ইন্ডিয়া জোট বলে কি কিছু আদৌ আর রইল? বিহারে আগেও জোট ছিল, এখনও রয়েছে, মহারাষ্ট্রে আগেও মহারাষ্ট্র আগাড়ি ছিল, এখনও আছে, তখনও তাতে বামেরা ছিল না, এখনও নেই। তামিলনাড়ুতে জোট ছিল, এখনও আছে। ঝাড়খণ্ডে জোট ছিল, জোট আছে, জোটে বামেরা নেই। তেলঙ্গানাতে কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে, মানে সেখানে বামেদের সঙ্গে সমঝোতা হল না। কেরালাতে বামেরা আগে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, জোটের প্রশ্নই নেই, রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন সিপিআই সম্পাদক ডি রাজার স্ত্রী শ্রমিক আন্দোলন, বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের নেত্রী অ্যানি রাজা। অসমে তিনটে আসনে লড়তে চেয়েছিল বামেরা, সবকটাতেই গণশক্তির ভাষায় ‘একতরফা ভাবেই’ প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস, তাই এবার বরপেটাতে সিপিএম তাদের পালটা প্রার্থী দিচ্ছে। হ্যাঁ, বলতে পারেন খানিক সমঝোতা হয়েছে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী দলের সঙ্গে, একদা বামেদের ভালো সংগঠন ছিল ওই উত্তরপ্রদেশে। ১৯৫৭, ১৯৬২তে রাসরা থেকে সরযূ পান্ডে, ৬২-তে ঘোসি থেকে জয় বাহাদুর, আফজল আনসারির মতো নেতা এমপি ছিলেন, এমএলএ ছিলেন, এখন তাঁরা ওই আসন ভাগাভাগিতে একটাও আসন পাননি, কিন্তু এসপি কংগ্রেস জোট হয়েছে। আর হয়েছে দিল্লি গুজরাতে, আপ কংগ্রেস জোট। কেন? কারণ আপ নিজেদেরকে আর বিরোধী হিসেবে বিচ্ছিন্ন করে রাখলে গোটা দলটাকেই জেলের ভেতরে দেখা যাবে, তাই। আর বাংলায়, মমতা ৪২টা আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছেন, কাজেই কংগ্রেস তৃণমূল জোট হচ্ছে না, এটা পরিষ্কার। কিন্তু তলায় তলায় কি কোনও বোঝাপড়া হয়েছে, অন্তত মালদা উত্তর মালদা দক্ষিণে কি দুধুভাতু ক্যান্ডিডেট দাঁড় করিয়ে কংগ্রেসকে ওয়াকওভার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? তাই কি আপাতত কংগ্রেস চুপ করে থম মেরে বসে আছে, থ্রম্বোসিস? যদিও শিস দিচ্ছেন না অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তা তলার খবর সত্যি না মিথ্যে জানা নেই, বোঝাও যাবে কিছুদিন পরে আপাতত মানুষের নজর বাম কংগ্রেস আব্বাস জোট কী হচ্ছে? সেটাই বিষয় আজকে, বাম + কংগ্রেস + আইএসএফ, জোট হচ্ছে?
আপাতত এ বাংলাতে সাইনবোর্ড বললেও কম বলা হবে সেই ফব, আরএসপি, সিপিআইয়ের প্রায়ান্ধকার দফতরে মূহ্যমান নেতারা পুরু ঘষা কাচের চশমার মধ্যে দিয়ে সিপিএম-এর মন বোঝার চেষ্টা করছেন। তাঁরাও জানেন না জোট কি হইবে? নাকি হইবে না? বামুন বাড়ির বিধবাদের মতোনই এনাদের অনেকেরই কংগ্রেস সম্পর্কে, এমনকী ওই শাব্বাশ আব্বাস সম্পর্কেও ছুঁৎমার্গ আছে বইকী, কিন্তু সে সব মুখে এখনও এনাদের কাছে শেষপর্যন্ত সিপিএম-এর আদেশ শিরোধার্য। তো সেই আলিমুদ্দিন হইতে নির্দেশ আসে নাই, বিমানদা কিছুই বলেন নাই, পাঁজি দেখিতেছেন এমন নয়, কিন্তু তাহলে নির্দেশ কেন আসে না?
আরও পড়ুন: Aajke | সায়ন্তিকা, হুমায়ুন কবীর আর অর্জুন সিং কী করতে চলেছেন?
আসল কথা হল কংগ্রেসের দিক থেকে কোনও সাড়াশব্দ নাই, ব্যাকডোরে এখনও নাকি কথাবার্তা চলিতেছে, এমন হতেও পারে যে গুজরাতেই ইউসুফ পাঠান, বহরমপুরে অধীররঞ্জন, দুজনেই হোম গ্রাউন্ডে। হতে পারে? জানা নেই। তবে ভাসছে, ভোটের আগে কত কী তো ভাসে। যাই হোক, যে কোনও কারণেই হোক কংগ্রেসের তরফে সাড়া নেই। সেলিম সমেত বামেদের প্রত্যেক নেতারা জানেন প্রাপ্তির ঝোলায় শূন্য থাকবে। কতটা খারাপ বোঝানোর জন্য বলি, ডায়মন্ডহারবার, যেখানে সিপিআই, সিপিএম ১৯৫২ থেকে ১৩ বার জিতেছে, সেই আসন আইএসএফকে ছেড়ে দিতে তারা রাজি। কিন্তু জোট চাই কারণ তবুও জোট বজায় থাকলে আগামী বিধানসভাতে আবার চণ্ডীতলায় সেলিম সাহেব, ফুরফুরা শরিফ থেকে আবার আসবেন আব্বাস সাহেব, জোরে বলেন, ঠিক কি না? তাই শেষ পর্যন্ত জোটের চেষ্টা আছে। কিন্তু সেখানেও কি কম সমস্যা, আইএসএফ লড়তে চায় কমসম করেও ১৩টা আসনে, জোটের ফর্মুলাতে ওনাদের ৩টের বেশি জুটতে পারেই না। ওদিকে কংগ্রেস চায় ১০ টা আসন, তার মধ্যে পুরুলিয়া, দার্জিলিং আছে, পুরুলিয়া তো শরিক দলের আসন, ফব জানিয়েছে, নহি দেঙ্গে পুরুলিয়া। বসিরহাটে সমস্যা আরও বড়, বসিরহাট এমনিতে তো সিপিআই-এর আসন, তাদের দাবি তাঁরা জানিয়েছেন, ওদিকে নওয়াজ সিদ্দিকিও ওই বসিরহাট আসন চান, আবার নিরাপদ সর্দারকে সামনে রেখে ওই বসিরহাটে ঘুরে দাঁড়াতে চায় সিপিএম। কাজেই জোট হবে কি হবে না এই ধাঁধার উত্তর এখনও মেলেনি। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, বিজেপি ১৯ জনের নাম ঘোষণা করে দিয়েছে, তৃণমূল ৪২ জনেরই, এদিকে বাম কংগ্রেস আইএসএফ জোট হবে কি হবে না, সেটাও এখনও পরিষ্কার নয়, একদা রাজ্যের শাসকদল নিজেদের লড়াই নিজেরা লড়তেও দ্বিধাগ্রস্ত, বামেদের এই অবস্থা কেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
তবে একটা কিছু তো হবেই, এবং তা জানাও যাবে, আবার বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই বলে এক ন্যাকামো আছে, তাও দেখা যেতে পারে। কংগ্রেস বসে ভাবছে নিশ্চিত তিনটে নাকি অনিশ্চিত একটা? কোনটা তাদের আগামী লড়াইয়ে কাজে দেবে? এবং ভোটের পরে সংসদে গিয়েও আর যাই হোক মমতার থেকে দূরত্ব রাখার পক্ষপাতী তাঁরা নন। সব মিলিয়ে তাঁদের দ্বিধা কাটছে না, শ্যাম না কূলের জটে আটকে আছেন। বামেরা কংগ্রেসকে পেলে কিছু আসনে অন্তত জামানত বাঁচানোর চেষ্টা তো করতে পারেন, সেটাও গেলে এই মুহূর্তে ৪২টা আসনে লড়ার মতো লোকবল তাঁদের নেই। আইএসএফ-এর এজেন্ডা আলাদা, তাঁরা নির্দেশ অনুযায়ী ঘুঁটি দেবেন, দেখা যাক। আজই বামেদের কোনও ঘোষণা হবে? না হবে না, আজ ১৪ মার্চ, বামেরা এদিনে ঘোষণা করার রিস্ক নেবেন না।