র্যাম্পে ৪১ জন প্রার্থীকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আসন আর প্রার্থীর নাম বলছিলেন, স্টেজে কি কেবল প্রার্থীরা বসেছিলেন? না, অনেক নেতাই ছিলেন এবং তাঁদের মুখচোখ সাফ বলে দিচ্ছিল তাঁরা উৎকণ্ঠায় আছেন, কে পাচ্ছে আসন, কার টিকিট কাটা গেল এই খবর হাতেগোনা দু’ একজনের কাছেই ছিল। হ্যাঁ, মঞ্চে এমনি এমনি তো ইউসুফ পাঠান এসে বসেননি, নিশ্চয়ই তিনি প্রার্থী হিসেবেই এসেছিলেন, বা একই কথা কীর্তি আজাদের সম্বন্ধেও বলা যায়। কিন্তু বাকি আসনে এক দেব অধিকারী ছাড়া সাংসদদের কয়েকজনই জানতেন যে তিনি টিকিট পাচ্ছেন। হ্যাঁ, মঞ্চে ছিলেন ঋতব্রত, যথেষ্ট সংযম নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন, চিচিং ফাঁক হল না, মুখ দেখে বোঝা গেল? সৌগত রায়কে সামান্য হলেও কি বিচলিত দেখাচ্ছিল? নাম ঘোষণা হতেই অবশ্য মুখ দেখে মনে হচ্ছিল অ্যাভাগেড্রোজ থিওরি বা ই ইজ ইকুয়াল টু এম সি স্কোয়ার নিয়েই কিছু ভাবছেন, এক নিরাসক্ত মানুষের অভিনয়। বাঁকুড়ায় নাম নেই, সায়ন্তিকা উঠেই পড়লেন আসন থেকে, মোবাইল কানে কথা বলতে বলতে নেমেই গেলেন। হুমায়ুন কবীরকে মঞ্চেই দেখা যায়নি, কিন্তু তিনি ছিলেন কোথাও হয়তো, ইউসুফ পাঠানের নাম শুনে উপস্থিত সমর্থকরা হই হই করে উঠল, আর ব্যারাকপুরে পার্থ ভৌমিকের নাম শুনে অর্জুন সিংয়ের চোয়াল শক্ত হল, যদিও একটু পরেই তিনি মিডিয়াকে জানালেন তিনি দলের সৈনিক। ঘরে ফিরে যা বলেছেন, তা নিয়ে পরে কথা বলছি। কুণাল ঘোষ এতকিছু দেখেছেন যে তমলুকে নাম আছে কি নেই সে ঘোষণাতে তাঁর মুখের একটা রেখাও অন্য কিছু জানান দেবে না জানি, কিন্তু মনের ভেতরের রেখারা? তাঁরা এঁকেবেকেঁ চলা শুরু করেছিল? বহুদূরে আপাতত দলের বৃত্তের বাইরে বসে তাপস রায় দেখলেন আবার সেই সুদীপ বন্দ্যোই থাকবেন তাঁর মুখোমুখি। মিমি-নুসরত বহু আগেই বুঝেছিলেন। তাঁরা রাজনৈতিক আঙিনাতে এতটাই দুধুভাতু যে তাঁরা এই আলোচনার বিষয় হতেই পারেন না। ডাকও পাননি, আসেনওনি। পাঁচ বছরের এমপি ছিলেন, পেনশন পাবেন, আরও অনেক কিছু, ওটাই সান্ত্বনা পুরস্কার, ওঁদেরকে দলে নিয়ে টিকিট দেবে তত বোকা বিজেপি নয়, তারা ঘোড়া দেখে বাজি ফেলে। কিন্তু যাই হোক ৪২টা আসনের প্রার্থী ঘোষণার পরে এখনও পর্যন্ত মাত্র তিনটে হালকা বিদ্রোহের গন্ধ পাওয়া গেছে, সেটাই বিষয় আজকে, সায়ন্তিকা, হুমায়ুন কবীর আর অর্জুন সিং কী করতে চলেছেন?
৪২টা আসনে অ্যাসপির্যান্ট কতজন ছিলেন? মানে কতজনের এই টিকিট পাওয়ার ইচ্ছে ছিল? অনেকের, আমি সাধারণভাবে চোখ বুলিয়েই বুঝেছি সেই সংখ্যা কম করে আড়াইশো তো হবেই। এবং একটা কথা মাথায় রাখুন, এমপি, সাংসদ পদের টিকিট পেতে ইচ্ছুক যাঁরা তাঁরা তো কেউ নকড়া ছকড়া নেতা নন, কাজেই তাদের আছে বহু মানুষের সমর্থন, স্থানীয় সংগঠনের ওপর কন্ট্রোল, আছে মানি এবং মাসল পাওয়ার, আছে যোগাযোগ, কানেকশন যাকে বলে।
আরও পড়ুন: Aajke | সিএএ লাগু হল, কাদের লাভ?
কিন্তু বিদ্রোহের হালকা থেকে গাঢ় সুর শোনা গেল মাত্র তিনজনের কাছ থেকে। কাজেই সেটা খুব বড় কিছু নয় এবং ৪২টা আসনেই দেওয়াল লিখন, মিছিল প্রচার শুরু হয়ে গেছে, সেখানে খুব বিরাট অন্য সুর শোনা যায়নি। তো প্রথমে আসুন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের কথায়, আমরা সাংবাদিকরা এই নামটা এলেই একটু যাচাই করে নিই, তার দুটো কারণ আছে, তৃণমূল দলেই আরেকজন হুমায়ুন কবীর আছেন। আর দু’ নম্বর কারণ হল ওই মুর্শিদাবাদের হুমায়ুন কবীর এখন কোন দলে আছেন? আসলে এতবার দল বদলেছেন যে রুদ্রনীলও লজ্জা পাবে। ওনার বিদ্রোহকে ওনার দলই পাত্তা দেয় না, গতকালই অপূর্ব সরকার, ডেভিড বলেছেন, উনি সিনিয়র, নিশ্চয়ই দুঃখ পেয়েছেন, তাই বলে ফেলেছেন, কিন্তু মনে হয় না উনি অন্যরকম কিছু করবেন। পুরো খিল্লি। হুমায়ুন নিজেও জানেন ওনাকে বিজেপিও নেবে না, বিজেপি ইতিমধ্যেই নির্মল সাহাকে ওই আসনে দাঁড় করিয়েছে। আর নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে উনি ওনার আগামী রাজনৈতিক ভবিষতের উপর কুড়ুল চালাবেন তত বোকাও উনি নন। যদিও বা করেন তাহলে ওই ভরতপুরেই উনি কত ভোট পাবেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বাঁকুড়াতে বিধানসভার আসনে মাত্র দেড় হাজার ভোটে হেরেছিলেন, এবং তারপর থেকে ওখানে রেগুলার গেছেন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন, তাই বলে সাংসদ আসন? পেলে সেটা নিশ্চিত বিজেপির কাছে ওয়াকওভার হত, বিশেষ করে সেই আসন, যেখানে বিজেপি প্রার্থী মন্ত্রী সুভাষ সরকারকে দলের মধ্যেই চরম বিরোধিতার মুখে পড়তে হচ্ছে, সেই সুযোগ তৃণমূল ছাড়বে কেন? তাই এক শক্তপোক্ত রাজনৈতিক নেতাকেই দাঁড় করিয়েছে। সে যাই হোক টিকিট না পেয়ে সায়ন্তিকা এক ধরনের বিদ্রোহ তো করেইছিলেন কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি বুঝেছেন, ওধার থেকে ডাক তিনি পাবেন না, অতএব পূনর্মূষিক ভব, ঘরে ফিরেছেন। কিন্তু বুঝলেন না, কেরিয়ারে গাঁট পড়ে গেল। ব্যারাকপুরের অর্জুন সিং যিনি গতবার টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে গিয়ে জিতে প্রমাণ করেছিলেন তিনি মাটি চেনেন। কিন্তু তারপরে ব্যবসা আর মামলা সামলাতে তৃণমূলে আসতে বাধ্য হলেন, সেদিনই তাঁর পায়ের তলা থেকে জমি সরে গেছে এটা তিনি বোঝেননি, আজ বুঝেছেন। কিন্তু ইতিহাস প্রথমবারে রচিত হয়, দ্বিতীয়বারে তা আবার হলে প্রহসন হয়ে দাঁড়ায়। অর্জুন সিং বিদ্রোহ করতে পারবেন? করলেও আবার নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন? মনে হয় না। মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন, কাজেই ওনার বিদ্রোহ শেষমেশ কোন আকার ধারণ করে সেটা দেখার ইচ্ছে সবার থাকবে, কিন্তু পরিণতি সব্বার জানা। আমরা আমাদের দর্শকদের কাছে একটা প্রশ্ন রেখেছিলাম, ৪২টা আসনের প্রার্থী ঘোষণার পরে একমাত্র বিদ্রোহ যা নাকি আকার নিতে পারে, তা এসেছে ব্যারাকপুরের অর্জুন সিংয়ের কাছ থেকে, অর্জুন সিং তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে আবার ম্যাজিক দেখাতে পারবেন? নাকি শেষমেশ রণে ভঙ্গ দেবেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
এমনিতে বচ্ছর বচ্ছর ভোট আর ভোট মানুষকে ক্লান্ত করেছে, দলবদলের কদর্য চেহারা এই সংসদীয় গণতন্ত্রের উপর থেকে মানুষের আস্থা বা ভরসা দুইই কমিয়েছে। সেরকম এক অবস্থায় টিকিট পেলাম না আর ওমনি অন্য দলে চলে গেলাম, এই ইমেজ সম্ভবত অন্য প্রভাব ফেলবে। সে যে দল থেকেই আসুক, পাঁচ বছর এক দল করে নির্বাচনের আগে দলবদল করে নিজের সাংসদ বা বিধায়ক আসন ধরে রাখার চেষ্টা আর যাই হোক সুস্থ রাজনীতি নয়।