নয়াদিল্লি: সাধারণ করদাতা (Common Taxpayer) থেকে বৃহৎ শিল্প, সকলেরই মনপ্রাণ এখন ১ ফেব্রুয়ারির দিকে। ওইদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন (Finance Minister Nirmala Sitharaman) চলতি বিজেপি সরকারের শেষ বাজেট পেশ করবেন। আকাশছোঁয়া বাজারদরে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষ চাইছেন এবার অন্তত যাতে কপালে করছাড়ের (Income Tax Exemption) স্বস্তি মেলে। তার মধ্যে প্রথমটিই হল করযোগ্য আয়ের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি। ৮০সি-তে (Section 80C) করছাড়ের পরিমাণ বাড়ানোর দিকেও নজর রয়েছে ছাপোষা মধ্যবিত্তের। বাড়ির সুদে এবং বিমা ক্ষেত্রেও পৃথক ছাড় যদি জোটে তাহলে তো তা সোনায় সোহাগা হবে। আশার পরিমাণ দীর্ঘতর হওয়ার কারণ, রাজনীতি সচেতন মানুষ জানেন এবছর ৯ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এছাড়া পরবর্তী বছরেই বিজেপি সরকারের টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার অগ্নিপরীক্ষা। তাই সকলেই অপেক্ষা করে আছেন পকেট-সখ্য বাজেটের দিকে তাকিয়ে।
আরও পড়ুন: Mood of the Nation Survey: এই মুহূর্তে ভোট হলে মোদি না বিরোধীরা, কে জিতবে? কী বলছে সমীক্ষা
অ্যাসোচেম-এর (ASSOCHAM) সাধারণ সচিব দীপক সুদ মনে করেন, করছাড়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের হাতে নগদ আমদানির ব্যবস্থা করলে আর্থিক বৃদ্ধির উন্নতি সম্ভব হবে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের হাতে ক্রয়ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। একদিকে যখন করদাতারা আশার পাহাড় গড়ছেন, তখন কিন্তু নিরাশার কথা শোনাচ্ছেন কর ও অর্থ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, অন্তত এ বছর কর কাঠামোয় বিশেষ কোনও পরিবর্তন আসবে না। তাঁদের একজন বলেন, আমরা মনে করি না ছাড়ের ক্ষেত্রে বিরাট কোনও বদল হবে।
২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) অগ্নিপরীক্ষা। তার আগে এ বছরই বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন (Assembly Election)। ভোটমুখী ভারতে তাই আগামী বাজেটকে (Budget 2023) মধ্যবিত্তদের (Middle Class) আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে করতে হবে। বিজেপির (BJP) ‘মস্তিষ্ক’ রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ (RSS) সাফ একথা জানিয়ে দিল। বিজেপি নেতৃত্ব এবং খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে আরএসএসের তরফে বলে দেওয়া হয়েছে, বাজেট এবং সরকারি নীতি প্রণয়ন যেন পুরোপুরি মধ্যবিত্তদের দিকে তাকিয়ে করা হয়।
সঙ্ঘনেতারা বিজেপি নেতৃত্বকে এও জানিয়েছেন, বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে বিজেপি সরকারের উপর মানুষের ক্ষোভ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, মুদ্রাস্ফীতি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেরোজগারি এবং আরও অনেক কিছু। এসব নিয়ে দেশের মধ্যবিত্ত মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে।
দি নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আরএসএসের এক নেতা বলেছেন, সঙ্ঘের শীর্ষ নেতৃত্ব বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে কিছুদিন আগে এসব স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে। আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে সম্প্রতি দেশের দারিদ্র নিয়ে উদ্বেগ করেছিলেন। তিনি বেকারি নিয়েও তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। হোসাবলের উদ্বেগের কথা শুনে বিজেপির অন্দরে অনেকেরই ভ্রূ কুঁচকে গিয়েছিল।
আরএসএসের এক নেতা বলেন, বিজেপি নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী বাজেট যেন মধ্যবিত্তদের কথা মাথায় রেখে করা হয়। উল্লেখ্য, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হবে লোকসভায়। চলতি এনডিএ সরকারের এটাই হবে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ। সঙ্ঘের ওই নেতা আরও বলেন, তাঁদের কাছে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও সমস্যাদীর্ণ জীবনযাত্রার অনেক অভাব-অভিযোগ বিভিন্ন সূত্রে সামনে এসেছে। ফলে, এইসব অভাব-অভিযোগের কথা বিজেপি নেতৃত্বের কাছেও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্বাচনগুলির আগে সাধারণ মানুষের এইসব ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রশমিত করতে হবে। তাঁদের আশাপূরণে কাজ করতে হবে।
সঙ্ঘের মতে, নোটবন্দি থেকে করোনা পরিস্থিতি পর্যন্ত মধ্যবিত্ত মানুষকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সে কারণে বিজেপি এবং চলতি সরকারের কাছে তাদের অনেক আশা রয়েছে। যেমন পুরনো পেনশন প্রকল্প নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সমর্থনের পাল্লা ভারী হচ্ছে। একথা জানানো হয়েছে বিজেপি ও সরকারকে। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা এবং পুরনো পেনশন প্রকল্প নিয়েও পুনর্বিবেচনার কথা জানিয়ে দিয়েছে সঙ্ঘ নেতৃত্ব।