মুম্বই: আদ্যপান্ত এই বাঙালি পরিচালক মুম্বইতে থেকেই কাজ করতেন। তাঁর কেরিয়ারে বহু উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞাপনের কাজ করেছেন তিনি। জীবনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের হিন্দি ছবি করেছিলেন বাংলা গল্প নিয়ে। হ্যাঁ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পরিণীতা’ (Bengali Writer Sarat Chandra Chattopadhya’s Parineeta)। এই ছবিতেই প্রথম জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন আজকের প্রতিষ্ঠিত বলিউড অভিনেত্রী বিদ্যা বালান (Bollywood Actress Vidya Balan)।ছবিতে এই বাঙালি চরিত্রে অভিনয় করে সর্বভারতীয় দর্শকদের যথেষ্ট নজর কেড়েছিলেন বিদ্যা।এই ছবিতে কাজ করার পর বলিউডে বিদ্যা বালানকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অভিনেত্রী বিদ্যার কথায়,’পরিণীতা’ ছবিতে তাঁকে প্রথমে নিতে চাননি ছবির প্রযোজক বিধু বিনোদ চোপড়া। তাঁকে রাজি করিয়েছিলেন পরিচালক প্রদীপ সরকারই। নিজের হাতে সাজিয়েছিলেন এই অবাঙালি অভিনেত্রীকে বাঙালি চরিত্রে।বিদ্যা ছাড়াও এ ছবিতে ছিলেন সইফ আলি খান ও সঞ্জয় দত্ত।
আরোও পড়ুন: Pradeep Sarkar Passes Away | নিভল বলিউডের প্রদীপ, প্রয়াত ‘পরিণীতা’ পরিচালক প্রদীপ সরকার
প্রদীপ সরকার (Bollywood Director Pradip Sarkar) কোন বাংলা ছবি না করলেও বলিউড ছবিতেই বাঙালিয়ানার ছাপ রেখেছিলেন। যা তাঁর ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায়। শুধু তাই নয়, প্রদীপের সমস্ত ছবি জুড়ে থাকতো নারীত্বের জয়গান (Celebrates Feminity )। সে ‘পরিণীতা’ হোক কিংবা ‘মর্দানি’ (Mardaani) অথবা ‘লাগা চুনারি মে দাগ’ কিংবা (Laaga Chunari Mein Daag), ‘হেলিকপ্টার ইলা’ (Helicopter Eala)।
আজ শুক্রবার ভোরে এই নক্ষত্রপতনে স্তব্ধ বলিউড।পরিচালকের বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন কিডনির রোগে। চলছিল ডায়ালাইসিস। পাশাপাশি কমে গিয়েছিল শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রদীপের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের বলিউড ছবি ‘পরিনীতা’। বড় পর্দায় বিদ্যা বালানের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল এই ছবির মাধ্যমে। শরৎচন্দ্রের সৃষ্টি করা বলিষ্ঠ নারী চরিত্রের পর্দায় সার্থক রূপ দিয়েছিল পরিচালক প্রদীপ। নিখুঁতভাবে পর্দায় এই বাঙালি নারী চরিত্রকে সফলভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন প্রদীপ সরকার।
‘লাগা চুনরি মে দাগ’ ছবিতে উঠে এসেছে এক মহিলার জার্নি।পতিতাবৃত্তির মত পেশাকেও হাসিমুখে গ্রহণ করেছে এক নারী। বিভাবরী থেকে নাতাশা হয়ে ওঠার সফর আপামর দর্শককে নাড়িয়ে দিয়েছিল। যে চরিত্রে দেখা গিয়েছিল বলিউডের আর এক বাঙালি অভিনেত্রী রানি মুখার্জিকে।ছাড়াও ছবিতে ছিল আরো দুই বাঙালি অভিনেত্রী জয়া ভাদুড়ি এবং কঙ্কনা সেন শর্মা।
এরপর পরিচালক তৈরি করেছিলেন রানি মুখার্জিকে নিয়ে দ্বিতীয় ছবি ‘মর্দানি’। দুধে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে রানির অভিনয় সকলের নজর কেড়েছিল। এই ছবিতেও নারীত্বের জয়জয়কার। বক্স অফিসের সাফল্যের পাশাপাশি সমালোচকদের কুর্ণিশ কুড়িয়েছিল এ ছবি।
অন্যদিকে বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়া ‘হেলিকপ্টার’ এর ইলা চরিত্রর সঙ্গে নতুন প্রজন্মের মেয়েরা নিজেদেরকে যুক্ত করতে পেরেছিল। একজন মায়ের লড়াইকে পর্দায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন পরিচালক। সেখানেও নারীত্বের ধ্বজা।
মৃত্যুর আগে শেষ পরিকল্পনা করেছিলেন কঙ্গনা রানাওয়াতকে নিয়ে নটী বিনোদিনীর বায়োপিক হিন্দিতে তৈরি করবেন বলে। মঞ্চ সফল এক ঐতিহাসিক বাঙালি নারীর কাহিনী রূপোলি পর্দায় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন প্রদীপ। শুরু হয়ে গিয়েছিল ছবির প্রিপ্রোডাকশনের কাজও। কিন্তু নিভে গেল প্রদীপ।
জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রূপোলি পর্দায় এই প্রতিষ্ঠিত বলিউড বাঙালি পরিচালক নারীত্বের জয়গান গেয়ে যেতে চেয়েছিলেন।