কাবুল: দু’দশক পর আফগানিস্তানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে তালিবান৷ সেই সঙ্গে ফিরেছে পুরনো আতঙ্ক৷ তালিবানের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন সাধারণ মানুষ৷ জঙ্গিদের হাত থেকে বাঁচতে কাবুল বিমানবন্দরে থিকথিকে ভিড়৷ বিমানের ভেতর একটু জায়গা পেতে মারপিট, হাতাহাতি৷ তার উপর উড়ানের ল্যান্ডিং গিয়ারে ঝুলে পড়া, তার পর মাঝ আকাশ থেকে মানুষের খসে পড়ার দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছে গোটা বিশ্ব৷ আফগানিস্তান জুড়ে যখন হাহাকার তখন এই সব কিছু থেকে দূরে কাবুলের মন্দিরে পুজো-পাঠে মগ্ন এক হিন্দু পুরোহিত৷
আরও পড়ুন: তালিবানদের হটাতে আফগানিস্তানে সেনা নামানোর ইঙ্গিত বাইডেনের
ওই পুরোহিতের নাম রাজেশ কুমার৷ কাবুলের শতাব্দী প্রাচীন রতন নাথ মন্দিরের পুরোহিত তিনি৷ কাবুলের একমাত্র হিন্দু পুরোহিত হওয়া সত্ত্বেও আফগানিস্তান ছাড়তে নারাজ রাজেশ কুমার৷ প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ভিটে মাটি ছেড়ে খোদ আফগানরা যেখানে অন্য দেশে পালাতে চাইছেন সেখানে একজন হিন্দু মন্দিরে বসে পুজো-পাঠ করছেন এ দৃশ্য কল্পনাতীত৷
রাজেশকে দেশ ছাড়তে অনুরোধ করেছেন কাবুলে বসবাসকারী হিন্দুরাও৷ কিন্তু রাজেশ তাঁদের পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দিয়েছেন, মন্দির ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না৷ এবং যাওয়ার কথা ভাবছেনও না৷ একশো বছরের বেশি সময় ধরে তাঁর পূর্বপুরুষরা এই মন্দিরে সেবা করে গিয়েছেন৷ তিনিও সেই কাজই করছেন৷ তাই কাবুল ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷ তালিবানের হাতে যদি তাঁর মৃত্যুও হয় তিনি সেটাকে সেবা বলে মনে করবেন৷
আরও পড়ুন: আমেরিকার সেনা এখনও কাবুল বিমানবন্দরে, দু’দশক পর কন্দাহারে ফিরলেন তালিবান নেতা ঘনি বরাদর
এদিকে মার্কিন সেনা আফগানিস্তানের মাটি থেকে সরিয়ে নিতেই তালিবানের হাতে পতন হয়েছে সেদেশের সরকারের। এই ঘটনায় নিজের দেশেই তোপের মুখে পড়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন। অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সাংবাদিক সম্মেলন করে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। আফগানিস্তানে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ও আসরাফ ঘানির ব্যর্থতাকে দায়ী করেন বাইডেন। তিনি জানান, ‘আফগানিস্তানের সন্ত্রাসের আঁচ এসে পড়ছে গোটা বিশ্বে। তালিবানি সন্ত্রাস গোটা পৃথিবীর জন্যই ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ”। কাবুলিওয়ালার দেশে তালিবানি শাসনের উত্থান নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তালিবানিদের আফগানি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি মাথা তুলে দাঁড়তে চাইছে। সিরিয়া, ইরাক, আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশে নিজেদের সংগঠনের স্বীকৃতি অর্জন করতে চাইছে। এই প্রবনতা হুমকির মুখে ফেলছে বিভিন্ন দেশ, জাতি এবং সম্পদকে। সন্ত্রাসবাদকে রুখতে পাল্টা প্রত্যাঘাতের জন্য তৈরি থাকতে হবে”।