলেছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশ যথাযত পালন না হলে, যেখানে রিপোর্ট দেওয়ার আমি সেখানে রিপোর্ট দেব।
এই হিংসার মাঝেই পুলিশের ডিজির মন্তব্যে বিরোধীরা ক্ষুব্ধ। প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, পুলিশকে ঠুটো করে রেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। চারিদিকে হিংসার ছবি স্পষ্ট, সেখানে ডিজি বলছে রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে পুলিশ তাঁদের মানবিকতা বোধ হারিয়ে ফেলেছে। বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, পুলিশ রাজ্য সরকারের দলদাসে পরিণত হয়েছে। চারিদিকে এত হিংসা হচ্ছে আর উনি বলছেন দু-তিনটে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। ডিজি কি চোখে ঠুলি পড়ে বসে থাকেন।