Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeWTC Final Day 5 | রাহুল টার্গেট কিন্তু আপনি
Array

WTC Final Day 5 | রাহুল টার্গেট কিন্তু আপনি

Follow Us :

ভারত : হার ২০৯ রানে 

রাহুল দ্রাবিড় যখন ইন্ডিয়ান ক্যাপ্টেনের  মুকুট রহস্যজনক ভাবে ছেড়ে দেন ,সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমা  এই পর্যায়ে  পৌঁছয়নি। ২০০৭ সালে তখন প্রিন্ট মিডিয়ার হালকা আঁচড়  আর টিভি চ্যানেলে খুচখাচ কিছু প্রশ্ন হওয়া ছাড়া নেতা হিসেবে তাঁর অকস্মাৎ অন্তর্ধানের কোনো পোস্ট মর্টেম হয়নি। টুইটারে ট্রেন্ডিং হওয়া। ইন্সটাতে উত্তেজিত প্রশ্ন। ফেসবুকে বয়ে  আসা  ক্ষোভ। এসব কিছুই ছিল না সেই দুনিয়াতে।

একমাত্র ‘ম্যাচ  কা মুজরিম’  নামক একটা প্রোগ্রাম  নিউজ  চ্যানেলে চালু করেছিলেন ভারতীয় স্পোর্টস টেলিভিশনের একচ্ছত্র সম্রাট উদয় শঙ্কর। তার ঘায়েই তখন মূর্ছা যাচ্ছিলেন শচীন -রাহুলেরা। ২০০৭-এর বিশ্বকাপ বাদ দিলে আজকের মতো কড়া, নৃশংস এবং আগুনে প্রতিক্রিয়া কখনো ধেয়ে আসেনি দ্রাবিড়ের দিকে। শচীন থাকায় ক্লাসে ফাস্ট হতে পারেননি। কিন্তু বারবার তিনি খুব কাছে থাকা সেকেন্ড বয়। যাকে  প্রিন্সিপাল থেকে নিচের ক্লাশ  সবাই ভালোবাসে। আর অনন্য শ্বেতশুভ্র  ভাবমূর্তি দিয়ে বিচার করে। এটাই রাহুলের বরাবরের পৃথিবী যাকে  ঘরের এসি  কন্ট্রোল করার মতো তিনি ব্যক্তিগত রিমোটে সামলাতে পেরেছেন। যখন জুনিয়রদের কোচ করেছেন তখনও  বরাবর প্রশংসার স্পটলাইটে। মহাতারকা কিন্তু বিতর্কহীন। সামনে থাকতে পারেন কিন্তু রাজসিক ঔদাসীন্যে  স্বেচ্ছায় পেছনে থাকেন। আর সেটাই তাঁর সৌন্দর্য। 

প্রাক ৬ জুন ,২০২৩ এই ছিল ভারতীয় অনুরাগীর মনে অবচেতনে দ্রাবিড়ের মূর্তি। সেই গ্রেগ জমানার পর এই প্রথম  ক্লাসের কৃতি ছাত্রকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট পৃথিবী। ধ্যাৎ গরমে  মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি ? প্রশ্নের মুখে কী  লিখছি ? আসলে আক্রমণের মুখে। বিশ্বাসহীনতার মোড়ে। প্রবলতম আঁচড়ে আক্রান্ত হওয়ার প্যাঁচালো  গলিতে। শুনলাম লন্ডনে যাওয়া বোর্ড কর্তাদের কেউ কেউ একান্তে কোরাস  করছেন সোশ্যাল মিডিয়া বাহিত জনগণের রোষের–ধুর,একে  দিয়ে চলবে না। কেউ কেউ চান মানে  মানে এখনই অপসারণ। কেউ অক্টবর-নভেম্বরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে চান। 

কলকাতায় বসে এইসব আলোচনা যদি সাধারণ মিডিয়া পেশাদারের কানে চলে আসে তিনি রাহুল  শারদ দ্রাবিড় হটসিটে বসে এসব শুনতে পাচ্ছেন না হয় ? সুভাষ ভৌমিক বলতেন কোচ হিসেবে সবচেয়ে কষ্টের দিন হল সেইদিনগুলো যেদিন  আমি  জানি , ওই জায়গায় আমার ফুটবলীয় স্কিল জিতিয়ে  দিত। অথচ ছেলেরা না পারায় ম্যাক্সিমাম গালাগাল খাচ্ছি আমি। অথচ আমার কোনো দোষ  নেই। 

 তাঁর রাহুলেরও  কি মনে হচ্ছে না এই অস্ট্রেলিয়ান  টিম। যেখান থেকে স্টিভ স্মিথ বাদে কেউ পন্টিংয়ের টিমেও জায়গা পেত না তাদের বিরুদ্ধে ওভালের শেষদিনের মন্থর পিচে  কী ব্যাটিং করলে তোমরা এক একজন। আমি  সেরা ফর্মের ম্যাকগ্রাকে সামলেছি। ব্রেট লী-র বল নাক ফাটিয়ে  দেওয়ার পর হেলমেটে গড়িয়ে  পড়া রক্ত নিয়ে নির্বিকার ব্যাট করে গেছি। আর তোমরা বোলান্ডকে এমনভাবে খেললে  যেন আম্ব্রোজ  খেলছ। রোহিত,পূজারা,বিরাট এবং রাহানে –চার স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানের উইকেট সাধারণ শটে ছুড়ে দেওয়া। ভাবতে পারো এই আক্রমণের  বিরুদ্ধে আমি ,সচিন,বীরু ,গাঙ্গুলি, লক্ষ্মণ শেষ দিনের ওভালকে এমন প্রহসনের পরিণত  করে ছাড়ছি যে হাতে সাত উইকেট নিয়ে প্রথম সেশনটাও ব্যাট করতে পারছি না। একটা ইনিংস চলেছে ৬৯ ওভার। আরেকটা ৬৩ ওভার। অথচ আমি একাই  টেস্টক্রিকেটে সমসংখ্যক ওভার  ব্যাট করেছি। 

অনুমান  করার ব্যর্থ চেষ্টা করছি বিপর্যয় থেকে কী শিক্ষা নেবেন দ্রাবিড় ? মনে মনে নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে যে বিশ্বকাপ জিতলেও আর এক দিন নয়। হারলে তো নয়ই। চলে যাওয়া উচিত দ্রুত। মুলতানে সেই শচীনের ১৯৪ রানে ডিক্লেয়ারের সিদ্ধান্ত  না হয় টিমের কারণে। তার  কোনো আফসোস নেই। কিন্তু এ তো দশচক্রে ক্যাপ্টেন ভূত হয়ে যাচ্ছে। ফুটবলে কোচের গর্দান  যায় আগে। ক্যাপ্টেন কাতিল  হয় পরে। বা হয় না। এখানে ক্রিকেট হয়েও ফুটবল সভ্যতার মতো চলছে। নেটে যতসংখ্যক স্যাক দ্রাবিড় আওয়াজ  উঠেছে তার চেয়ে রোহিত সরানোর  দাবি কম।  

দশবছর ধরে টিম আইসিসি ইভেন্ট জিততে পারছেনা। তার মধ্যে  প্রথম এত বছরের জন্য দ্রাবিড় দায়ী  নন। বিবিধ কোচের আনাগোনা  ঘটেছে সেই পিরিয়ডে। কিন্তু দিন দিন যেহেতু ট্রফি না পাওয়ার হতাশা বাড়ছে হাতের কাছে থাকা লোকই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে যাচ্ছেন। স্বভাবতই কারো আর ধৈর্য থাকছে না। আর কতদিন ওয়েট করবে তারা ট্রফির জন্য ? এশিয়া কাপ হেরেছেন দ্রাবিড়। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতেননি। তারপর রোববারের ওভাল। ভারত যে দু’বছর ধারাবাহিক ভাল টেস্ট ক্রিকেটের জোরে ডব্লিউটিসি ফাইনাল পৌঁছেছিল। অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আর কোনো টিম সেটা পড়েনি এতশত শোনার সময় এখন কারো নেই। নেটের যুগ বলে কথা।  সবার কুইক সল্যুশন  চাই। কুইক রেসিপি চাই ,এক দুই তিন। সেটা অবসন্ন দ্রাবিড়ের কাছে কোথায় ?

স্টিভ স্মিথের মতো তাঁর টিমে  কেউ নেই যে বড় পরিস্থিতিতে  সবসময় রান করে দেবে। স্লিপে দুরন্ত  ম্যাচজেতানো ক্যাচ ধরবে। কোনো ম্যাচ জেতানো পেসার নেই। একটা ঋষভ পান্থ নেই। ভাগ্যও বিচিত্র।ঠিক টসের আগে কালো মেঘে  আকাশ ছেয়ে  গেলো।অশ্বিন বাদ  দিয়ে চার পেসার এবং টস জিতে ব্যাট করো–জোড়া ট্যাকটিক্যাল   ভুল তখনি যেন অদৃষ্ট বয়ে করে আনল। বাকি ম্যাচের নীল আকাশ  ওইসময় থাকলে এত বৃহৎ বিচ্যুতিই   হয় না। 

 নেপোলিয়নের মাপকাঠিতে তাই দ্রাবিড় যেন  পড়েন তিনি নিছক ভালো কোচের মানদন্ডে । ভাগ্যবান জেনারেলের মাপকাঠিতে নেই। তাই হয়তো ধোনি আর তাঁর জন্য নিয়তি এমন আলাদা বিচারব্যবস্থা  রেখেছে !

RELATED ARTICLES

Most Popular