কলকাতা: ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। শুক্রবার বিকেলে লাদাখের লেহ থেকে বিশেষ বিমানে পানাগড়ে উড়িয়ে আনা হয়েছে পাঁচ কোম্পানি এবং দুই প্লাটুন (প্লাটুনে ৩৫ জন থাকেন) কেন্দ্রীয় বাহিনী (Central Force)। সেখান থেকেই ওই বাহিনীকে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর কাজ শুরু হয়ে যায় বলে কমিশন সূত্রের খবর। তবে ৪৮৫ কোম্পানির মধ্যে কত কোমন্পানি বাহিনী এল তা এদিন দুপুর পর্যন্ত কমিশন জানাতে পারেনি।
এদিকে এদিন সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে মেল করে জানিয়েছে, ভোর রাতের মধ্যেই সমস্ত বুথে ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে যাবে। জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ. কর্নাটক, বিহার, ওড়িশা, এবং অন্ধপ্রদেশ থেকে ওই বাহিনী আসছে। কমিশনের হিসেব সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৬০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছে। এরই মধ্যে বিএসএফের আইজি নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে রাত ৮টার মধ্যে প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
এদিন সকাল থেকে জেলায় জেলায় ভোটকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে যেতে শুরু করেন। সন্ধ্যার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ বুথে ভোট কর্মীরা পৌঁছে গিয়েছেন বলে নির্বাচন কমিশনের দাবি। তবে ভোটকর্মীদের অভিযোগ, বহু জেলায় সন্ধ্যা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের দেখা মেলেনি। আদৌ শনিবার সকাল সাতটায় ভোট শুরু হওয়ার আগে সমস্ত বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছবে কি না, তা নিয়ে ভোটকর্মীদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে কলকাতা টিভি ডিজিটালের প্রতিনিধিরাও জানিয়েছেন সন্ধ্যা পর্যন্ত বহু বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এদিন কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে সমন্বয়কারী বিএসএফের আইজি এস সি বুডাকোটির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। সব মিলিয়ে কমিশনের হাতে যে পরিমান বাহিনী থাকবে তাতে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান দেওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। বৈঠকে বিএসএপ কর্তা জানান, তাদের সার্ভিস ম্যানুয়ালে রয়েছে যে অন্তত হাফ সেকশন করে বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। সাধারণত এক সেকশনে আট জন করে জওয়ান থাকেন। হাফ সেকশন মানে চার জওয়ান। বিএসএফের যুক্তি পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে বেশ উদ্বেগ রয়েছে বাংলায়। সেখানে কোথাও একজন বা দুজন জওয়ান থাকলে অনেক ঝুঁকির আশঙ্কা থেকে যায়। অনেকে মিলে ঘিরে ধরে একজন বা দুজন জওয়ানের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ছিনতাইও করে নিতে পারে। তাই অন্তত চারজন করে জওয়ান একসঙ্গে মোতায়েন করতে হবে। বিএসএফ কর্তা এই আলোচনার বিষয়বস্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও জানিয়ে দিয়েছে। কমিশন বিএসএফ কর্তার যুক্তি মেনে নিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: Congress on Rahul Gandhi | রাহুলের পাশে কংগ্রেস, দাদার হয়ে মোদিকে কী বললেন বোন প্রিয়াঙ্কা?
রাতে কমিশনের এক কর্তা জানান, এখন পর্যন্ত ৬০০ কোনম্পানি বাহিনী এসেছে পৌঁছেছে। সেক্ষেত্রে মাত্র ১৫ হাজার বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা যাবে। কমিশনের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, তাহলে আর কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে বড় বড় কথা বলে লাভ কী। বিরোধীদের অভিযোগ, আসলে প্রথম থেকেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে উদাসীন থেকেছে। আদালতে মান বাঁচানোর জন্যই তারা নাম কা ওয়াস্তে বাহিনী মোতায়েন করা কথা বলছে।
বিএসএফের আইজিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ৪৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে আলিপুরদুয়ারে ১০, বাঁকুড়ায় ১৬, বীরভূমে ২০, কোচবিহারে ১৬, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৯, দার্জিলিঙে ৪, হুগলিতে ৩৮, হাওড়ায় ২৯, জলপাইগুড়িতে ১১, ঝাড়গ্রামে ৩, মালদহে ২৩, মুর্শিদাবাদে ৪৭, নদিয়ায় ৩৩, উত্তর ২৪ পরগনায় ৩৬, পশ্চিম বর্ধমানে ৫, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩২, পূর্ব বর্ধমানে ৩৩, পূর্ব মেদিনীপুরে ৩৬, পুরুলিয়ায় ১১, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৫৮, উত্তর দিনাজপুরে ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে।