কলকাতা: টানা দেড় মাস ধরে নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে খোঁজ মিলল নিউটাউনের বাঙালি মহিলা আনন্দিতা দে-র। জানা গিয়েছে, বিল মেটাতে না-পারায় আনন্দিতাকে ওই হোটেলে কার্যত আটকে রাখা হয়েছে। রবিবার শ্রীনগরের সেই হোটেল থেকে আনন্দিতার অথর্ব বৃদ্ধা মা মীনা দেবীর কাছে ফোন আসে। তাতে বলা হয়, হোটেলের ঘরে আটকে আনন্দিতা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনারা তাঁকে হোটেল থেকে নিয়ে যান।
পুরো ঘটনাটি জানিয়ে মিনা দেবী নিউটাউনের টেকনো সিটি থানায় ফোন করেন। তাঁর অভিযোগ, সবকিছু জানা সত্ত্বেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জানানো হয় বিধাননগর সিটি পুলিশেও। পুলিশ প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না দেখে অসহায় বৃদ্ধা মিনা দেবী পুরো ঘটনা জানিয়ে সাহায্য চান রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। তাতেও কোন সুরাহা মেলেনি।
মূলত বাগবাজারের বাসিন্দা মিনা দেবী। কয়েক বছর আগে তিনি ডিভোর্সি মেয়ে আনন্দিতাকে সঙ্গে নিয়ে বাগবাজার থেকে নিউটাউন এ চলে যান। আনন্দিতা মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁর চিকিৎসা চলছে। মিনা দেবীর বয়স ৭০-এর উপর। তিনি এতটাই অসুস্থ যে, বিছানা থেকে নামতে পারেন না। অনিন্দিতার বয়স ৪১।
মিনা দেবী জানান, দেড় মাস আগে হঠাৎ করে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় অনিন্দিতা। এর কয়েক দিন পর অনিন্দিতা নিজেই আমাকে টেলিফোন করে। বলে, আমি শ্রীনগরের একটি হোটেলে আছি। আমি আর ফিরব না। তুমি আমাকে গুগল পে-র মাধ্যমে টাকা পাঠাও। হোটেলের বিল মেটাতে হবে। সেই কথা শুনে মিনা দেবী অনিন্দিতাকে টাকা পাঠাতে গিয়ে দেখেন তার মোবাইল ডিঅ্যাক্টিভেট হয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন – লালগড়ে আগ্নেয়াস্ত্র সহ ধৃত বিজেপি নেতা!
এর পর শ্রীনগরের সেই হোটেল থেকে ম্যানেজার নিজেই মিনা দেবীকে ফোন করেন। বলেন, শ্রীনগরের অবস্থা ভালো নয়। যে কোনও সময় পুলিশ হোটেল সিল করে দিতে পারে। আপনারা বিল মিটিয়ে তাড়াতাড়ি হোটেল থেকে অনিন্দিতাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। কিন্তু মীনা দেবীর কোনও আত্মীয়-স্বজন নেই। পরিচিতির সংখ্যাও খুব কম। আরও অসহায় হয়ে পড়েন। মেয়ের চিন্তায় আরও অসুস্থ হতে শুরু করেন। একজন পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জানান নিউটাউনের টেকনো সিটি থানায়। থানা থেকে একজন অফিসার বাড়িতে আসেন। সবকিছু শুনেও তিনি ফিরে যান। মীনা দেবীর অভিযোগ, শ্রীনগরে আজ যাবো-কাল যাব বলে পুলিশ বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে।
ইতিমধ্যেই শ্রীনগরের সেই হোটেল সিল করে দিতে বলে পুলিশ। হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যায় সকলে। রবিবার মীনা দেবীর কাছে আবার ফোন আসে। তাতে বলা হয়, অনিন্দিতা ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাড়াতাড়ি আপনারা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু কী ভাবে ফেরাবে? মিনা দেবী নিজেই তো অথর্ব। এর পর তিনি দ্বারস্থ হন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের।