পূর্ব বর্ধমান: চোপড়ার মতো সালিশি সভার ঘটনা পূর্ব বর্ধমানেও। মারধরের পর মমতাকে চিঠি লিখলেন প্রৌঢ় দম্পতির। সালিশী সভায় হাজির না হওয়ায় মারধর ও খুনের হুমকি। প্রাণ বাঁচাতে ঘর বাড়ি ছাড়লেন বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার কুবাজপুর গ্রামের এলাকায়। জানা গিয়েছে, আদালতে বিচারাধীন থাকা মামলার বিচারের জন্যে ডাকা হয়েছিল ওই সালিশি সভা। সেই সালিশি সভায় হাজির না হওয়ার চরম মাশুল এখন গুনতে হচ্ছে বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলেকে। তাঁদের ব্যাপক মারধর করার পাশাপাশি খুনেরও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক তৃণমূল নেতার অনুগামীদের বিরুদ্ধে। আর এমন ভয়ঙ্কর হুমকি শোনার পরই প্রাণ বাঁচাতে ওই বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলে বাধ্য হয়েছেন নিজেদের ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালাতে।
ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় বৃদ্ধা দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। এমনকী তিনি তাঁদের উপর হওয়া হামলা ও আক্রমণের কথাও লিখিতভাবে রাজ্য পুলিশের ডিজি, জেলার পুলিশ সুপার ও জেলাশাসককেও জানিয়েছেন। প্রশাসন কী ন্যায় বিচার দেয়, সেই দিকেই এখন তাকিয়ে অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি।
প্রত্যন্ত গ্রাম কুবাজপুর। এই গ্রামের বাসিন্দা কৃষিজীবী পরিবারের বৃদ্ধ দম্পতি শেখ বোরহান আলি ও সাহানারা বিবি। তাঁদের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকেন তাঁদের ছেলে শেখবসির আলি। বৃদ্ধা সাহানারা বিবি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে তাঁর ছেলে বসির আলির সঙ্গে বর্ধমান থানা এলাকা নিবাসী এক তরুণীর বিয়ে হয়। কিন্তু ছেলের বিবাহিত জীবন সুখের হয় না। বৌমা তাঁর বাবার বাড়িতে চলে যান। পরে বৌমা বধূ নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা করেন। ওই মামলায় বর্ধমান সিজেএম আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করে। এরপর বৌমা খোরপোষের মামলা করে। সেই মামলা এখন বর্ধমান আদালতের বিচারাধীনে রয়েছে।
সাহানারা বিবির অভিযোগ, আদালতে বিচারাধীন ওই মামলা এখন করতে চাইছেন তাঁদের এলাকার তৃণমূলের নেতা। সেই কথা জানাতে, গত ১৩ জুন তাঁদের বাড়িতে আসেন চকদিঘি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আজাদ রহমানের সাগরেদরা। তাঁরা জানিয়ে যায়, আমাদের বৌমার করা মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আজাদ রহমান চকদিঘি অঞ্চল তৃণমূলের অফিসে বিচারসভা ডেকেছে। ১৪ জুন সেই বিচার সভায় আমাদের পরিবারের সবাইকে হাজির থাকতে হবে। আজাদ রহমানের অনুগামীরা ওইদিন এও জানিয়ে যায়, আমরা যদি বিচার সভায় হাজির না হই, তাহলে তাঁরা আমাদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেবে। এমনকী আমাদের প্রাণে মেরে দেওয়া হবে বলেও তাঁরা হুমকি দিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
এমন হুমকি পেয়েই ওই দিন সন্ধ্যায় বৃদ্ধা সাহানারা বিবির ছেলে শেখবসির আলি জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বৃদ্ধার কথা অনুযায়ী, জীবনহানীর আশঙ্কায় তাঁরা কেউ ১৪ জুন চকদিঘির তৃণমূল পার্টি অফিসে আজাদ রহমানের বিচার সভাতে যাননি। সে কারণে ওইদিন রাতেই লাঠি-সোটা ও ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয় আজাদের ১২ জন অনুগামী। তাঁরা বলতে থাকে, আমরা শাসকের শাসন করতে এসেছি। এই টুকু কথা বলেই তাঁর ছেলে বসির আলিকে ব্যাপক মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। তারা বসিরকে প্রাণে মেরে দিতে বসিরের গলায় পা তুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। এমনটা দেখে তিনি ও তাঁর স্বামী ছেলে বসিরকে বাঁচাতে গেলে তাঁদের উপরেও হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
বৃদ্ধা দম্পতির চিৎকার শুনে স্থানীয় কেউ জামালপুর থানায় ফোন করে। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তাঁদেরকে উদ্ধার করে জামালপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বসিরকে বর্ধমান হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। এই অবস্থায় প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে ঘর বাড়ি, ফসল ফলে থাকা চাষের জমি, গবাদি পশু সব ফেলে রেখে তাঁদের বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে বলে সাহানারা বিবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, প্রশাসন নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করলে তাঁদের আর বাড়ি ফেরা হবে না।
এদিকে বৃদ্ধার আনা অভিযোগ চকদিঘি অঞ্চল তৃনমূল কংগ্রেসের সভাপতি শেখ আজাদ রহমান অস্বীকার করে বলেন, বসির আলির পরিবাকে আমি চিনি। তাঁদের যে মামলার বিচার আদালতে চলছে, তার বিচারের জন্য আমি কোনও বিচারসভা বা সালিশি সভা ডাকিনি। তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বসিরের পরিবারের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটছে সেটা গ্রাম্যবিবাদ। মিথ্যা করে ওই ঘটনার সঙ্গে আমার নাম জড়ানো হয়েছে।