ওড়িশা এফ সি–৪ ইস্ট বেঙ্গল-২
(পেড্রো-২, জেরি, নন্দ কুমার) (হাওকিপ, মহেশ সিং)
একটা টিম বিরতির সময় দু গোলে এগিয়ে থেকে শেষ ৪৫ মিনিটে কী করে চার গোল খায় তার কোনও সঙ্গত ব্যাখ্যা স্টিভন কনস্ট্যানটাইনের ছেলেরা দিতে পারবেন না। নিজেদের মাঠে, নিজেদের সমর্থকদের সামনে লাল হলুদের এই অসহায় আত্মসমর্পণের পর শুধু একটা কথাই বলা যেতে পারে এই টিম বড় কোনও কিছুর জন্য এখনও প্রস্তুত নয়। প্রথম ছটা ম্যাচে দুটো ম্যাচ জিতে ইস্ট বেঙ্গল কোচ বেশ গর্বের সঙ্গেই বলেছিলেন, এভাবে চললে প্রথম ছয়ে থাকার রসদ তিনি জোগার করে নেবেন। কিন্তু এক দিনের মধ্যেই যে সেই টিমকে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে তা তিনি কেন কেউই ভাবেননি। ভাবা সম্ভবও ছিল না। প্রথমার্দ্ধে ইস্ট বেঙ্গলের দাপট এবং জোড়া গোলে এগিয়ে থাকা দেখে কেউ কি ভাবতে পেরেছিল এই টিমটাই বিরতির পর চার গোল খাবে? বলাই বাহুল্য ডিফেন্সের দোষে চারটে গোল হজম করতে হয়েছে ইস্ট বেঙ্গলকে। এর মধ্যে দুটো গোলই হয়েছে রাইট ব্যাক অঙ্কিত মুখার্জির পাশ দিয়ে। একটা গোল অঙ্কিতের বদলি সার্থক গোলুই নামার কয়েক সেকেন্ড পরেই। সেই ডান দিক দিয়েই। তবে এর জন্য শুধু অঙ্কিত বা সার্থককে দায়ী করলে হবে না। গোটা ডিফেন্সটাই দায়ী। বিরতির পর নেমে ৪৭ এবং ৪৮ মিনিটে দুটো গোল করে খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছেন পেদ্রো মার্টিন। সঙ্গত কারণে তিনিই ম্যাচের সেরা। আর ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে যাঁরা প্রথমার্দ্ধে ফুল ফোটালেন সেই ভি পি সুহেরদের ম্যাচের শেষে মুখ কালো। এই জয়ের পর ওড়িশা ছয় ম্যাচ খেলে ১২ পয়েন্ট নিয়ে উঠে এল তিনে। আর সাত ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল পড়ে রইল আটেই।
ওড়িশার সঙ্গে ইস্ট বেঙ্গলের লড়াইয়ে বরাবরই ওড়িশা এগিয়ে। এই ম্যাচের পর স্কোর লাইন দাঁড়াল ৪-১। এর মধ্যে প্রতিবেশী রাজ্যের দলটির কাছে ছয় গোল কিংবা পাঁচ গোলও আছে। কিন্তু ৩৫ মিনিটের মধ্যে দু গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল এবার মনে হয় ইস্ট বেঙ্গল পুরনো অপমানের শোধ তুলবে। কিন্তু কোথায় কী? সেই তো অন্ধকার। অথচ প্রথমার্দ্ধে ইস্ট বেঙ্গলের খেলা দেখে বলবে বিরাট লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে। স্টিভন কনস্ট্যানটাইন দলটা গড়ার চেষ্টা করছেন। চোট আঘাত না থাকলে তিনি প্রথম একাদশেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেন। গোলে সেই কমলজিৎ। সার্থক গোলুইয়ের জায়গায় অঙ্কিত মুখার্জি। তাঁর পাশে ইভান গঞ্জালেস এবং লালচুংনুঙ্গা লাল। আহত জেরির বদলে লেফট ব্যাকে প্রীতম সিং। মাঝ মাঠে সুহের, চার্লস কিরিয়াকু, জর্ডন ডোহার্টি এবং নাওরম মহেশ সিং। সামনে ক্লেটন সিলভা এবং সেম্বই হাওকিপ। এই টিম শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে একটার পর গোলের পরিস্থিতি তৈরি করছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ঠিক মতো শট না নেওয়ার কারণে গোল হচ্ছিল না। সেটা এল ২৩ মিনিটে। ডোহর্টির একটা লং থ্রূ পাস ধরে সুহের চমৎকার বল রাখলেন হাওকিপের জন্য। ডান পায়ের শটে অমরিন্দরকে হার মানালেন হাওকিপ। বারো মিনিট যেতে না যেতেই আবার গোল ইস্ট বেঙ্গলের। এবারও গোলের পিছনে সুহের। তবে এবার বলটা তিনি বাড়ালেন বাঁ দিক থেকে। এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকা মহেশ সিং চমৎকার শটে ২-০ করে দিলেন।
এর পর আর ম্যাচে কিছু থাকে না। কিন্তু সেটা যে কী ভয়ঙ্করভাবে থাকল না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। পরিবর্ত স্ট্রাইকার পেদ্রো মার্টিন নামলেন। ৩০ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ স্ট্রাইকারটি নেমেই পর পর দুটো গোল করে ফেললেন। দিয়েগো মরিসিওর বাড়ানো বলে ঘাড়ের কাছে ইভান গঞ্জালেসকে নিয়ে তিনি লম্বা শটে প্রথম গোলটা শোধ করলেন। এবং প্রথম গোলের রেশ মিলিয়ে যেতে না যেতেই দ্বিতীয় গোল। এবার বাঁ দিক থেকে ভেসে আসা বলে হেড করে। বাঘ যেমন রক্তের স্বাদ পেলে শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে ছিন্নভিন্ন করে দেয় সেভাবেই ওড়িশা ছিঁড়েখুড়ে খেল ইস্ট বেঙ্গলকে। ৬৫ মিনিটে বাঁ দিক থেকে ভেসে আসা সেন্টারে আলতো হেডে গোল করলেন জেরি। তখন কোথায় ইস্ট বেঙ্গলের ডিফেন্ডাররা? গোলকিপার কমলজিৎ তো ফ্লাইট মিস করলেন। তবে ইস্ট বেঙ্গলের হেনস্থা আরও বাকি ছিল। অঙ্কিতের বদলি সার্থক নামার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর পাশ দিয়ে বল নিয়ে মাট ঘেঁষা শটে গোল করলেন নন্দ কুমার। এবং এভাবেই শেষ হল ইস্ট বেঙ্গলের দুঃস্বপ্নের রজনী।