ইন্ডিয়া বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খানিক উচ্চগ্রামেই সুর বেঁধে দিয়েছেন। ৩১ ডিসেম্বরের আগেই আসন সমঝোতা চাই, তিনি কি দেশের কথা বলেছেন? একবারও নয়, ওনার পাখির চোখ আপাতত বাংলা। এবং এই বোঝাপড়ায় যদি অসম আর মেঘালয়ে দু’ একটা আসনে অন্তত লড়া যায়, তেমন এক ব্যবস্থার দিকেই আছে। কিন্তু সমস্যা হল, ১৮০ দিন হতে চলল এই ইন্ডিয়া জোট কাহানির এখনও ন যযৌ ন তস্থৌ। তো সে হেন পরিস্থিতিতে দিন পনেরোর মধ্যে আসন বোঝাপড়া হয়ে যাবে? তার উপরে আবার দিল্লির ঠান্ডা আর কংগ্রেস তো বিজেপির মতো টোয়েন্টি ফোর ইন্টু সেভেন ইলেকশন মোডে থাকে না। আপাতত ক্রিসমাস, তারপরে নিউ ইয়ার, তা শোনা যাচ্ছে ওনারা ১৫ জানুয়ারির মধ্যেই নাকি এই বোঝাপড়া হয়ে যাবে এমন একটা কথা তৃণমূল নেত্রীকে জানিয়েছেন। জানানোর পরেই বুলাও পেয়াদাদের। বাংলা থেকে প্রদীপ ভট্টাচার্য গেলেন না, গেলেন না মান্নান সাহেব, যাননি মিঠুদা মানে দেবপ্রসাদ মিত্র। গেলেন অধীর চৌধুরী, ওনার ভয় আছে জোট হলেও তৃণমূল নেতারা সিঁড়িতে তুলে মই কেড়ে নিতে পারে, কাজেই উনি জোটের প্রবল বিরোধী। দীপা দাসমুন্সি জানেন রায়গঞ্জ আসন তৃণমূল ছেড়ে দেবে, এটা হওয়ার নয়, কাজেই তিনিও জোট বিরোধী। কিন্তু কংগ্রেসের তলার সারির প্রায় সবাই, এক ওই চুল টুল কেটে মুণ্ডিতমস্তক কচি নেতাটি ছাড়া বেশিরভাগই জোটপন্থী। সংসদে ঢোকার অওকাত বা সামর্থ্য বা ইচ্ছে তাদের নেই কিন্তু এই বেলা জোট হলে সেই বেলাতে বিধানসভার টিকিট জুটলেও জুটতে পারে কাজেই তারা জোটপন্থী। কে যেন বলেছেন, রাহুল এই বাংলার কংগ্রেস নেতাদের জানিয়েছেন তিনি এখনও কোনও কথা দেননি। কিন্তু একটা কথা ভাবুন তো, সারা ভারতের প্রেক্ষিতে কংগ্রেসের শরিক দলগুলোর সঙ্গে জোট না করে অন্য কিছু ভাবাটা কি এই মুহূর্তে সম্ভব? সব্বাই জানেন সম্ভব নয়। তাই কিছু একটা বোঝাপড়া তো হবে, তেমন ইঙ্গিত অন্য মহল থেকে মিলেছে, প্লাস সোনিয়া গান্ধী নাকি মমতাকে নিজের ধারেই রাখতে চান, সেটা নাকি বাকি নেতারা জানেন। তো সে যাই হোক কোনও না কোনও জোট তো হবেই, সেই সব জোট হলে বা না হলে ভোটের শেষে ফলাফল কেমন হবে সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কোন কোন জোট ক’টা আসন পেতে পারে?
যদি নির্বাচনের আগে জোট হয় তাহলে কী ধরনের জোট হতে পারে? ধরুন যা ছিল তেমনটাই রইল, মানে বাম-কংগ্রেস জোট, ওদিকে বিজেপি, অন্যদিকে নওসাদ সিদ্দিকি, আরেকদিকে সিপিআইএমএল-এর লিবারেশন, মানে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বা ওইরকম কিছু সংগঠন লড়ল। এরকম যদি হয় তাহলে ধরেই নিন ইন্ডিয়া জোট বলে কিচ্ছু থাকবে না, অন্তত বাংলাতে থাকবে না। বিরোধীদের কোনও যৌথ প্রচার থাকবে না কিন্তু সমাজবাদী দল, আপ মানে কেজরিওয়াল বা শিবসেনার সমর্থন দিদির দিকে থাকবে। বাম-কংগ্রেসকে এই রাজ্যে এসে সমর্থন করবে কেউ, এমনটার সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: Aajke | কল্যাণের ভেংচি কাটা আর ধনখড় কা গুসসা
এরকম এক লড়াই হলে তৃণমূল ৩১-৩২, বিজেপি ১০-১১, কংগ্রেস মেরেকেটে ১টা আসন পাবে। কিন্তু যদি তৃণমূল, কংগ্রেস, ইন্ডিয়ার জোট এ রাজ্যে হয়, লিবারেশন বা এরকম ছোট ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর সমর্থন যদি থাকে, ফরোয়ার্ড ব্লকের একটা অংশ যদি মমতাকে সমর্থন করে তাহলে ছবিটা বদলাবে। তৃণমূল ৩৫-৩৬টা আসন পাবে, কংগ্রেস ২-৩টে আসন পাবে, বিজেপি ২-৩টে আসন পাবে। সিপিএম দুটো ক্ষেত্রেই শূন্যতে থেকে যাবে, কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে তবুও দু’ একটা আসনে জামানত বাঁচাতে পারলেও, সে জোট না হলে প্রতিটা আসনে জামানত যাবে। তার মানে ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধি হিসেবে কংগ্রেস ও তৃণমূল প্রার্থীরা লড়লে বিজেপির কপালে দুঃখ বাড়বে। আমরা আমাদের দর্শকদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, এই মুহূর্তে বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোট না কি বাম-কংগ্রেস জোট কোনটা হতে চলেছে? এই দুইয়ের মধ্যে কোন জোট হলে বিজেপির সবথেকে বেশি ক্ষতি হবে? শুনুন মানুষজন কী উত্তর দিয়েছেন?
বাংলাতে জোটের চেহারা আর তার প্রভাব কেবল বাংলার ক’টা আসন ভাগাভাগির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। কংগ্রেস তৃণমূল জোট হলে আগামী দিনে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত আটকে যাবে, বিজেপিতে যাওয়া নিচু সারির কর্মীরা আবার তৃণমূলে ফিরবে। কংগ্রেসের পকেট সংগঠন আবার চাগাড় দেবে, কিন্তু সিপিএম র্যাঙ্ক অ্যান্ড ফাইলে হতাশা নেমে আসবে। যারা কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রবক্তা ছিলেন তাঁরা পদে পদে বিব্রত হবেন এবং দলের মধ্যে ‘সহি কমিউনিস্ট’ হয়ে ওঠার প্রবণতা বাড়বে। যদি কং-বাম জোট হয় তাহলে বিজেপি আবার খানিক অক্সিজেন পাবে, কংগ্রেসের ফলাফল খারাপ হবে, সারা দেশে জোট হওয়ার অবস্থাই থাকবে না আর সেটা কংগ্রেসের পক্ষে আরও ক্ষতিকর হবে। আবার এটাও সত্যি যে জোট হওয়ারই নয়, সেরকমটা যদি হয়? মানে তৃণমূল-বাম-কং জোট হলে কিন্তু লাভ হবে বিজেপির, সমস্ত সরকার বিরোধী ভোট গিয়ে জমা হবে বিজেপির দিকে। সেক্ষেত্রেও তৃণমূলের আসন কমবে, তারা ২৪-২৫ টার মধ্যে থাকবে, কংগ্রেস দুটো আর বিজেপি ১৫-১৬টা আসন পাবে। এই অঙ্ক শুধু আমরাই জানি তাও তো নয়, খুব সাধারণ জ্ঞান নিয়েও এরকম একটা হিসেবে আসাই যায়। আসনের হিসেবে না মেলানো গেলেও এটা তো বলাই যায় যে তৃণমূল আর কংগ্রেস জোট হলেই সেই জোটের ভোট ৪৬-৪৮ শতাংশে চলে যাবে, যা বিজেপির ভোটকে কোনওভাবেই ২৬-২৭ শতাংশের বেশি হতে দেবে না। অতএব আর মাসখানেকের মধ্যে জোটের জট কাটলেই সারা দেশের না হোক বাংলার রাজনৈতিক চেহারার আন্দাজ আমরা পেয়ে যাব।