Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: গান্ধীর বদলে নোটে ছাপা হবে গণেশ আর লক্ষ্মীর ছবি?

Fourth Pillar: গান্ধীর বদলে নোটে ছাপা হবে গণেশ আর লক্ষ্মীর ছবি?

Follow Us :

দেশের অর্থনীতি খারাপ হতে থাকলে কত কিছুই না হয়। মানুষের চাকরি চলে যাচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম আগুন, ছ্যাঁকা লেগে যাচ্ছে হাতে, জিডিপি নামছে, টাকার দাম কমছে। এরকম এক অবস্থায় বরিস জনসনকে সরে যেতে হল, এলেন লিজ ট্রাস। তিনিও বিদায় নিলেন, এলেন সুনক। এই একই কারণে সরে যেতে হয়েছে বলসেনারোকে। হাজার হাজার মানুষ রুটির দাবিতে রাজপ্রাসাদ ঘেরাও করেছিল, জারের রাজপ্রাসাদ। তারপর দখল নিয়েছিল সরকারের, অক্টোবর বিপ্লব, একইভাবে খেতে না পাওয়া মানুষ, শোষিত মানুষ লং মার্চে নেমেছিলেন, চীনে বিপ্লব হয়েছিল। মানুষের উদরপূর্তির এক লড়াই চলতে থাকে কখনও ভোট দিয়ে, কখনও ক্ষমতা দখল করে সরকার বদলায়, কোনও কোনও জায়গায় নৈরাজ্য দেখা যায়। কত কিছুই তো হয়, অর্থনীতিবিদরা কত নানান উপায় বাতলান, মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দাও, সুদের হার বাড়াও, কমাও, আমদানি কম করো, রপ্তানি বাড়াও, ট্যাক্স কমাও ইত্যাদি ইত্যাদি। রাজনীতির লোকজনও বিভিন্ন মতামত দেন বইকি। তো এল এক মতামত, আই আই টি খড়গপুর থেকে বি টেক পাস, পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস পাস করে ইনকাম ট্যাক্স-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার হয়েছিলেন, সেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল একটা উপায় বাতলেছেন— টাকায় গান্ধীর বদলে গণেশ বা লক্ষ্মীর ছবি ছাপা হোক, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, আপনি একথা শুনে এক নিষ্ঠাবান হিন্দু হিসেবে গদগদ হতেই পারেন, একজন যুক্তিবাদী হিসেবে রেগে যেতে পারেন, প্রাণখুলে হাসতে পারেন, লোকটাকে পাগল ছাগল বলতে পারেন, বলতেই পারেন ছুপা বিজেপি, বলতেই পারেন একজন ফিফথ কলাম্নিস্ট, বিশ্বাসঘাতক, আমাদের যাবতীয় বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে? বলতেই পারেন। কিন্তু আদত কথাটা হল অরবিন্দ কেজরিওয়াল একজন রাজনীতিবিদ, তিনি রাজনীতিই করছেন, বিশুদ্ধ রাজনীতি, যেখানে ভোটে জেতার জন্য যা খুশি তাই করা যায়। আমাদের দেশের হরেক কিসিমের রাজনৈতিক দল সেটাই করে আসে, হ্যাঁ আমি এই তালিকা থেকে কমিউনিস্টদেরও বাদ দিচ্ছি না। বাংলায় ৩৪ বছর শাসন করেছে কমিউনিস্ট পার্টি, পুজো কমেছে? বাবা তারকনাথ থেকে সাঁইবাবা থেকে অষ্টপ্রহর নাম কীর্তন কমেছে? উলটে সুভাষ চক্রবর্তী চলে গেছেন তারকেশ্বরে, তন্ময় ভট্টাচার্য জোর গলায় হেঁকে উদ্বোধন করেছেন কালীপুজো। সুপ্রিম কোর্টের রায়, শবরীমালাই মন্দিরে ঢুকতে দিতে হবে এমনকী ৫০-এর কম বয়সী মহিলাদেরও। পেরেছে কেরলের বাম সরকার, ওই আদেশ মেনে মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশের সুযোগ করে দিতে? রাহুল গান্ধী প্রথমে বলে ফেললেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় এনেই মহিলাদের প্রবেশ করতে দিতে হবে, তারপর টের পেলেন তাঁর কেরল রাজ্য কংগ্রেসের মনোভাব। বললেন, যা বলেছি, তা একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। তিনি তো মন্দিরে গিয়ে নিজেকে জনেয়ুধারী, পৈতেধারী ব্রাহ্মণও বলেছেন, মিথ্যে তো বলেননি। কিন্তু কই নেহরুকে তো এমন ঘোষণা করতে হয়নি, ইন্দিরা গান্ধীকেও নয়। মুজফফর আহমেদ বা প্রমোদ দাশগুপ্তকে তো জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য পুজো উদ্বোধনে যেতে হয়নি। জয়প্রকাশ নারায়ণ বা রামমনোহর লোহিয়াকে তো অখিলেশ যাদবের মতো হনুমান জয়ন্তীতে পুজো করতে দেখা যায়নি। একমাত্র তামিলনাড়ুর এক আলাদা রাজনৈতিক চরিত্র আছে, দ্রাবিড় সংস্কৃতি যেহেতু আদতেই নাস্তিক, তাই সে রাজ্যের রাজনীতিতে ধর্মের বাড়বাড়ন্ত সেরকম নেই। বাকি সব রাজ্যে, বিজেপি আর এস এস বা তাদের শাখা দলগুলোকে বাদ দিলে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেই হিন্দু অ্যাপিজমেন্ট, হিন্দুদের মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে চলা, তারা যাতে চটে না যায়, সেদিকে নজর রেখেই রাজনীতি করাটা ক্রমশ রীতি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কেজরিওয়াল নির্বোধ নন, তিনি খুব ভাল করেই জানেন যে টাকায় গণেশ, লক্ষ্মী কেন, ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের ছবি ছাপা হলেও এমনি এমনি অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে না। এমনই কি ছিল আমাদের দেশের রাজনীতি? কোন বাধ্যবাধকতার থেকেই এমনটা ঘটছে, আসুন সেটা নিয়ে আলোচনা করা যাক। দেশ স্বাধীন হয়েছে, অর্থনীতির মূল গতিপথ নির্ধারণ করছেন নেহরু, কংগ্রেস। নেহরু বলছেন সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের অর্থনীতি, কংগ্রেসের দর্শনেই আছে গান্ধীয়ান স্যোশালিজম, গান্ধীজির সমাজতন্ত্র। হ্যাঁ, সোনার পাথরবাটির মতো শোনালেও, গান্ধীজি নিজেও এই কথা ব্যবহার করেছেন। স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ অর্থনীতি, গ্রাম স্বরাজ, গ্রাম সুরাজের প্রসঙ্গেই সেই কথা এসেছে। বিরোধী কারা? একমাত্র স্বতন্ত্র পার্টি, তারা ঘোর বিরোধী ছিল এই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বা গান্ধীয়ান সোশ্যালিজমের। কিন্তু তারা ভারতের রাজনীই থেকে মুছেই গেছে। আর এস এস–জনসঙ্ঘের কি আলাদা কোনও অর্থনীতি ছিল? না, তারা স্বদেশি অর্থনীতির কথা বলত, গ্রামীণ স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতিরই কথা বলত। আসলে ১৯৪৭ থেকে স্বাধীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক এজেন্ডা, রাজনৈতিক কর্মসূচি ঠিক করত কংগ্রেস। তাদের সেকুলারিজম, তাদের সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির লাইনেই চলেছে সারা দেশের রাজনৈতিক দল। আর এস এস–জনসঙ্ঘ–বিজেপি সেই এজেন্ডা মেনেই রাজনীতি করেছে। অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হলেন, তাঁকে প্রশ্ন করা হল, আপনাদের কাশ্মীরের ৩৭০ ধারার বিলোপ, রামমন্দির আর অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, ইউনিফর্ম সিভিল কোড কবে আসছে? তিনি বলেছিলেন এই সরকারটা কেবল বিজেপির সরকার নয়, বিজেপি পূর্ণ বহুমত পেলে ওসব নিয়ে ভাবা যাবে, আপাতত ওগুলো আমাদের এজেন্ডা নয়। পরের প্রশ্ন ছিল অর্থনীতি নিয়ে, তিনি বলেছিলেন গান্ধীয়ান সোশ্যালিজম আমাদের পথ, মাথায় রাখুন সেই সময়ে বিজেপির প্রবীণ নেতা গোবিন্দাচার্য স্বদেশি আন্দোলন চালাচ্ছেন। মানে হল সরকারে বিজেপি থাকলে কী হবে, পলিটিকাল এজেন্ডা তখনও সেট করে দিচ্ছে কংগ্রেস। এই গোটা রাজনীতিটাই পালটে গেল ২০১৯-এর পর। এই সময় থেকে দেশের পলিটক্যাল এজেন্ডা সেট করছে আর এস এস–বিজেপি। ধরুন রামমন্দির, সুপ্রিম কোর্টের রায় এল, রামমন্দির তৈরি হচ্ছে, রায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছে কোনও রাজনৈতিক দল? বাংলায় তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, আদালত রায় দিয়েছে, এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই, তাছাড়া আমি এখন বুলবুল ত্রাণ নিয়ে ব্যস্ত। বাম দল কী বলেছে? “The Polit Bureau of the CPI(M) urges that there should be no provocative acts using the judgment, which will disrupt communal harmony,” according to the statement.
The Communist Party of India, meanwhile, said the apex court had delivered a “reconciliatory” judgment.
“This should be seen in the larger perspective of ethics, justice and secularism. This should not be seen as a victory to any party or litigant and in the prevailing situation nobody should resort to any provocation,” it said. না একমাত্র আসাউদ্দিন ওয়েইসির এম আই এম ছাড়া কেউই রায়ের বিরোধিতা করেনি। কেউ না। অথচ ওই রায়েই পরিষ্কার বলা ছিল যে বাবরি মসজিদ বেআইনি ভাবেই ভাঙা হয়েছে। মানে বেআইনিভাবে ভাঙা এক উপাসনা স্থলের উপরে গড়ে উঠল রামমন্দির, কেউ বিরোধিতা করলেন না। হঠাৎ ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়া হল। অরবিন্দ কেজরিওয়াল তো সমর্থন করেছিলেন, বিরোধিতা করেছিলেন কারা? বাম এবং তৃণমূল ছাড়া কেউ এই ব্যাপারে মুখ খোলেনি। তিন তালাক বিল, আবার সেই এক ছবি, কেউই বিরোধিতা করলেন না। ইউনিফর্ম সিভিল কোড আর এস এস-এর এজেন্ডা, কিন্তু তারাও কি ইউনিফর্ম সিভিল কোড চায়? হিন্দু আন ডিভাইডেড ফ্যামিলি ল থেকে যে সুযোগ বড় বড় শিল্প গোষ্ঠীর মালিকরা পাচ্ছে, তা কি তারা তুলে দিতে চায়? ইন ফ্যাক্ট ওই একই ধরনের আইন রয়েছে শিখদের জন্য, জৈন বা পারসিদের জন্য। আর এস এস–বিজেপি বা এই মোদি সরকার সেগুলো তুলে দিতে চায়? না চায় না। তাদের লক্ষ্য তিন তালাক, বহু বিবাহ মানে ওই মুসলমানরা ৪টে বিয়ে করতে পারে, আর বিয়ের বয়স। ব্যস। তিন তালাক বিল এসে গিয়েছে, বিয়ের বয়স নিয়ে একটা আইন আসতে চলেছে আর রইল বাকি বহু বিবাহ, তা এমনিতেই অবলুপ্তির মুখে। তাদের ইউনিফর্ম সিভিল কোডের দাবি তো আসলে ইসলামিক শরিয়তের নিয়ম কানুন নিয়ে, তার বাইরে তাদের ইন্টারেস্ট নেই। এদিকে বিজেপির এই প্রবল বাড়বাড়ন্তের দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ধরেই নিয়েছে, মুসলমানরা আমাদের ভোট না দিয়ে যাবে কোথায়, বিজেপির বিরুদ্ধে আমরাই তো আছি। তাই তারাও হিন্দুত্বের, হালকা হিন্দুত্বের কার্ড খেলে চলেছে। আসলে ২০১৯ থেকে পলিটিকাল এজেন্ডা সেট করে দিচ্ছে আর এস এস–বিজেপি। তারা চায় এ সুযোগে আসাউদ্দিন ওয়েইসির মতো মুসলমানদের প্রবক্তা গজিয়ে উঠুক, মুসলমানরা ওই সব নেতাদের মধ্যেই তাঁদের রক্ষাকর্তাদের খুঁজে পাক, তাহলেই কেল্লা ফতে। দেশের অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে সরে যাবে মুসলমান ভোট, সুরক্ষিত থাকবে আর এস এস–বিজেপির হিন্দু ভোট এবং সরকার। কেজরিওয়াল সেই টোপটা খেয়েছেন, বাকিরাও কমবেশি একই পথে। এই পথ আমাদের দেশের রাজনীতিকে এক গোলকধাঁধায় নিয়ে চলেছে। অবিলম্বে আমাদের প্রত্যেককে বুঝতে হবে এই ষড়যন্ত্রের প্রত্যেকটা চাল, বুঝতে হবে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতাই গটে তুলতে পারে বিজেপি বিরোধী ফ্রন্ট, গাঢ় বা হালকা হিন্দুত্ব আসলে এক মরীচিকা, তা আসলে বিজেপির সেট করে দেওয়া এজেন্ডা।     

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলার ৪২ | ঝাড়গ্রামে কোন দল এগিয়ে?
06:35
Video thumbnail
আজকে (Aajke) | কুণাল ঘোষ তৃণমূলের একজিমা
07:21
Video thumbnail
চতুর্থ স্তম্ভ | Fourth Pillar |এবারের নির্বাচনে গোবলয় থেকে পঞ্জাব হরিয়ানাতে হার-জিত ঠিক করবে কৃষকেরা
14:22
Video thumbnail
Beyond Politics | মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেবে ওরা?
10:44
Video thumbnail
Politics | পলিটিক্স (02 May, 2024)
12:48
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, ঠিক কী অভিযোগ করলেন মহিলা?
38:08
Video thumbnail
সেরা ১০ | খড়গ্রামের পর বাঁকড়া, ভোটের আবহে হাওড়ায় গুলি
16:45
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে রণহুঙ্কার | চারিদিক জ্বলছে, মানুষ জ্বলছে : মমতা
05:26
Video thumbnail
নারদ নারদ | অবৈধ বালি খাদান বন্ধের কড়া বার্তা হাইকোর্টের, পুলিশকে ৩ মাসের সময়ে বেঁধে দিল আদালত
17:53
Video thumbnail
District Top News | দেখে নিন আজকের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি
13:56