Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeScrollমোহনবাগানরত্ন হচ্ছেন শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়

মোহনবাগানরত্ন হচ্ছেন শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়

Follow Us :

 

এ বছরের মোহনবাগানরত্ন হচ্ছেন শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়। মোহনবাগান ক্লাবের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা  গোলকিপারের প্রয়াণ ঘটেছে ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রূয়ারি। কিন্তু শতবর্ষ অতিক্রান্ত ক্লাবে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করে তাঁকেই ২০২১-র মোহনবাগানরত্ন সম্মান প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিল কর্মসমিতি। বুধবার কর্মসমিতির ভার্চুয়াল সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে বছরের সেরা ফুটবলার রয় কৃষ্ণ, সেরা ক্রিকেটার অভিমন্যু ঈশ্বরণ এবং সেরা অ্যাথলিটের পুরস্কার পাবেন বিদিশা কুন্ডূ। করোনা অতিমারির জন্য ২৯ জুলাই মোহনবাগান দিবসে কোনও বড় অনুষ্ঠান হবে না। সেদিন সকালে ক্লাব লনে পতাকা উত্তোলনের পর একটি ছোট মঞ্চে সংবর্ধনা জানো হবে বিদিশা এবং শিবাজীর পরিবারকে। অভিমন্যু এখন ইংল্যান্ডে। রয় কৃষ্ণ এখন দেশে।

মরণোত্তর মোহনবাগানরত্ন অবশ্য নতুন নয়। এর আগে ডাঃ তুলেরাম আও, শিবদাস ভাদুড়ি, উমাপতি কুমার, গোষ্ঠ পাল কিংবা ধীরেন দে-র মতো প্রাতঃস্মরণীয় মোহনবাগানিরা মোহনবাগানরত্নে ভূষিত হয়েছেন। তবে প্রয়াণের চার বছরের মধ্যে কাউকে মোহনবাগানরত্ন দেওয়া হয়নি।
১৯৭৭ সালে মোহনবাগানে এসেছিলেন শিবাজী। খেলেছেন ১৯৮৫ পর্যন্ত। কিন্তু টানা আট বছর মোহনবাগানে খেললেও তাঁকে মোহনবাগান অধিনায়ক করেনি। এই নিয়ে তাঁর মনে একটা দুঃখ ছিল, ছিল অভিমান। কিন্তু কোনও দিন ঘনিষ্ঠ মহল ছাড়া সে কথা তিনি কারও কাছে প্রকাশ করেননি। এত দিনে তাঁর আত্না শান্তি পাবে। খবরটি শুনে শিবাজীর ছেলে শান্তনু খুব খুশি। বললেন, ” বাবা কোথায় আছে জানি না। কিন্তু যেখানেই থাকুক এই সম্মান তাঁকে আনন্দ দেবে। আর আমাদের তো গর্বিত করবেই।”

১৯৭৭ সালে শিবাজী যখন মোহনবাগানে সই করেন তখন তিনি ছিলেন দলের দ্বিতীয় গোলকিপার। কিন্তু কলকাতা লিগে প্রথম গোলকিপার বিশ্বজিৎ দাস ইস্ট বেঙ্গল ম্যাচে দু গোল খাওয়ায় লিগের বাকি ম্যাচগুলোতে শিবাজিকে খেলাতে বাধ্য হন কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচ এবং ক্লাবকে ডোবাননি শিবাজি। সে বছরেই ২৪ সেপ্টেম্বর ইডেন গার্ডেন্সে ফুটবল সম্রাট পেলের কসমস টিমের বিরুদ্ধে শিবাজীর দুদ্ধর্ষ গোলকিপিং এখনও মোহনবাগান ক্লাবে ফুটবল ইতিহাসের রূপকথার অন্তর্গত। পেলের পা থেকে তিনটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছিলেন তিনি। সেই বছরেই মোহনবাগান ক্লাব তাদের প্রথম ও একমাত্র ত্রিমুকুট পেয়েছিল। শিবাজী ছিলেন সেই দলের গোলকিপার। ১৯৭৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের আরারাত এসেছিল আই এফ এ শিল্ড খেলতে। ফাইনালে মোহনবাগানের সঙ্গে ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। এবং যুগ্মজয়ী হয় মোহনবাগান। সেই ম্যাচেও শিবাজীর চমৎকার গোলকিপিংয়ের কথা মনে আছে দর্শকদের।

শিবাজীর আরও একটা পরিচয় ছিল টাই ব্রেকারে পেনাল্টি শট আটকানো। কত ম্যাচে যে তিনি পেনাল্টি কিংবা টাই ব্রেকারে মোহনবাগানকে উদ্ধার করেছেন তাঁর ইয়ত্তা নেই। ১৯৮০ সালের ফেডারেশন কাপ ফাইনালের মোহনবাগান-মহমেডান তৃতীয় সেমিফাইনাল হয়েছিল সকালবেলায়। ইডেন গার্ডেন্সের সেই ম্যাচে মোহনবাগান কোচ অরুণ ঘোষ শিবাজীকে নামিয়েছিলেন টাই ব্রেকারের একটু আগে। শিবাজী কিন্তু টাই ব্রেকারে মহমেডানের আকবর এবং অমলরাজের শট বাঁচিয়ে ফাইনালে তুলেছিলেন মোহনবাগানকে। কিন্তু ফাইনালে তাঁকে খেলাননি অরুণ ঘোষ। খেলেছিলেন প্রতাপ ঘোষ।

১৯৮১ সালে ভাঙা দল নিয়েও মোহনবাগান ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেমিফাইনালে ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে পেনাল্টি বাঁচিয়েছিলেন শিবাজী। শটটা নিয়েছিলেন মজিদ বাসকার। এ সবের জন্য শিবাজীকে বলা হত টাই ব্রেকার স্পেশালিস্ট। বাংলা বা ভারতের হয়ে শিবাজী দলে থাকলেও খুব একটা খেলবার সুযোগ পাননি। কারণ তখন ছিল ভাষ্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের যুগ। তবে শিবাজী সারা জীবন মানুষের মনে থেকে যাবেন মোহনবাগান ক্লাব এবং পেনাল্টি শট বাঁচাবার জন্য। এত দিনে যে তাঁর সাধের ক্লাব তাঁকে সম্মান দিচ্ছে তাতে শিবাজীর পরিবার খুবই খুশি। শান্তনু বলছিলেন, “বাবা বেঁচে থাকলে খুবই খুশি হত।” পুরস্কারের আর্থিক মূল্য এক লক্ষ টাকা।

RELATED ARTICLES

Most Popular