পাটনা ও নয়াদিল্লি: সমগ্র নারীজাতির প্রতি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের (CM Nitish Kumar) ‘মর্যাদাহানিকর’ মন্তব্য নিয়ে রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতি তোলপাড়। শেষমেশ প্রবল চাপের মুখে তাঁর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন ইন্ডিয়া জোটের (INDIA Alliance) কারিগর নীতীশ কুমার। বিহার বিধানসভার (Bihar Assembly) শীতকালীন অধিবেশনের তৃতীয় দিন অর্থাৎ আজ, বুধবার সভার শুরু থেকেই বিজেপি বিধায়করা হইহট্টগোল শুরু করে দেন। নীতীশ বলেছেন, আমার কথায় যদি কারও আঘাত লেগে থাকে, তাহলে তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আর যাঁরা তাঁর ভুল ধরিয়ে দিয়ে সমালোচনা করেছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী।
জাতীয় রাজনীতিতে পোড়খাওয়া ও সুভদ্রজন বলে পরিচিত নীতীশ কুমারের মুখে এহেন বক্তব্যে তাঁর দলেও অস্বস্তি বেড়েছে। যদিও উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি (RJD) নেতা তেজস্বী যাদব এই অবস্থায় পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর। বিরোধী দল বিজেপি ছাড়াও জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW) ও দিল্লি মহিলা কমিশন (DCW) এই ঘটনায় নীতীশের নিঃশর্ত ক্ষমা দাবি করে। একই সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটকেও নিন্দার দাবি তুলেছে।
আরও পড়ুন: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের ইডির তলব
ঘটনাটি গতকাল, মঙ্গলবার বিহার বিধানসভায় ঘটে। জাতিভিত্তিক জনগণনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সভায় পেশ করার পর তার উপর আলোচনাকালে নীতীশ কুমার আচমকাই বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন। জন্ম নিয়ন্ত্রণে নারীশিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, বিয়ের পর থেকে পুরুষরা রোজ রাতে সঙ্গমে ইচ্ছুক থাকে। কিন্তু, মেয়েরাই পারে তাদের সংযত করতে। আর তাতেই জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিহারে নারীশিক্ষার প্রসার হয়েছে। শিশুকন্যা যদি শিক্ষিত হয়, তাহলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণও সহজ হবে। এটা বোঝাতে গিয়ে নীতীশ আরও বলেন, মেয়েদের বিয়ে হলেই স্বামীরা রোজ রাতে সঙ্গমে মিলিত হতে চায়। তাতে একটি করে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু, পড়াশোনা জানা মেয়েরা সেটা আটকাতে পারে। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঠেকানো অনেক সহজ হয়ে পড়বে।
নীতীশের এই মন্তব্যের পরেই সভায় হাসির হুল্লোড় ওঠে। মহিলা সদস্যরা খেপে লাল হয়ে যান। অনেকে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে থাকেন নীতীশের দিকে। পরে রাজ্য বিজেপি নেতা তারকিশোর প্রসাদ বলেন, এই কথাটাই মুখ্যমন্ত্রী একটু ভদ্র ভাষায় বলতে পারতেন। বিজেপির মহিলা নেত্রী নিক্কি হেমব্রম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী একটু পরিশীলিত ভাষায় বললে কী ক্ষতি হত! মহিলাদের সম্পর্কে কোনও সম্মানজ্ঞান নেই তাঁর।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর এই বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বার্তা-যুদ্ধ বেধেছে উদ্ধব সেনার এমপি প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদির সঙ্গে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মার। দুই কমিশনই মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। জাতীয় মহিলা কমিশন নিন্দায় বলেছে, নারী স্বাধীনতা ও মহিলাদের পছন্দ-অপছন্দের ক্ষেত্রে এই জাতীয় মন্তব্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি। কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা এ বিষয়ে নীতীশের ক্ষমা দাবি করেন।
অন্য় খবর দেখুন