নয়াদিল্লি: বঙ্গ বিধানসভায় কংগ্রেসের একমাত্র বায়রন বিশ্বাসকে (Byron Biswas) তৃণমূলে নেওয়ার ঘটনা জাতীয় রাজনীতিতেও চর্চার বিষয় হয়ে উঠল। কংগ্রেসের (Congress) সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ (Jairam Ramesh) টুইট করে বললেন, এই ঘটনা বিজেপির (BJP) হাত শক্ত করবে। সোমবার পশ্চিমবঙ্গে যা হল, তা বিরোধী ঐক্য জোরদার করার পক্ষে সহায়ক হবে না। জয়রাম টুইটে আরও লিখেছেন, এর আগে গোয়া, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং অন্য রাজ্যেও এই ধরনের শিকার ধরার ঘটনা ঘটেছে।
প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতা মঙ্গলবার যে টুইট করেছেন, তাকে সমর্থন করেছেন দলের বহু সাধারণ কর্মী, সমর্থক। তিনি লিখেছেন, মাত্র তিন মাস আগে ঐতিহাসিক জয় হয়েছিল বায়রনের। কিন্তু তৃণমূল তাঁকে লোভ দেখিয়ে দলে নিয়েছে। সাগরদিঘির জনাদেশের প্রতি বায়রন বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এই ঘটনা বিরোধী ঐক্যের পথে অন্তরায় হয়ে উঠবে।
এদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury) এদিন বহরমপুরে দাবি করেন, সাগরদিঘিতে (Sagardighi) কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের পর তৃণমূল আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। ভোটের আগে থেকেই নানাভাবে কংগ্রেস প্রার্থীকে চাপ দেওয়া হয়েছিল। তখন কংগ্রেস প্রার্থী সেই চাপ নিতে পেরেছিলেন। কিন্তু জেতার পর তিনি চাপ নিতে পারেননি। অধীরের দাবি, বায়রন ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। ব্যবসা সংক্রান্ত ভয় দেখিয়ে তৃণমূল তাঁকে দলে টেনে নিয়েছে।
অধীর বলেন, সাগরদিঘিতে মানুষ তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এক হয়ে ভোট দিয়েছেন। তাঁরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, মমতাকে হারানো যায়। বাম-কংগ্রেস এক হয়ে লড়াই করেছে। কংগ্রেস জেতার পর থেকেই তৃণমূল আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছিল। প্রতিদিন হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী-সমর্থক কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন। গতকালও নবগ্রামে হাজার খানেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূল আগেই ঠিক করেছিল, কংগ্রেস প্রার্থীকে ভাঙিয়ে কংগ্রেসকে দুর্বল করবে। কিন্তু বায়রন চলে গেলেও কংগ্রেস দুর্বল হয়নি। বায়রন দল ছাড়তে পারেন। কিন্তু যাঁরা তাঁকে জিতিয়েছেন, সেই সাধারণ কংগ্রেস কর্মীরা দল ছাড়েননি।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee | Bayron Biswas | বাইরনের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী
অধীর জানান, সাগরদিঘির উপনির্বাচনে তৃণমূলের ১৭ শতাংশ এবং বিজেপির ১০ শতাংশ ভোট কংগ্রেসের ঝুলিতে এসেছে। সেই কারণেই কংগ্রেস জিতেছে এবং বায়রন বিধায়ক হয়েছেন।
অন্যদিকে বায়রনের দলবদল নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বায়রনের সমালোচনা করেন বারাসতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। তিনি বলেন, বায়রন সাগরদিঘির মানুষের রায়কে অসম্মান করলেন। মানুষের ভোটে এক দলের হয়ে জিতে অন্য দলে যাওয়াটা ঠিক নয়।
মুখ খুলেছেন বীরভূম জেলার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউরি। তিনি বর্তমানে বোলপুর শহর তৃণমূল সভাপতি। নরেশ জেলবন্দি জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের খুব ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে যাঁরা বিশ্বাস করেন, সেই মানুষদের প্রতি বায়রন বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এই দলবদল অনৈতিক। বিধায়ক, সাংসদরা ব্যক্তিগত স্বার্থে দলবদল করছেন। এই বিধায়ক, সাংসদদের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাওয়া উচিত।
তৃণমূলের মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, বায়রন স্বেচ্ছায় দল ছেড়েছেন। সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যে যে নাচন কোদন শুরু হয়েছিল, তাতে এটা দরকার ছিল। জয়রাম রমেশ যা বলেছেন, তার ফলে বিজেপির হাতই শক্ত হবে।