কলকাতা: রাজ্য নির্বাচন কমিশনার (State Election Commission) নিয়োগ নিয়ে জটিলতা অব্যাহত। গত রবিবার আগের কমিশনার সৌরভ দাসের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের পদটি ফাঁকা। এরই মধ্যে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose) তৃতীয় একটি নাম চেয়ে পাঠিয়েছেন রাজ্য সরকারের কাছে। মঙ্গলবার রাজভবনে গোয়ার প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানের পর রাজ্যপাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সঠিক সময়ে কমিশনার নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে নবান্নের তরফে পরবর্তী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রাক্তন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহার নাম পাঠানো হয়েছিল রাজভবনে। রাজ্যপাল রাজীবের সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য চেয়ে পাঠান। পরে নবান্ন রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পদমর্যাদার অফিসার অজিতরঞ্জন বর্ধনের নাম পাঠায়। তবুও তৃতীয় নাম চেয়ে পাঠিয়েছে রাজভবন। এবার কার নাম পাঠানো হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে নবান্নে।
আইন অনুসারে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ব্যাপারে রাজভবনের বিশেষ এক্তিয়ার নেই। রাজ্য সরকারই নাম চূড়ান্ত করে রাজভবনে পাঠায়। রাজভবন তাতে সিলমোহর দেয় শুধু। তবে এবার একের পর এক কমিশনারের নাম নিয়ে রাজভবন যেভাবে আপত্তি তুলছে, তা নজিরবিহীন বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল। যদিও নবান্নের (Nabanna) যুক্তি, এর আগে এ কে সিংহ অবসর নেওয়ার বেশ কয়েক দিন পর কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন সৌরভ দাস।
আরও পড়ুন: Bayron Biswas | TMC | দল বদলের পরই নিরাপত্তা বাড়ল বায়রনের
নবান্ন সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Elections) কবে হবে, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ২৪ এপ্রিল তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) বলেছিলেন, ওই কর্মসূচি শেষ হলে পঞ্চায়েত ভোট হবে। নবজোয়ার শেষ হওয়ার কথা জুনের শেষে। যদিও বিরোধীরা এ ব্যাপারে অভিষেকের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর (Adhir Chowdhury) মন্তব্য ছিল, নবান্ন চুপ, মুখ্যমন্ত্রী চুপ, রাজ্য নির্বাচন কমিশন নীরব। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে মুখ খুলছেন তৃণমূলের সাংসদ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, রাজ্যে কি সমান্তরাল প্রশাসন চলছে?
রাজ্য নির্বাচন কমিশন আইনের ২৪৩ (ই) ধারা অনুযায়ী আগের বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পরের পঞ্চায়েত ভোটের প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। আইন মোতাবেক যেদিন প্রথম বোর্ড মিটিং হবে, সেদিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর বোর্ডের মেয়াদ থাকে। সেই হিসেবে ২০১৮ সালে গঠিত পঞ্চায়েতগুলির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ৩১ অগাস্ট। আইনে তার আগেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বলা আছে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪৮ হাজার ৬৫০টি আসনের মধ্যে ১৬ হাজার ৮৬১টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন শাসকদলের প্রার্থীরা। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৯ হাজার ২১৭টির মধ্যে ৩ হাজার ৯৮টি আসনে বিনা লড়াইয়ে এবং জেলা পরিষদে ৮২৫টির মধ্যে ২০৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন শাসকদলের প্রার্থীরা। অভিযোগ, সেবার প্রায় দুই কোটি মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি।
এবার অবশ্য অভিষেক আগেই বলেছেন, পঞ্চায়েত ভোটে কোনও গা-জোয়ারি বরদাস্ত করা হবে না। করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে বহিষ্কার করা হবে, তা তিনি যত বড় নেতাই হন না কেন। বিরোধীরা অবশ্য অভিষেক-আশ্বাসে বিশ্বাস করতে নারাজ। বিরোধী নেতাদের কথায়, এখন থেকেই শাসকদলের বড়, মেজ, সেজ, কুচো নেতারা যেভাবে হুমকি দিচ্ছেন, তাতে পঞ্চায়েত ভোট কেমন হবে, বোঝাই যাচ্ছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, আমরা তো আওয়াজ তুলেছি, তারিখ দাও, পঞ্চায়েত ভোট করো। তৃণমূল পঞ্চায়েত ভোট করতে চায় কি না, তা নিয়েই তো সংশয় জাগছে।