প্রতীক্ষার অবসান। অবশেষে শনিবার শুরু হতে চলেছে সপ্তম টি টোয়েন্টি বিশ্ব কাপ। কথা ছিল ভারতের বিভিন্ন শহরে হবে এবারের বিশ্ব কাপ। কিন্তু কোভিড মহামারীর জন্য ভারত থেকে টি টোয়েন্টি বিশ্ব কাপ উড়ে গেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে, যেখানে কদিন আগেই শেষ হয়েছে আই পি এল-এর খেলা। শনিবার প্রথম ম্যাচে আবু ধাবিতে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। আর দ্বিতীয় ম্যাচে দুবাইতে মুখোমুখি হবে গত বারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং রানার্স ইংল্যান্ড। এবারের বিশ্ব কাপের মূল পর্বে খেলছে বারোটি দেশ। এক নম্বর গ্রুপে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, শ্রী লঙ্কা এবং বাংলাদেশ। আর দুই নম্বর গ্রুপে আছে ভারত, পাকিস্তান, নিউ জিল্যান্ড, আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়া। বিশ্ব কাপের ফাইনাল ১৪ নভেম্বর।
আবু ধাবিতে বিশ্ব কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া একবারও টি টোয়েন্টি বিশ্ব কাপ জেতা তো দূরের কথা, ফাইনালেও উঠতে পারেনি। একই কথা বলা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কেও। তাদের দেশেই প্রথম টি টোয়েন্টি বিশ্ব কাপের আসর বসেছিল ২০০৭ সালে। কিন্তু তখন থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তাদের টি টোয়েন্টি বিশ্ব কাপ থেকে প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূণ্য। এবার দুটো দলই এসেছে ভাল কিছু করার আশা নিয়ে। অস্ট্রেলিয়া দলটি অভিজ্ঞতার দিক থেকে অনেকের চেয়ে এগিয়ে। দুই ওপেনার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ এবং ডেভিড ওয়ার্নার এই ফর্মাটে প্রচুর রান করেছেন। ইদানীং অবশ্য ওয়ার্নার একেবারেই ফর্মে নেই। বাকি ব্যাটার যেমন স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মিচেল মার্শ কিংবা মার্কাস স্টোয়নিসরা যে কোনও দিন ম্যাচের ভাগ্য একার হাতেই গড়ে দিতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং যথেষ্ট ভাল। তিন পেসার প্যাট কামিংস, জশ হ্যাজেলউড এবং মিচেল স্টার্ক একার হাতে যে কোনও ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামাতে পারেন। সেই তুলনায় তাদের স্পিন বিভাগ তত শক্তিশালী নয়। লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা এবং বাঁ হাতী স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগর ভাল, কিন্তু ততটা ভাল নয়, যাতে বিপক্ষ ভয় পেতে পারে। বিশ্ব কাপের আগে দুটি ওয়ার্ম আপ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া কোনও রকমে নিউ জিল্যান্ডকে হারালেও ভারতের কাছে সাত উইকেটে হেরে গেছে। তাছাড়া এই বছরে তারা পাঁচটি টি টোয়েন্টি সিরিজের চারটিতেই হেরে গেছে। তবে সেই ম্যাচগুলিতে তারা পূর্ণ শক্তির দল নামায়নি। বিশেষ করে প্যাট কামিংস দীর্ঘ দিন ম্যাচের বাইরে। অস্ট্রেলিয়ার ভাল খেলা এবং জেতা অনেকটাই নির্ভর করছে তাঁর উপর। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়াকে চ্যাম্পিয়নের মতো লাগছে না।
একই কথা বলা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কেও। তাদের দুই জোরে বোলার কাগিসো রাবাডা এবং আনরিখ নর্তজে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন সেই আই পি এল-এর সময় থেকে। তাদের সঙ্গে লুঙ্গি এনজিডিকে ধরলে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস ব্যাটারি বেশ ভাল। স্পিনার কেশব মহারাজকে নেওয়ায় বোলিংয়ে ভারসাম্য আছে। ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞ ফাফ দুপ্লেসিকে বাদ দেওয়াটা বেশ বোকামির কাজ বলেই মনে করা যেতে পারে। অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা খুব একটা অভিজ্ঞ নন। তবে তবে তাঁর সঙ্গে উইকেটকিপার-ব্যাটার কুইন্টন ডি কক, বিয়র্ন ফরটুইন, হেইনরিখ ক্লাসেন, আইডেন মারক্রাম এবং অলরাউন্ডার ডেভিড মিলার নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা একেবারেই হীনবল নয়। তবে তাদেরকেও সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন বলে ধরা যাচ্ছে না। এখন দেখার অস্ট্রেলিয়াকে তারা হারাতে পারে কি না।
শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে দুবাইতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ফেভারিট ধরতে হবে ইংল্যান্ডকেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজই একমাত্র দল যারা দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে টি টোয়েন্টি বিশ্ব কাপে। ২০১২ সালে শ্রী লঙ্কায় এবং ২০১৬ সালে ভারতে। কিন্তু এই মুহূর্তে তাদেরকে ফেভারিট ধরা যাচ্ছে না। কারণ ইংল্যান্ড কাগজে কলমে অনেক শক্তিশালী। অলরাউন্ডার কায়রন পোলার্ডের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমে অভিজ্ঞদের সঙ্গে আছেন বেশ কয়েকজন নবীন খেলোয়াড় যাঁরা যে কোনও দিনে ম্যাচ জেতাবার ক্ষমতা রাখেন। যেমন শিমরন হেটমেয়ার, ইভিন লুইস, লেন্ডল সিমন্স অথবা সহঅধিনায়ক নিকোলাস পুরান। এঁদের সঙ্গে অভিজ্ঞ ক্রিস গেইল, ডোয়েন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল এবং কায়রন পোলার্ড মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইন আপ বেশ ভাল। কিন্তু তাদের বোলিংয়ে সেই ভারসাম্য নেই। রস্টন চেজ, ওসান টমাস, হেডেন ওয়ালশ কিংবা রবি রামপালরা যতই ম্যাচের পর ম্যাচ খেলুন না কেন তাদের বোলিংয়ে সেই ভেদশক্তি নেই যা ইংল্যান্ডের মতো দলকে বিপদে ফেলতে পারে।
ইংল্যান্ডের এক নম্বর অলরাউন্ডার বেন স্টোকস এবং জোরে বোলার জোফ্রা আর্চার শারীরিক কারণে এবারের টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। তবে যাঁরা আছেন তাঁরাও একেবারেই কমজোরি নন। টি টোয়েন্টিতে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটার দাউদ মালান ইংল্যান্ডের বড় ভরসা। তাঁর কাছ থেকে বড় রান প্রত্যাশা ইংল্যান্ডের। সঙ্গে ওপেনার জেসন রয়, অধিনায়ক অইন মর্গান, জস বাটলার, জনি বেয়ারস্টো, অলরাউন্ডার মইন আলিকে নিয়ে বড় রান করার ক্ষমতা রাখে ইংল্যান্ড। কিন্তু তাদের বোলিং খুব ভাল নয়। মার্ক উড, ক্রিস ওকস, ক্রিস জর্ডনের পেস বোলিংয়ের মধ্যে সেই ভেদশক্তি নেই যাকে বিপক্ষ ভয় পাবে। মইন আলির সঙ্গে অপর স্পিনার আদিল রশিদ তবু মন্দের ভাল। গত বারের রানার্স ইংল্যান্ড। দু বছর আগে তারা পঞ্চাশ ওভারের বিশ্ব কাপে চ্যাম্পিয়ন। শেষ পর্যন্ত অইন মর্গানের দল এবারের টি টোয়েন্টি বিশ্ব কাপটা হাতে তুলবে কি না বলা না গেলেও শনিবার তারা কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ফেভারিট।