আউসগ্ৰাম: ঘড়িতে তখন রাত আড়াইটে। গুসকরার ইটেচাঁদার বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল স্বজন হারানো কান্নার শব্দ আরও দৃঢ় হয়েছে। সোমবার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে গুসকরার বিউটি বেগমের। এক নিমেষে বাড়িতে আনন্দের পরিবেশ পরিণত হয়েছে বিষাদের সুরে। সোমবার ছিল ইদুজ্জোহা, আনন্দের উৎসব। আর তাতেই সামিল হয়ে পরিবারের সঙ্গেই থাকতে চেয়ে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে তড়িঘড়ি ট্রেন ধরেছিলেন বিউটি।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিউটির নিজের বাড়ি গুসকরায় আসার কথা ছিল হলদিবাড়ি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে। তা সোমবার বাতিল থাকায় বিউটির স্বামী বলেছিলেন, মঙ্গলবার যাওয়ার কথা। কিন্তু উৎসবের দিনে নিজের পরিবারের সঙ্গে থাকতে চেয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায় উঠেছিলেন তিনি। স্বামীকে ফোন করে বলেছিলেন, ট্রেন ছেড়েছে, সিটও পেয়েছেন তিনি। তারপরই আসে দুর্ঘটনার খবর।
আরও পড়ুন: হাসপাতালে ভর্তি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কেন, জানুন বিস্তারিত
জলপাইগুড়ি থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরত্বে ঘটনাস্থলে বেলা ১২ টার কিছু সময় পর পৌঁছন বিউটির স্বামী ও তার সহকর্মী শেখ তারিক আনোয়ার। এরপরই তাঁরা সেখানে বিউটির খোঁজ না পেয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্য়ালে যান। ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে খুঁজে না পেয়ে, বিউটির ছবি দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারকে জানায়, বিউটির মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল থেকেই ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় তাঁর দেহ হাসপাতালের মর্গে আসে। পরে মর্গ থেকেই তাঁর স্বামী বিউটির দেহ শনাক্ত করেন।
শেখ আনোয়ার বলেন, সাড়া দিন ধরে দিদিকে খুঁজে বেড়িয়েছি, কিন্তু পায়নি। ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে গিয়ে বারবার করে দেখার পর অবশেষে হাসপাতালে মর্গে দিদির দেহ দেখতে পাই। রেলের তরফে থেকে সাহায্য হিসেবে কিছুই পাইনি। রাজ্য পুলিশ যদিও বা অল্প কিছু সাহায্য করেছে। আমরা ব্যক্তিগত গাড়িতে করেই দিদির দেহ নিয়ে আসতে চাইলে মাটি দেওয়া থানার পুলিশ একটি চালান দেয়। কিন্তু রেলের তরফে কোনও সাহায্য বা সদর্থক ব্যবহার পাইনি।
তাঁর আরও প্রশ্ন, রেলের এহেন ব্যবহারে তাঁরা খুশি হবেন কী করে। পাড়া-প্রতিবেশীদের গুনগুনানিতেই শোনা গেল একটা জীবনের দাম মাত্র কয়েক লক্ষ টাকায় মেলানো যায়। এভাবে আর কতদিন যাত্রী নিরাপত্তার প্রশ্ন শিখিয়ে তুলে, দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের অঙ্ক দিয়ে হিসাব মেলাবে ভারতীয় রেল।
দেখুন আরও অন্যান্য খবর: