Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeFourth Pillar | কংগ্রেসের জোকার অধীর চৌধুরী এবং গান্ধী পুরস্কার    ...
Array

Fourth Pillar | কংগ্রেসের জোকার অধীর চৌধুরী এবং গান্ধী পুরস্কার      

Follow Us :

গান্ধী পুরস্কার দেওয়া হল গীতা প্রেসকে। এ নিয়ে আমার সেদিনই বলা উচিত ছিল, কিন্তু পাটনায় বিরোধী বৈঠক, মোদিজির দেশে ফিরে দেশ মে কেয়া চল রহা হ্যায় ইত্যাদি মন্তব্য নিয়ে আমি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি দুঃখিত, এ নিয়ে আমার সেই দিনই বলা উচিত ছিল, যাই হোক বেটার লেট দ্যান নেভার। ক’দিন আগেই ১৮ জুন গান্ধী পুরস্কার দেওয়া হল গীতা প্রেসকে। আগে জেনে নিই গান্ধী শান্তি পুরস্কার ব্যাপারটা কী? কারণ আমাদের রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির মতো অনেকেই এই পুরস্কার সম্বন্ধে কিছুই জানেন না। এই পুরস্কার চালু হয় ১৯৯৫-এ, মহাত্মা গান্ধীর নীতি আদর্শের দিশায় চলতে থাকা সংগঠন বা গান্ধীজির অনুপ্রেরণায় চলেছেন, শান্তি, সুরাজের কথা বলেছেন এমন মানুষদের এই গান্ধী পুরস্কার দেওয়া হয়। এরজন্য এক কমিটি আছে, যে কমিটিতে পাঁচজন থাকেন, প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস, লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা বা সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তাঁরা বসে সিদ্ধান্ত নেন কাকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। এই পুরস্কারের অর্থমূল্য এক কোটি টাকা এবং একটা ট্রফি ও সম্মানপত্রও দেওয়া হয়। যেটা এবার গোরখপুরের গীতা প্রেস পেল। তো খবরটা কী? এর আগে যে পুরস্কার মুজিবর রহমান পেয়েছেন, যে পুরস্কার ইসরো পেয়েছে, সুলভ ইন্টারন্যাশনালের মতো সংগঠন পেয়েছে, এবারে সেই পুরস্কার একটা প্রেস পেয়েছে যারা ১৯২৪ সাল থেকে তাদের যাত্রা শুরু করে এবং এই ১০০ বছরে ৪১ কোটির বেশি বই ছেপেছে। কেবল গীতা বিভিন্ন ভাষায় ছেপেছে ১৬ কোটি, সেই সংগঠন এবার গান্ধী শান্তি পুরস্কার পেল। তো গীতা তো এক ধর্মগ্রন্থ যা বহু মানুষ পড়েন, বহু আলোচনাও হয়। 

সেই কবে ১৬ জুলাই ১৯৪৫ এ আমেরিকার আলমোগার্দো মরুভূমিতে কিছু বৈজ্ঞানিক খুব গোপনে প্রথম পরমাণু বোমার প্রথম পরীক্ষা করেন, হঠাৎ সহস্র সূর্যের আলোয় চোখ ঝলসে যাওয়া বৈজ্ঞানিকদের প্রধান, যিনি তখন এই ম্যানহাটান প্রজেক্টের ডিরেক্টর, সেই ডঃ রবার্ট ওপেনহাইমার সংস্কৃত ভাষার ভক্ত ছিলেন, গীতাও পড়েছিলেন, সেই ওপেনহাইমার অনেক পরে ১৯৬৫তে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন সেই চোখ ঝলসে যাওয়া আলোর সময় চোখ বন্ধ করে আমি গীতার একটা শ্লোকের কথাই মনে করছিলাম, “কাল অস্মি লোকাক্ষয়কৃৎ প্রবৃদ্ধ” “I am the death, destroyer of worlds.” আমিই মৃত্যু, আমিই বিশ্বে সংহারক। কেউ ভগবানের কথা মনে করেই গীতা পড়েন, কেউ উৎসুক হয়ে, কেবল হিন্দুরাই গীতা পড়েন তাও নয়, রবার্ট ওপেনহাইমার একজন নিষ্ঠাবান ইহুদি ছিলেন, গীতা পড়ে হিন্দু হয়ে যাননি, কিন্তু গীতা মন দিয়েই পড়েছিলেন। তো যাই হোক ১৬ কোটি গীতা ছাপা তো কম কথা নয়। ৪১ কোটি বই ছাপাও এক বিরাট ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই পুরস্কার পাওয়ার পরেই টুইট করেছেন, মণিপুর নিয়ে এখনও করেননি, গীতা প্রেস নিয়ে করেছেন, সেখানে বলেছেন, I congratulate Gita Press, Gorakhpur on being conferred the Gandhi Peace Prize 2021. They have done commendable work over the last 100 years towards furthering social and cultural transformations among the people. 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ২০২৪, মোদিজী প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন?      

প্রধানমন্ত্রী গীতা প্রেসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কারণ তাঁরা নাকি গত ১০০ বছর ধরে দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রূপান্তরের জন্য অসাধারণ কাজ করেছেন। আসুন দেখা যাক আমাদের চায়ওলা কাম চৌকিদারের এই বিবৃতি কতটা সঠিক, পরে আসব বাংলার কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়। এই গীতা প্রেস সেই শুরু থেকেই নারীদের কী করা উচিত, কী করা উচিত নয় ইত্যাদি নিয়ে বেশ কিছু বই ছেপেছে, নারীধর্ম, দাম্পত্য জীবন কা আদর্শ, গৃহস্থ মে ক্যায়সে রহে?, এই সমস্ত বইতে মহিলাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবান বলশালী পুত্রের জন্ম দেবার জন্য সচেষ্ট থাকার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে পতি সেবা করাটাই এক হিন্দু স্ত্রীর সবথেকে বড় ধর্ম। আজও সেই বই ছাপা হয়, বিক্রিও হয়। এই গীতা প্রেস থেকে কল্যাণ নামে এক ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় ১৯২৭-এ, হনুমানদাস পোদ্দার ছিলেন তার সম্পাদক। তিনি স্ত্রীধর্মপ্রশ্নোত্তরি নামে এক বই লেখেন, যা এই গীতা প্রেস থেকেই প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি দু’ নারীর কথোপকথনের মাধ্যমে হিন্দু স্ত্রীর জীবন কেমন হয়া উচিত তার বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি সেখানে বলেছেন সতীপ্রথা কোনও প্রথা নয়, এ হল এক বিশ্বাস, স্বামীকে বিশ্বাস করেই পতিব্রতা স্ত্রীরা সহমরণে যেতেন। ওই বইয়ের দুটো চরিত্র সরলা আর সাবিত্রী, সাবিত্রী সব জানেন আর সরলা কিছুই বোঝে না। তো সরলা প্রশ্ন করছেন, আচ্ছা দিদি, একজন পত্নীর মুখ্য ধর্ম কী? সাবিত্রী উত্তর দিচ্ছেন, এক স্ত্রীর মুখ্য ধর্ম হল পতিপরায়ণতা, বাকি সবই গৌণ, পতিকে প্রসন্ন রাখাটাই পত্নীর প্রথম কাজ। ওনার ওই কল্যাণ ম্যাগাজিনে মহিলাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব উনি নিজেই দিতেন, দু’ একটা নমুনা শুনুন। একজন জিজ্ঞেস করছেন, তিনি তাঁর পতির দুর্ব্যবহারে খুব কষ্টে আছেন, তাঁর কি পতিকে ছেড়েই দেওয়া উচিত। গান্ধী প্রেসের সেই সময় জনপ্রিয় পত্রিকা কল্যাণের সম্পাদক লিখছেন, এরকম করবেন না, ভারতীয় নারীকে পতিপরায়ণতা শিখতে হবে। ভারতীয় স্ত্রী তাঁর পতির সম্বন্ধে কোনও কুকথা শুনবেনই না, সে তিনি যতই কুকাজ করুন না কেন। স্ত্রী ধর্ম পালন করুন। অন্য আরেকজন মহিলা লিখছেন যে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে, হনুমানদাস পোদ্দার লিখছেন, এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিল, এমনটাই মনে করুন, ঘটনাটি ভুলে যান। 

সেই গীতা প্রেস আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মতে দেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক রূপান্তরের কাজ করে চলেছে। উনি ঠিকই বলেছেন, গীতা প্রেসের বিভিন্ন বই আসলে এক মধ্যযুগীয় হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে আমাদের সমাজকে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছে। এই গীতা প্রেস দলিত বিরোধী ব্রাহ্মণ্যবাদের কথা বলে চলেছে আজ নয় সেই ১৯২৪ থেকেই। এক দলিত বিরোধী, স্ত্রী বিরোধী তো বটেই, কেবল তাই নয়, গান্ধীহত্যার পরে এই গীতা প্রেসে তল্লাশি চলে, এই প্রেসের সঙ্গে জড়িত গোরখপুর মঠের মহন্ত দিগ্বিজয় নাথকে গ্রেফতার করা হয়, হনুমান পোদ্দারকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রমাণের অভাবে সাভারকর, গোলওয়ালকর, দিগ্বিজয়নাথ বা হনুমান পোদ্দার ছাড়া পেয়ে যায়। এই গীতা প্রেসের পত্রিকা কল্যাণে গান্ধীহত্যার দু’ লাইনের নিন্দাও করা হয়নি। সেই গীতা প্রেস পেল গান্ধীর পুরস্কার। গান্ধীহত্যার পয়সা জুগিয়েছিল যারা, যারা সেদিন ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল, যারা কেবল আক্ষরিক অর্থে প্রমাণের অভাবেই ছাড়া পেয়েছিল, যারা ওই একই গান্ধীহত্যায় অভিযুক্ত এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে জেল থেকে ছাড়া পাওয়া নাথুরাম গডসের ভাই গোপাল গডসেকে সম্বর্ধনা জানিয়েছিল সেই গীতা প্রেস পেল গান্ধী শান্তি পুরস্কার। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মোদিজির হাত থেকে কীভাবে পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছে ২০২৪?      

এবারে আসুন অন্য প্রশ্নের আলোচনায়। এই পুরস্কারের কমিটিতে তো ছিলেন লোকসভায় সবচেয়ে বড় দলের নেতা, কংগ্রেস দলের নেতা অধীর চৌধুরী। তো তিনি কেন এই কমিটিতেই সাফ জানিয়ে দিলেন না যে এটা করা যায় না, গান্ধীহত্যার সঙ্গে জড়িত, এক স্ত্রী বিরোধী, দলিত বিরোধী, তীব্র হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী এই সংগঠনকে এই পুরস্কার দেওয়া যায় না। তিনি কমিটির বৈঠক শেষে এই কথা সাংবাদিক সম্মেলন করে বলতেই পারতেন গান্ধী পুরস্কার নিয়ে মোদী সরকারের এই ষড়যন্ত্রের কথা। দেশজুড়ে প্রতিবাদ হত। তার বদলে উনি জানালেন যে ওনাকে নাকি এই কমিটির বৈঠকে ডাকাই হয়নি, এই বৈঠকের জন্য যা যা প্রয়োজনীয় দলিল সেসব দেওয়াই হয়নি। এ তো আরও বড় অভিযোগ, এমন না বলে চোরাগোপ্তা হানা তো বিজেপি করেই থাকে। কিন্তু ক’দিনের মধ্যেই মোদি মন্ত্রিসভার পর্যটন এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি, তারিখ ধরে ধরে প্রমাণ এনে হাজির করলেন মিডিয়ার সামনে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৮ জুন যেদিন এই কমিটির বৈঠকে এই পুরস্কারের সিদ্ধান্ত হয় তার ১০ দিন আগে ৮ জুন ওনার দিল্লির বাংলোয় ওনার পিএস প্রদীপ্ত রাজপণ্ডিতের হাতে এই চিঠি দেওয়া হয়, যার সঙ্গে সমস্ত ডকুমেন্টসও দেওয়া হয়, তিনি সেটা রিসিভ করে নিয়েছেন, তার প্রমাণ আছে। পরের দিন সংস্কৃতি দফতরের একজন ডেপুটি সেক্রেটারি লোকসভায় কংগ্রেস দলের নেতার দফতরে দু’বার ফোন করেন এবং তাঁকে জানানো হয় যে ওই আমন্ত্রণ তিনি পেয়েছেন। ১৪ তারিখে আবার ওই ডেপুটি সেক্রেটারি ফোন করে অনুরোধ করেন আপনারা যে আমন্ত্রণ পত্র পেয়েছেন তার একটা লিখিত উত্তর দিন। যদিও সেই উত্তর আসেনি বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। এরপর ১৬ তারিখে আবার ফোন করা হয়, ওনার পিএস জানান যে অধীর চৌধুরীকে এই আমন্ত্রণের কথা জানানো হয়েছে। 

এইবারের কমিটির বৈঠকে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সুলভ ইন্টারন্যাশনালের কর্তা বিন্দেশ্বর পাঠক, যিনি এর আগেরবারে এই পুরস্কার পেয়েছেন। অধীর চৌধুরী ছিলেন না, অতএব সর্বসম্মতিক্রমে এই পুরস্কার গীতা প্রেসকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তিনি কোথায় ছিলেন? কেন? আদালতে, পঞ্চায়েত ভোট বাতিল করাটা দেশের লোকসভার দলের নেতার কাছে বেশি জরুরি মনে হয়েছিল। এর আগে দু’ বার বৈঠকে ছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়্গে কারণ তখন তিনিই ছিলেন বিরোধী দলনেতা। এবার অধীর চৌধুরী, মুর্শিদাবাদের মানুষজন বলে, যিনি নাকি বাংলাদেশে টুথপেস্ট আর ডিম পাচারের সাইকেল বাহিনীর মাথা ছিলেন, যিনি তাঁর কেরিয়ার শুরু করেছিলেন আরএসপির জঙ্গি নেতা হিসেবে, পরে তিনিই হন বহরমপুরের ডন, কোনওদিন কোনও সিরিয়াস আলোচনায় যাঁর থাকাও সম্ভব নয়, থাকেনওনি। সেই অধীর চৌধুরীকে দেওয়া হল সংসদে কংগ্রেস দলের নেতার পদ, শুনেই মনে হয়েছিল, কাকে দিয়েছে রাজার পার্ট। তারপর যা হওয়ার তাই হচ্ছে, ওনার এর আগেও সংসদের ভেতরে বেসামাল বক্তব্যের জন্য মুখ পুড়েছে কংগ্রেসের, আবার পুড়ল। এক জোকার সুলভ ব্যবহারে অভ্যস্ত অধীরবাবুর এটা যদি নিছক ক্যালাসনেস হয়ে থাকে তাহলে তা দলের কাছে নিশ্চিত চিন্তার বিষয়, কিন্তু তখনই মনের মধ্যে উঁকি দেয় অন্য সম্ভাবনা। এটা বিজেপির সঙ্গেই যোগসাজস করেই করলেন না তো অধীর চৌধুরী, এ বাংলায় তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতে প্রশ্ন চিহ্ন তো পড়েইছে, দলও নাকি তেমন খুশি নয়, তিনি কি তাহলে ঘুরপথে শুভেন্দু হওয়ার তালে আছেন? রাজনীতি এক সম্ভাবনার খেলা, এখানে সব হতে পারে, এখানে আজকের জোকার কালকের ভিলেন, পরশুর রাজা হতেই পারে। তবে সর্বশেষ খবর এই ঘটনায় যারপর নাই ক্রুদ্ধ রাহুল গান্ধী, সেদিকে আমরা নজর রাখছি। তাসের আসরে তো কেবল বাদশা বেগম আর গোলাম থাকে না, জোকারও থাকে, তাদের দিকেও নজর রাখাটা বড্ড জরুরি।      

RELATED ARTICLES

Most Popular