কলকাতা: কে জিতবে? ভারত না অষ্টমীর (Ashtami) রাত! এই দ্বন্দ্বেই শুরু হল ভিড়ের ছক্কা হাঁকা। সকালে অঞ্জলি (Anjali) ও ভোগ খাওয়ার পরেই টিভির সামনে বসে পড়া। মহম্মদ শামি তখন একের পর এক নিউজিল্যান্ডের অসুর বধ করছেন। আর মণ্ডপের ভিতরেই চিৎকার উঠছে আউট। দেখ কেমন লাগে! নিউজিল্যান্ড গুটিয়ে যাওয়ার পরই সব রাজপথ জনতার পদতলে। আজ যে অষ্টমী। পুজো (Durga Puja) আজ রাতে মধ্যগগনে। আজ রাতের কোনও ভোর হবে না।
সন্ধ্যায় বাগবাজারে সন্ধিপুজো দেখতে বিপুল ভিড়। দক্ষিণেশ্বর থেকে আসা অসীমাদেবী ও তাঁর স্বামী কৌশিকবাবু বললেন, সাত বছর ধরে সন্ধিপুজো দেখতে আসি। আরতি দেখে ফিরি। এমন পুজো আর কোথাও হয় না। বাগবাজার স্ট্রিটের উপর দিয়ে তখন গঙ্গার জোয়ার বয়ে চলেছে। বর্ষার ক্ষুরধারা নদীর অবস্থা রবীন্দ্র সরণির। বাগবাজার সেরে বেরিয়েই কুমোরটুলি, কুমোরটুলি পার্ক, বেনিয়াটোলা, আহিরীটোলা থেকে শোভাবাজার রাজবাড়ি।
আরও পড়ুন: মাকে কুপিয়ে খুন, গ্রেফতার অভিযুক্ত
কিন্তু পথ আগলে দাঁড়িয়ে জনতারূপী অসুর। গাড়িঘোড়া প্রায় বন্ধ। বাস, ছোট গাড়ি মায় বাইক গলার জায়গা নেই কোথাও।
একটা ঠাকুর দেখতেই ঘণ্টা গড়িয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাগুলো নেতিয়ে পড়ছে হেঁটে হেঁটে। হাতিবাগানের গ্রে স্ট্রিট অবরুদ্ধ জনসমুদ্রে।
যানজট পেরিয়ে শিয়ালদহ চত্বরে পৌঁছানোর আগেই নেমে হাঁটতে লাগলাম। লক্ষ্য অযোধ্যার রামমন্দির। শহরটা দেখে মনে হতে লাগল গণ হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত। লোকে শুধু হেঁটে চলেছে। দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে অবিরাম পদব্রজে চলেছে গোটা একটা জাতি।
বিবেকানন্দ রোড থেকে মানিকতলা পর্যন্ত বাস ও অন্য গাড়ি সার দিয়ে দাঁড়িয়ে। একজনকে জিজ্ঞাসা করায় জবাব দিলেন, পুরো ২২ মিনিট এক জায়গায় রয়েছি। শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে এসে দেখলাম গোটা রাজ্যটাই বোধহয় ভর করেছে শহরটার উপর। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো এক-একটা ট্রেন থেকে লোক এসে মিশে যাচ্ছে মহানগরের শরীরে। তাদের বহুবর্ণ, বহু ভাষা, বহু ধর্মও। এখানেই জিত ইন্ডিয়ার। এক এক ঘণ্টার ওভারে জমছে ভিড়রূপী রানের পাহাড়। একী শুধু থিমের টান, নাকি মা দুর্গার আকর্ষণ। কে জিতবে অষ্টমীর রাতের এই ম্যাচে? আজ যে হোল নাইটের খেলা।
সরতে সরতে চলে এলাম বেহালার কাছে। সেখানেও একই দশা। মানুষের দল হামলে পড়ছে। নিঃসহায় পুলিশ। খাবারের স্টলগুলিতে যেন বুভুক্ষু মানুষের জমায়েত। রোল বিকোচ্ছে ৬০ টাকায়। পাশের তাওয়ায় চলছে চাউ রান্নার পাহাড়। কেউ জানে না, কী খাচ্ছে। রাঁধুনির শরীর থেকে নেমে আসা ঘামের স্রোতেই চলছে চাউয়ের চচ্চড়ি রাঁধা।
নিউ আলিপুরের দিকে এগোতে গিয়ে দেখলাম অবরুদ্ধ গাজার মতো রাস্তার অবস্থা। মানববর্মে ঢাকা চওড়া রাজপথ। যেভাই হোক, আজ ম্যাচ বের করে আনতেই হবে। কাল যদি বৃষ্টিতে পণ্ড হয়। তাই নবমীনিশির প্রতীক্ষা নয়। মেঘ-অসুর যদি আসেও তাহলে আজই প্রকৃতিকে দুয়ো দিয়ে দিল অষ্টমীর রাতের কলকাতা।
শ্রেয়ারা এসেছে হাওড়ার ডোমজুড় থেকে। ওদের এক বন্ধুর বাড়ি বারাসত। গোলপার্কের কাছে দাঁড়িয়ে একটু জিরোচ্ছিল। না, বলা ভালো কী করে ফিরবে তার রণকৌশল ফাঁদছিল। মেট্রো যা হাল তাতে ভরসা নেই। বাসের অবস্থা আরও খারাপ। তার মধ্যেই গ্রুপের একজন প্রস্তাব দিল বাবুবাগান আর যোধপুর পার্কটা বাদ রয়ে গেছে। ওরা কী করল, তা আর দেখা হয়নি। ভিড়ের ঠেলায় চলে এসেছি গড়িয়াহাট মোড়ের কাছে।
একডালিয়া পার্কে তখন কত ভিড়? পুলিশও ন জানন্তি কুতো মনুষ্যা! এবারের ভিড়ের রকমটাই ছিল এটা। মহালয়ার পরদিন থেকে শুরু হয়েছে ঠাকুর দেখা। কোথায় কত মানুষের পদচিহ্ন পড়েছে, তার কোনও হিসাব সত্যিই নেই। একমাত্র বলতে পারবেন খোদ মা দুগ্গাই। কারণ মহিষাসুরকে বধ করলেও বাঙালির উৎসাহের কাছে হেরে গিয়েছেন হরের ঘরণী। জিতেছে বঙ্গের জনগণেশ। হাতে এখনও শেষ ওভার বাকি রয়েছে।
আরও খবর দেখুন