নয়াদিল্লি: সময় অতিক্রান্ত। ইজরায়েলি (Israel) সেনাবাহিনী এখন সবুজ সংকেতের অপেক্ষায়। উত্তর গাজা (Gaza) থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য যে ৩ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল, সেই সময় পার হয়ে গিয়েছে। এখন সরকারের হামলার নির্দেশের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন সেনা অফিসাররা। যদিও সময় পার হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী জরুরি মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন। নয়া মন্ত্রিসভার প্রথম এই বৈঠকে বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু (Benzamin Netanyahu) বলেন, গাজায় হামাসকে (Hamas) ধ্বংস করে দেওয়া হবে। দেশের এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলার সময়। আমরা সেটা করে দেখিয়েছি। গোটা দেশ আজ ঐক্যবদ্ধ। ঘরেবাইরে বার্তা পাঠিয়ে দিন, গাজা থেকে হামাসকে নির্মূল করবে ইজরায়েল।
তেল আভিভের সেনা সদর দফতরে এই বৈঠক বসে। বৈঠকের শুরুতে হামাস হানায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে নীরবতা পালন করে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। এদিকে, সেনা মুখপাত্র জানিয়েছেন শুধু হামাস নয়, পশ্চিম এশিয়ার যে কোনও জায়গায় আমরা হামলা চালাতে পারি। ইজরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় গাজা ছাড়াও অন্যদিকেও বোমা বর্ষণ করতে পারে বাহিনী। এদিকে, গাজা সীমান্ত কয়েকশো ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক মোতায়েন হয়ে গিয়েছে। ফলে, সরকার সবুজ পতাকা নাড়লে গাজায় ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে ইজরায়েলি বাহিনী।
গাজাবাসীকে রবিবার মাত্র ৩ ঘণ্টা সময় দিয়েছিল ইজরায়েলি বাহিনী। তার মধ্যে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে সরে যাওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এর জন্য সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সময় (ভারতীয় সময় রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ) বেঁধে দিয়েছিল ইজরায়েল। এই সময়ের মধ্যে গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী পথে বা করিডরে কোনও আক্রমণ করা হবে না। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী জড়ো হয়েছে গাজা সীমান্তে। রুদ্ধশ্বাস মুহূর্তের অপেক্ষা। শুধু গাজা সীমান্ত নয়, দক্ষিণ লেবাননের দিকেও নিশানা তাক করছে। ইজরায়েলের দাবি, হামাসের এলিট বাহিনী নুকবার শীর্ষ এক কমান্ডারকে খতম করেছে তারা। হামাসের বিমানবাহিনীর শীর্ষ নেতার পর এই কমান্ডারের মৃত্যু হামাসের পক্ষে বড় ধাক্কা বলে মনে করে ইজরায়েল। ইজরায়েলে ঢুকে গত শনিবার যে হামলা হয়েছিল, তাতে এই কমান্ডার নেতৃত্ব দিয়েছিল বলে চর সংস্থার খবর।
আরও পড়ুন: মহুয়ার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ
যুদ্ধ পরিস্থিতির ৮ দিন অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর অবশেষে এদিনই মুখ খুলেছে চীন। চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই রবিবার বলেছেন, গাজায় ইজরায়েলি সেনা পদক্ষেপ আত্ম প্রতিরক্ষার সীমানা অতিক্রম করে গিয়েছে। গাজার মানুষের উপর সম্মিলত আক্রমণ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে বেজিং কর্তৃপক্ষ। চীনা বিদেশমন্ত্রী এই মন্তব্য করার আগের দিনই মার্কন বিদেশ সচিব, যিনি এই মুহূর্তে ওই এলাকায় রয়েছেন, সেই অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষ যেভাবে পুরোদস্তর যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছে, তা ঠেকাতে চীনকে পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন ব্লিঙ্কেন।
চীনা বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌদির বিদেশমন্ত্রী প্রিন্স ফয়জল বিন ফারহাদের সঙ্গে ফোনে একথা জানান চীনা বিদেশমন্ত্রী। আমেরিকার নাম না করে সৌদিকে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পরিস্থিতি গরম করতে সব পক্ষকে এতে যোগ না দেওয়াই উচিত। দ্রুত আলোচনার টেবিলে বসার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এই সপ্তাহেই চীন ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় দূত পাঠাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। আমেরিকার মতো চীনও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ঠেকাতে তৎপর।
যদিও এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবরে আমেরিকার নৌবহরের অন্যতম শক্তি ইউএসএস আইজেনহাওয়ার ভূমধ্যসাগরের দিকে রওনা দিয়েছে। পরমাণু শক্তিচালিত বিমানবাহী এই জাহাজ রওনা দেওয়ায় হামাস বাহিনীর কাছে তা বিশেষ সংকেতবাহী। এদিকে, গাজায় ইজরায়েলের সম্ভাব্য সম্মিলিত বাহিনীর আক্রমণের আতঙ্কে হাজারে হাজারে মানুষ ঘর ছেড়ে রওনা দিয়েছে দক্ষিণ প্রান্তে। যে কোনও মুহূর্তে গাজায় ঢুকে পড়তে পারে ইজরায়েলি সেনা। রবিবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু সীমান্তে সেনাবাহিনীর রণকৌশল পরিদর্শন করেন। এবং বলেন, আরও আসছে। গাজা দখল করেতে আনুমানিক ১০ হাজার সেনা সীমান্তে পাঠিয়েছে ইজরায়েল।
আরও খবর দেখুন