skip to content
Wednesday, June 26, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | দেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতের তিন অস্ত্র— ঘৃণা, মিথ্যে আর ভয়

Fourth Pillar | দেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতের তিন অস্ত্র— ঘৃণা, মিথ্যে আর ভয়

Follow Us :

কত শতাংশ মানুষ স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির লালকেল্লা থেকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনেন? না, সেরকম কোনও হিসেব নেই, কিন্তু এক সাধারণ ধারণা, দেশের ১০–১৫ শতাংশ মানুষ এই বক্তৃতা আংশিক শোনেন, ৪-৫ শতাংশ মানুষজন পুরোটা শোনেন। সেই মানুষজনদের মধ্যেই থাকেন দেশের অসংখ্য সাংবাদিক, কাজেই তাঁদের উচিত এই স্বাধীনতা দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিবসে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মতো আরও এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে মানুষের সামনে তুলে ধরা। আমরা গতকাল ওঁর বক্তৃতা ধরে ধরে বুঝিয়েছিলাম উনি ডাঁহা মিথ্যেই বলে গেছেন, আজ আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে সবথেকে বেশিবার লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দিয়েছেন ইন্দিরা গান্ধী, দুটো টার্মে ২৪ বার, এরপরেই আছেন নেহেরু, তিনি ১৬ বার, এরপরেই মনমোহন সিং এবং নরেন্দ্র মোদি, ১০ বার করে ভাষণ দিয়েছেন। রাজীব গান্ধী, নরসিমহা রাও, অটল বিহারী বাজপেয়ী পাঁচবার করে, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, মোরারজি দেশাই দু’ বার করে ভাষণ দিয়েছেন, মাত্র একবার করেই ভাষণ দিয়েছেন চরণ সিং, ভি পি সিং, দেবেগৌড়া আর আই কে গুজরাল। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ মেলেনি চন্দ্রশেখরের, তিনি নভেম্বর ১৯৯০-এ ক্ষমতায় এসেছিলেন, সরকার পড়ে যায় জুন ১৯৯১-এ। সত্যি কথা বলতে আমাদের দেশের এই বিরাট লিস্ট অফ প্রাইম মিনিস্টারের মধ্যে বক্তা ছিলেন দু’ জন। প্রথমজন অবশ্যই জওহরলাল নেহরু, দ্বিতীয়জন হলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। যদিও অটল বিহারীর দেওয়া স্বাধীনতা দিবসের কোনও বক্তৃতাই সেই উচ্চতায় যায়নি, যেমনটা তিনি সচরাচর দিতেন, সংসদে দিয়েছেন বা জনসভায় বলেছেন। কিন্তু বাকিদের মধ্যে একেবারেই সুবক্তা ছিলেন না দেশাই, চরণ সিং, নরসিমহা রাও, মনমোহন সিং, যদিও এঁরা পণ্ডিত ছিলেন। ভি পি সিং, আই কে গুজরাল, দেবেগৌড়াকে সুবক্তা বলা যায় না। রাজীব গান্ধী ওই লালকেল্লা থেকেই গণতন্ত্র দিবস আর স্বাধীনতা দিবস গুলিয়ে ফেলেছিলেন, তিনিও সুবক্তা ছিলেন না। ইন্দিরা গান্ধী ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছেন, কিন্তু যাকে বলে সুবক্তা, তা উনিও ছিলেন না, হ্যাঁ শেষের দিকে উনি খুব ভালো কমিউনিকেটর হয়ে উঠেছিলেন। 

এবারে আসা যাক নরেন্দ্র মোদির কথায়, উনি কোনও অর্থেই ভালো বক্তা নন, ইংরিজিতে যাকে বলে ডেমাগগ, উনি তাই, যার আক্ষরিক বাংলা হল বুকনিবাজ। মানে শব্দের পর শব্দ বসিয়ে কিছু বলা যা যুক্তিহীন মানুষের কাছে, অশিক্ষিত মানুষজনের কাছে হয়েই উঠতে পারে আকর্ষণীয়। যেমন ধরুন নতুন ভারতের বিকাশের তিনটে স্তম্ভ, স্পিড, স্কেল আর স্কিল, উনি একবার নয় বেশ ক’বার বলেছেন, কিন্তু কথাটার মানে কী? ধরুন রিফর্ম, পারফর্ম, ট্রান্সফর্ম এই শব্দবন্ধের মানেই বা কী? রিফর্মটা পারফর্ম নয়? পারফর্ম করার পরে নতুন করে কী ট্রান্সফর্ম করা হবে? আসলে একটা শুদ্ধ হিন্দি বাক্য না বলে তাতে স্ট্রিট স্মার্ট ইংরিজি গুঁজে উনি জনপ্রিয় হতে চান, তাই বলে চলেছেন। ভাষা, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি কোনও বিষয়েই কোনও গভীর পড়াশুনো না থাকলে এরকম হয়, তারপরে আবার ওঁর ভাষণ কোনওটাই দেড় ঘণ্টার কম নয়, কাজেই বেশি বকা মানে বাজে বকা, সব্বাই জানেন। যেমন ধরুন, তিনি বলতে উঠঠেই প্রত্যেকবার একই কথা বলতে থাকেন, সেই সবকা সাথ সবকা বিকাশ, মেক ইন ইন্ডিয়া, বিরোধীরা সবাই চোর, দেশ আবার জেগে উঠছে, ভারত এখন বিশ্বগুরু ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু প্রত্যেকবার দু’ একটা নতুন কথাও বলেন। এবারও বলেছেন। আসলে তাঁর শাসনকাল যত বাড়ছে, অস্বস্তিও বাড়ছে, কারণ ক্ষমতায় আসার আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মানুষ তার জবাব চাইছে। চাকরি, মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি ইত্যাদি নিয়ে তো প্রশ্ন উঠছে। আর তিনি তাঁর গোল পোস্টটাকে চওড়া করেই চলেছেন। মানে ধরুন ওঁর প্রতিশ্রুতি ২০২২-এর মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেব। হয়নি, বাড়েনি, আয় কমেছে। কাজেই উনি এখন ২০২৮ দেখাচ্ছেন। এবারে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে সেই গোলপোস্ট ১০০০ বছরের হয়ে গেল। উনি বললেন, গত ১০০০ বছর ছিল গুলামির, গত মানে ১৯৪৭ এর আগেকার ১০০০ বছর ছিল গুলামির, ইতিহাস কী তাই বলছে? তৈমুর থেকে নাদির শাহ এসেছে আমাদের দেশে লুঠ করতে, লুঠ করেছে, চলে গেছে, আমাদের দেশ শাসন করার তাদের ইচ্ছেও ছিল না। কিন্তু শকেরা এসেছে, তুর্ক, পাঠান, মুঘলরা এসেছে, তারা এই দেশে থেকে গেছে, মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাটেরা আমাদের দেশের সম্পত্তি নিয়ে তাঁদের দেশে চলে যাননি, দেশে এক রাজার বদলে অন্য রাজা ছিল, অন্য সম্রাট বা সুলতান ছিল, কিন্তু তাঁরা দেশকে পরাধীন করেননি। সিরাজ উদ দৌলা লড়েছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | স্বাধীনতা, ত্রিবর্ণ পতাকা এবং মোদিজির রাশি রাশি মিথ্যা 

কতটা অশিক্ষা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর, উনি অন্তত যদি ওঁদের গুরুদেব সাভারকরের লেখা ১৯৪৭-এর প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধ বইটাও মন দিয়ে পড়তেন তাহলে এই কথা বলতেন না। তখনও সাভারকর বিপ্লবী, তখনও সাভারকর জেল থেকে বের হওয়ার জন্য ইংরেজদের কাছে মুচলেকা দেননি। তখন এই বইতে তিনি লিখেছিলেন, কীভাবে শেষ মুঘল বাদশা বাহাদুর শাহ জাফরকে সামনে রেখে ভারতীয় রাজা, সুলতানেরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিপাহিদের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেমেছিলেন। মুঘল সম্রাটেরা তাদের সম্পদ কি উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান বা মঙ্গোলিয়াতে পাঠিয়েছিলেন? বরং সেখান থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন কারিগরদের, ঐতিহাসিকদের, শিক্ষিত পণ্ডিত মানুষজনেদের, গায়কদের, যাঁরা এই দেশে তাঁদের শিল্পকলা, বিজ্ঞান, বাস্তুকলা, গানবাজনা ছড়িয়ে দিতে পারেন। তৈরি হয়েছে তাজমহলের মতো স্থাপত্য, মিয়া কি মল্লারের মতো সুর, মুঘল খাবার এসেছে আমাদের দেশে। ইংরেজরাও অনেক কিছু দিয়েছে, কিন্তু তারা লুঠ করে নিয়ে গেছে আমাদের সম্পদ, আমাদের কোহিনুর থেকে আরও অনেক কিছু। তারা আমাদের দেশ লুঠ করতেই এসেছিল, এদেশে থাকতে নয়। কিন্তু আমাদের বুকনিবাজ প্রধানমন্ত্রী এক নিশ্বাসে ইংরেজ আর মুঘল শাসনকে মিলিয়ে দিলেন। আর যে সব লুঠেরারা এসেছিল সেই সময়ে, তাদের ইতিহাসটা তাহলে ভালো করে পড়ানো হোক, জানানো হোক দেশবাসীকে কোন রাজ্যের কোন ভাষার মানুষজন ওই লুঠেরাদের এদেশে ঢুকতে সাহায্য করেছিল। কোন রাজ্যের রাজারা তাদেরকে নেমন্তন্ন করে ডেকে এনেছিল। আসুক সেই ইতিহাসও সামনে আসুক। গুলামির সেই কঠিন সময়ে কারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি, কারা মুচলেকা দিয়েছিল হিজ হাইনেস, হার হাইনেসের কাছে, কারা বিপ্লবীদের ধরিয়ে দিয়েছিল, কারা ৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন বানচাল করার জন্য ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। পড়ানো হোক সেই জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। হ্যাঁ, স্বাধীনতার পরের ইতিহাসে কংগ্রেসের নির্লজ্জ গান্ধী-নেহরু পরিবারের প্রতি আনুগত্য দৃষ্টিকটু, অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক। কিন্তু এটাও তো ঘটনা যে সেই পরিবারের দু’ দু’জন প্রাণ দিয়েছেন দেশের জন্যই, নৃশংসভাবে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে, সেই গৌরবজনক ইতিহাসও তো কংগ্রেসেরই আছে, আপনার হাতে কী আছে মোদিবাবু? মাত্র ১০ বছরেই আপনাদের দু’ নম্বর নেতা অমিত শাহের ছেলে কোন যোগ্যতায় বিসিসিআই-এর সচিব? যাদের গোটা ইতিহাসটা ইংরেজ প্রভুদের গোলামির, তারা গোলামির পাঠ পড়াবে? 

যতবার মোদিজি বংশানুক্রমিক শাসনের কথা বলবেন, ততবার তাঁকে তাঁদের দলকে এই বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়া আসা উচিত। এবং তারপর? তারপরের ১০০০ বছরের ইতিহাস নাকি এতদিন লেখা হয়নি, এই সবে লেখা শুরু হল। এর আগে বিজেপির হাফ নেতারা কেউ কেউ ৫০, কেউবা ১০০ বছর বিজেপিই থাকবে একথা বলেছেন, এবার নরেন্দ্র মোদি বললেন আমরা ১০০০ বছর থাকব, ১০০০ বছরের ইতিহাস লেখা শুরু হয়েছে। শোনা শোনা লাগছে এই কথা? লাগবেই, এর আগে থাউজেন্ড ইয়ার রাইখ-এর কথা বলেছিলেন অ্যাডলফ হিটলার। তিনি বলেছিলেন, থার্ড রাইখ লিখবে ১০০০ বছরের ইতিহাস, নিজের পোষা কুকুরকে গুলি করে মেরে, সদ্য বিবাহিত স্ত্রী সমেত আত্মহত্যা করেছিলেন ওই হিটলার, মাত্র ১২ বছরেই শেষ হয়েছিল থার্ড রাইখ। মোদিজি হাজার বছরের ইতিহাসের কথা বলছেন কিসের ভিত্তিতে? দেশকে আড়াআড়ি হিন্দু আর সংখ্যালঘুতে ভাগ করার হাজার চেষ্টার পরেও আপনার ধারে ৫০ শতাংশ হিন্দুও যায়নি, এটাই তো হিসেব বলছে। আগে সবকা সাথ সবকা বিকাশ বলতেন, এবার বুকনি বদলে বহুজন হিতায়, বহুজন সুখায় বললেন, কোন বহুজন? দেশের ১ শতাংশ মানুষের কাছে জড়ো হয়েছে দেশের ৪০.৫ শতাংশ সম্পদ, এর নাম বহুজন সুখায়? ১০ শতাংশ মানুষের কাছে আছে ৭২ শতাংশ সম্পদ, এরা নাম বহুজন হিতায়? ১০০ জন সংখ্যালঘুর মধ্যে ৮৪ জন মনে করেন তাঁরা বিপন্ন, এটা বহুজন সুখায়? ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট থেকে বেছে বেছে ৩ জন সংখ্যালঘু মানুষকে খুঁজে বের করে গুলি করে মারল এক পুলিশ অফিসার, এর নাম বহুজন সুখায়? এরপরে একজন সংখ্যালঘু মানুষ যখন ট্রেনের টিকিট কাটবেন, তখন তাঁর মাথায় কী ঘুরবে? লালকেল্লার মঞ্চ থেকে কাদের কোন পাঠ পড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, ১০০০ বছরের গুলামি কো তোড়না হোগা। বুকনি তো দিলেন, আমরা শুনলাম, এবার বলুন কী ভাবে তোড়না হোগা? নুহ-তে যেরকমভাবে বুলডোজার চালিয়ে সংখ্যালঘুদের ঘর ভাঙা হচ্ছিল, সেই ভাবে? সুপ্রিম কোর্ট যেটাকে এথেনিক ক্লিনজিং বলেছেন সেটাই কি পদ্ধতি? ৯৪ মিনিটের বক্তৃতায় দেশের প্রধানমন্ত্রীর অস্ত্র ছিল ঘৃণা, মিথ্যে আর ভয় দেখানো। দেশের মানুষ যদি একথা বুঝতে পারেন, তাঁদেরকে যদি এই কথা বোঝানো যায়, তাহলে এটাই হবে নরেন্দ্র মোদির শেষ লালকেল্লা থেকে বক্তৃতা।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
স্পিকার নির্বাচন প্রথম নয়, আগেও হয়েছে, জানুন ভারতের ইতিহাস
00:00
Video thumbnail
Y. S. Jagan Mohan Reddy | স্বাধীন ভারতে প্রথম স্পিকার নির্বাচন সমর্থন করবেন জগন?
00:00
Video thumbnail
Lok Sabha Speaker | ওম বিড়লাকেই স্পিকার পদে মনোনয়ন NDA-র, INDIA দিলো পাল্টা মনোনয়ন
00:00
Video thumbnail
Speaker | স্পিকার নির্বাচনে বড় ঝটকা ধাক্কা খেল বিজেপি! INDIA-কে সমর্থন করল এই দল
00:00
Video thumbnail
Abhishek Banerjee | শপথ নিয়ে কী বললেন অভিষেক? দেখুন ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Saumitra Khan | হাজিরা না দিলে গ্রেফতার ! মহাসঙ্কটে সৌমিত্র খাঁ
00:00
Video thumbnail
INDIA | স্পিকার নিয়ে জরুরি বৈঠকে INDIA, তৃণমূল কি আছে বৈঠকে ?
00:00
Video thumbnail
চতুর্থ স্তম্ভ | Fourth Pillar | সংবিধান, সহমত এবং আমাদের পরধান সেভক, চওকিদার
00:00
Video thumbnail
আজকে (Aajke) | ভারত সরকার কি পশ্চিমবঙ্গকে জল না দিয়ে শুকিয়ে মারতে চায়?
00:00
Video thumbnail
Deputy Speaker | কে হবেন ডেপুটি স্পিকার, দেখে নিন বিরাট আপডেট
00:00